আমাদের দ্বীনের অন্যতম বুনিয়াদ রমযান মাসের
রোযা পালন। নিঃসন্দেহে রোযা একটি কঠিন আমল ।তিন বেলায় পানাহারে অভ্যস্ত মানুষগুলো আল্লাহর
নির্দেশে সারাদিন পানাহার থেকে বঞ্চিত থাকে। এটা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাকে
শাস্তিদান।মোটেই তা নয়।সহজতা দান প্রসঙ্গে আল্লাহ নিজেই বলেছেন অসুস্থ ও সফরে থাকাবস্থায়
রোযার সংখ্যা পরে পূরণ করবে। তাঁর বাণী : ‘তিনি তোমাদের
জন্য (তাঁর বিধান) সহজ করে দিতে চান এবং তোমাদের জন্য কঠিন-কষ্টকর করতে চান না’। এ ছাড়া সারা
রাত পানাহারে কোনো বিধি-নিষেধ রাখেননি।আল্লাহ বলেছেন :‘আর পানাহার করতে
থাকো যতক্ষণ না তোমাদের কাছে রাতের কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা পরিষ্কারভাবে ফুটে
ওঠে। তারপর সওম পূর্ণ করো রাতের আগমন পর্যন্ত’।
এরপর আল্লাহর রসুল (সা) সেহরী ও ইফতারকে
সুন্নাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি বলেছেন কল্যাণ রয়েছে তাড়াতাড়ি ইফতার করার
মধ্যে। ‘রাতের আগমন পর্যন্ত’ বলাতে আমাদের
সমাজে ইফতারের ক্ষেত্রে অনেকে অহেতুক বিলম্ব করতে চান। কুরআনের ব্যাখ্যা হলো হাদিস।সকল
মুসলিমকে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা)-কে শর্তহীনভাবে মেনে নিতে হয়ে এবং এর অন্যথা করার
কোনো সুযোগ নেই। ইফতারের সময়ের ব্যাপারে বুখারী শরীফে ৬টি হাদিস উদ্ধৃত করা হয়েছে
(১৮১৬-১৮২১)।
ইবনে আওফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন
কোনো এক সফরে আমি নবী (সা)-এর সাথে ছিলাম। তিনি রোযা রেখেছিলেন। সন্ধ্যা হলে তিনি এক
ব্যক্তিকে বললেন, তুমি গিয়ে আমার জন্য ছাতু গুলে আনো। সে বললো আপনি সন্ধ্যা পর্যন্ত
অপেক্ষা করুন। নবী (সা) ফরমালেন, তুমি আমার জন্য ছাতু গুলে আনো। যখন দেখবে রাতের অন্ধকার
পূর্ব দিক থেকে ঘনিয়ে এসেছে তখন বুঝবে রোযাদারের ইফতারের সময় হয়ে গেছে। বুখারী ১৮২০।
অন্যান্য হাদিসেও ইফতারের ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি
করার কথা বলা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন
মহান প্রতাপশালী আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে যারা দ্রুত ইফতার করে তারাই আমার
নিকট অধিকতর প্রিয়।(তিরমিযী)।
আসলে আল্লাহর আইন পালনে অভ্যস্ত করাটাই
রোযার উদ্দেশ্য। রোযাকে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় করার জন্য মানুষ কত সচেতন। আল্লাহর হালালকৃত
সবই কেবল তাঁর ভয়ে রমযান মাসে গ্রহণ থেকে সে বিরত থাকে। রোযাদার জানে আল্লাহ থেকে নিজেকে
আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই। তাই ক্ষুধা ও পিপাসায় অস্থির হয়ে পড়লেও লোকচক্ষুর অগোচরে
সে কিছু গ্রহণ করে না। যে জিনিস আল্লাহ স্থায়ীভাবে হারাম করেছেন রোযাদার রমযান মাস
ও অন্যান্য সময়ে কখনই তা গ্রহণ করতে পারে না। এটা যদি কারো জীবনে সম্ভব হয় তাহলেই তার
রোযা সার্থক হবে এবং সে জান্নাতের এক স্পেশাল দরজা (রাইয়ান) দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে। আল্লাহপাক আমাদের সেই সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন
Comments
Post a Comment