রমযানের রোযার পরিশুদ্ধকরণ ও গরীব-দুখী মানুষকে ঈদের আনন্দে শরীক করানোর লক্ষ্যে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম ঈদের নামাযের ২/১ দিন পূর্বেই প্রদান করতেন। নামাযের ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে যেমন সহু সেজদা দিতে হয়, ফিতরাও তদ্রুপ। নামাযের পরে দিলে আর রোযার পরিশুদ্ধি হয় না, সেটি সাধারণ দান হয়ে যায়। তাই সবারই উচিত ঈদের জামাতের পূর্বেই ফিতরা আদায় করা।
ফিতরা নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, স্বাধীন বা দাস সবার উপর ওয়াজিব। গৃহকর্তা সবার পক্ষ থেকে আদায় করবে। কেউ নিজে আদায় করলেও হবে। যার ঘরে একদিন ও একরাতের খাবারের উদ্বৃত্ত এক ছা পরিমাণ দ্রব্য বা অর্থ রয়েছে তার উপরই ফিতরা ওয়াজিব। এই মত ইমাম আবু হানিফা (রহ)ছাড়া বাকি তিন ইমামের। ইমাম আবু হানিফা (রহ)বলেন, ঈদের দিন যার নেছাব পরিমাণ সম্পদ আছে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব। যাকাত মালের উপর কিন্তু ফিতরা ব্যক্তির উপর। ধনী-দরিদ্র সবারই রোযার পরিশুদ্ধি দরকার। এই মতটি বেশি জোরালো।
রসুলুল্লাহ (সা) ও খোলাফয়ে রাশেদীনের আমলে প্রচলিত খাদ্যশস্যের যে কোনো একটি দিয়ে জনপ্রতি এক ছা হিসাবে ফিতরা আদায় করা হত। হযরত আমির মুয়াবিয়া (রা)-এর শাসনামলে তিনি দেখেন যব, খেজুর বা অন্যান্য ফসলের তুলনায় গমের দাম বেশি। সে সময়ে তিনি বলেন গম অর্ধ ছা দিলেও ফিতরা আদায় হবে। তখন অধিকাংশ লোক তা মেনে নেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন অর্ধ ছা গম (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম)-এর মূল্য সর্বনিম্ন ফিতরা ৭০/- থেকে বিভিন্ন পণ্যের বিভিন্ন মূল্য হিসেবে ফিতরা নির্ধারণ করেছেন। তবে গম ছাড়া অন্যান্য ফসলের মাধ্যমে ফিতরা প্রদান করতে চাইলে এক ছা পরিমাণ প্রদান করতে হবে বা তার দাম দিতে হবে। আমাদের প্রধান খাদ্য চাল হিসেবে ফিতরা দিতে চাইলে এক ছা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) চাল বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যে যে মানের চাল খান তার বাজার মূল্য হিসেব করে দিতে হবে।
গতকাল আমাদের মিনিকেট চাল কেনা হলো ৫০/- টাকা কেজি। সেই হিসেবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের মূল্য আসে ১৬৫/- টাকা। ৭০/-টাকা হিসেবে প্রদান করলে ফিতরা (ওয়াজিব) আদায় হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ। আমি এক ছা পরিমাণ চাল হিসেবে প্রদান করছি। শরীয়ত সর্বনিম্নটা বলবে বাকিটা আপনার। এত ছওয়াবের পার্থক্য রয়েছে। এক ছা পরিমাণ প্রদানকে উত্তম মনে করি।
ইতোপূর্বে আমি ফিতরার উপর একটি দীর্ঘ পোস্ট (১২৩৮ শব্দ) দিয়েছি। বুখারি শরীফ থেকে হাদিসগুলো নিয়েছি এবং সহযোগিতা নিয়েছি ড. ইউসুফ আল-কারযাভীর ইসলামের যাকাত বিধান ও সাইয়্যেদ সাবেকের ফিকহুস সুন্নাহ থেকে। যারা একটু বাড়তি জানতে আগ্রহী তাদেরকে ১১ মে ফেসবুকে লেখাটি পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
উম্মাহর মধ্যে বিতর্ক এড়িয়ে চলা দরকার। যেখানে মতপার্থক্য রয়েছে সেখানে যে কোনো একটি মত অনুসরণের সুযোগ আছে। তাই আমরা প্রত্যেক মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং নিজের জন্য যেটি সর্বোত্তম বিবেচনা করি বা সহজ হয় সেটি আমল করি। এতে কোনো সমস্যা নেই বরং গুনাহ রয়েছে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়াতে। আল্লাহপাক আমাদেরকে হেফাজত করুন।
২৭ রমযান ১৪৪১, ২১ মে ২০২০।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment