Skip to main content

রোযা মানুষের অন্তরে প্রশান্তি দান করে



রমযান মাসকে পাওয়ার লক্ষ্যে প্রিয়তম নবী (সা) ও তাঁর সাহাবীরা (রা) রজব মাস থেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন এবং রমযান পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে কাতরভাবে প্রার্থনা করতেন। মুমিন বান্দারা আল্লাহপাকের অজস্র রহমতে সিক্ত হয়ে উঠে এ মাসে। প্রকৃতির রাজ্যেও বিরাজ করে এক শীতলতা। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে রোযা কিন্তু আবহাওয়ার সেই রুক্ষতা নেই। শুধু এ বছরই না, অতীতেও তাই দেখা গেছে। ফলে অত্যন্ত প্রশান্তচিত্তে মুমিন গুনাহমুক্ত এক নতুন জীবন লাভের আশায় রোযা পালনসহ ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত হয়ে পড়ে। বান্দাহ যখন আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে ও নিজের গুনাহ ক্ষমা করে নেয়ার সুযোগ পায় সে তখন অন্তরে এক প্রশান্তি অনুভব করে। এ প্রশান্তি আল্লাহর হুকুম পালন, নিজের গুনাহ ঝেড়ে ফেলা ও নেকির পাল্লাকে ভারি করার আল্লাহর প্রতিশ্রুতি লাভের ফল। আল্লাহপাক তাঁর নবীর মাধ্যমে কতভাবেই না রোযাদারকে সুসংবাদ দান করেছেন।
রমযানের মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন। রোযা রাখার মধ্য দিয়ে রোযাদার সব ধরনের পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে। কোনো নিন্দাবাদ নেই, ঝগড়াঝাটি নেই, মনোমালিন্য নেই এবং এর ফলে দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন এবং সামাজিক জীবনে নেমে আসে প্রশান্তি। আল্লাহর ভয় তাকে আরো বেশি দায়িত্বশীল করে, সে পরিবার ও সমাজের প্রতি হয় দয়ার্দ। সে সবার সাথে সদাচরণের মাধ্যমে নেকির পাল্লাকে ভারি করে তুলে। তার কথা, আচরণ ও কাজেকর্মে যাতে কেউ সামান্যও কষ্ট না পায় সেজন্য থাকে সদা সতর্ক। সে নিজের চেয়ে অপরকে অগ্রাধিকার দানে থাকে সর্বদা সচেষ্ট। সে প্রতিশোধপরায়ণ নয়, অপরকে ক্ষমা করেই হয় তৃপ্ত। কার্পণ্য তাকে স্পর্শ করে না, সে হয় উদার ও প্রশস্ত দিলের অধিকারী। মহান আল্লাহপাক তাঁর পরম প্রিয় একজন মুত্তাকী বান্দার চরিত্র এমনই অংকন করেছেন।
রোযা রাখার মধ্য দিয়ে রোযাদার খুব সহজেই ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করে। ফলে সে গরীব ও অসহায়দের প্রতি হয় দয়ার্দ। আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তার প্রিয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে। তার অন্তরে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা)-এর উক্তিসমূহ সবসময় প্রেরণা হয়ে কাজ করে। রোযাদারদের ইফতার করাও এক টুকরা খেজুর বা এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও। ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াও এবং এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাও। ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যে নিজে পেটপুরে খায় আর তার প্রতিবেশি অভুক্ত থাকে। আল্লাহর গরীব ও অসহায় বান্দাদের প্রয়োজনে নিজেকে লাগাতে পারলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই ব্যক্তির অন্তরে প্রশান্তি ঢেলে দেয়া হয়। রোযা মানুষকে অন্যান্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে।
রোযা পালনকালিন মানবিক দুর্বলতার কারণে অনেক ভুল-ত্রুটি ঘটে যায় এবং এটিই স্বাভাবিক। সেই রোযা বিশুদ্ধকরণের উপায়টি রাখা হয়েছে গরীবদের মাঝে খাদ্যশস্য বিতরণের মাধ্যমে। ঈদের দিন মহাখুশি ও আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য ঈদের নামাযের পূর্বে ফিতরা প্রদানের নির্দেশ রয়েছে। আবার চিররুগ্ন ও অসুস্থ (যাদের সুস্থ হওয়ার আদৌ সম্ভাবনা নেই) ব্যক্তিদের রোযা না রাখার শর্ত রাখা হয়েছে একজন মিসকিনকে খাওয়ার খাওয়ানোর মাধ্যমে। আসল বিষয় হলো, আল্লাহপাক বিশ্বজাহানের রব, সকলের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব তাঁরই। পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর। রিজিক বন্টনের ক্ষেত্রে তিনি কাউকে প্রাচুর্যতা দান করেছেন আবার কাউকে দিয়েছেন সংকীর্ণতা এবং ধনীদের সম্পদের মাঝে দরিদ্রদের হক সুনির্দিষ্ট করে রেখেছেন। শুধু যাকাত নয়, যাকাত ছাড়াও সম্পদের দেয়ার রয়েছে। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে ধনীরা স্বতস্ফুর্তভাবে দরিদ্রদের (তারাও আল্লাহর প্রতিনিধি) সহায়তায় এগিয়ে আসবে; এটিই আল্লাহর অভিপ্রায় এবং গরীবকে সহায়তা মূলত আল্লাহকেই করা।
এবারে লকডাউনের মধ্যে রোযা পালন চলছে। পরিবারের প্রধানসহ বৃহত্তর পরিবেশে একত্রে অবস্থান, সেহরি খাওয়া, ইফতার গ্রহণে একটি আলাদা মজা রয়েছে। মুত্তাকী বান্দারা দারুণভাবে সেটি উপভোগ করে। অভুক্ত থাকলে সাধারণত মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে। কিন্তু রোযাদারের সে সুযোগ নেই। রোযা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করে এবং মুত্তাকী মাত্রই হয় বিনয়ী। বিনয়ী ব্যক্তি অহংকারমুক্ত, সে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কথা, কাজ ও আচরণে আল্লাহর কোনো বান্দাহ যাতে সামান্যতম কষ্ট না পায় সেজন্য থাকে তটস্থ। সে ভালো করেই জানে, জান্নাত কোনো অহংকারীর জন্য নয়, আল্লাহর বিনয়ী বান্দাদের জন্যই সেটি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এ সব গুণের অধিকারীরাই হয় প্রশান্তচিত্তের। আল্লাহপাক আমাদের অন্তরে বিনয়, অল্পেতুষ্ট এবং এর মধ্য দিয়ে হৃদয়ে প্রশান্তি দান করুন। আমিন। ১৮ রমযান ১৪৪১, ১২ মে ২০২০। 



Comments