মানুষ আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি, তাঁরই প্রতিনিধি। জ্ঞান, বুদ্ধি, যোগ্যতায় সকল সৃষ্টির সেরা। প্রত্যেকটি মানুষকে স্বতন্ত্র দৈহিক কাঠামো, মেধা ও অপার সম্ভাবনাসহ আল্লাহপাক পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। একজন মানুষের মাঝে যে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে সেটি তাকে বুঝতে হবে। আল্লাহতায়ালা এ দুনিয়াটিকে একটি নিয়মের উপর ভিত্তি করে পরিচালনা করছেন। এখানে যে শ্রম দিবে, প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাবে ও ধৈর্য অবলম্বন করবে অবশ্যই আল্লাহ তাকে সাফল্য দান করবেন। আমাদের সন্তানদের মাঝে হতাশা দানা বেধে উঠেছে। হতাশা তাদেরকেই স্পর্শ করে যারা অলশ ও কর্মবিমুখ। স্কুল জীবনে আমাদের ভাবসম্প্রসারণ/রচনা থাকতো ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’। পরিশ্রমী ব্যক্তি নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে জানে।
জীবনে সাফল্য লাভ করতে চাইলে প্রথমেই থাকতে হবে নিজের উপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করার পর একজন তরুণকে বুঝতে হবে, তার যোগ্যতা ছিল বলেই সে এতদূর অগ্রসর হতে পেরেছে। আব্রাহিম লিংকন তার ছেলের শিক্ষককে লেখা চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘তাকে এ শিক্ষাও দেবেন- নিজের প্রতি তার যেন সুমহান আস্থা থাকে’। একটি শ্লোগান শুনি, ‘মা বলেছেন, আমি পারবো’। হ্যাঁ, যে বলে, আমি পারবো, সে ঠিকই পারবে।
সম্ভবত ভলতেয়ারের উক্তি, ‘লোকে বলে সব মানুষ কবি হতে পারে না, বক্তা হওয়াও ঈশ^রের গুণ, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না’। তাঁর আর একটি উক্তি, ‘প্রতিভা বলে কোনো জিনিস নেই, পরিশ্রম করো, সাধনা করো প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে’। সাধারণত আল্লাহ তাঁর বান্দার শ্রমকে বৃথা যেতে দেন না। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’। ধৈর্যশীল সে, যে নিরন্তর প্রচেষ্টায় চালায়, ফললাভের জন্য তাড়াহুড়া করে না এবং প্রতিকূলতা সত্তে¡ও কাজের প্রতি একাগ্র থাকে। এমন ধৈর্যশীল বান্দাকে সাহায্য করতে আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দুনিয়ায় যারা বড় হয়েছেন, তাদের বড় হওয়ার ইতিহাস অত সুখকর ছিল না। অনেক কষ্ট, শ্রম ও সাধনার ফলে তাদের এই অবস্থান। কর্মবিমুখ ও অলস ব্যক্তির প্রার্থনা সাধারণত আল্লাহ কবুল করেন না। বড় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন থাকতে হবে। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবদুল কালামের মতে স্বপ্ন সেটি নয় যেটি ঘুমের মাঝে দেখে বরং স্বপ্ন তাই যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। অনেকের কাছে শুনি, ছেলে শুধু ঘুমাই, ডেকে উঠানো যায় না। আসলে তার মাঝে কোনো স্বপ্ন নেই তাই সে ২৪ ঘন্টার ১৬ ঘন্টা ঘুমায়। যে ছাত্রের স্বপ্ন থাকে ভালো রেজাল্টের বা ভালো একটি চাকুরি প্রাপ্তি বা ব্যবসায়ে সাফল্য সে নিজ থেকেই ঘুমাতে পারে না।
দুনিয়ার জীবনটা দিন দিন বড় জটিল হয়ে পড়ছে। কঠোর পরিশ্রমী ও অধ্যাবসায়ী ছাড়া টিকে থাকা বড় দায়। এখন তাদের বহুমুখী যোগ্যতার অধিকারী হওয়া অপরিহার্য। বিশেষ করে কম্পিউটার, গণিত ও ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে চাকুরি বাজারে নিজের একটি অবস্থান তৈরী করা খুবই সহজ। এই লকডাউনে নিজেকে উচ্চমাত্রায় পৌঁছে দেয়ার এক সুযোগ এসেছিল। আমরা আশা করবো আমাদের তরুণ সমাজ একটি মুহূর্ত অপচয় না করে করোনা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেকে প্রস্তুত করে তুলবে। ওরা আমাদের উত্তরাধিকার, ওরা হবে আমাদের স্থলাভিষিক্ত। আল্লাহপাক আমাদের তরুণ সমাজকে যোগ্যতা ও নৈতিকতায় সেরা হিসেবে গড়ে ওঠার তাওফিক দান করুন। ২৮.০৫.২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment