Skip to main content

আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার এটিই সুযোগ (রমযানের শিক্ষা ২২)

আমরা এখন রয়েছি রমযানের শেষ দশকে। এই দশকেই রয়েছে মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর, যার মর্যাদা আল্লাহর ভাষায় হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। জিবরাইল (আ) ফেরেশতামন্ডলিকে সাথে করে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ফজরের উদয় পর্যন্ত থাকে রাতটি শান্তিময়। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে উদার হস্তে দিতে চান। শুধু চেয়ে নেয়ার দরকার। বান্দাকে শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহ কখনো বাহানা তালাশ করবেন না, বরং ক্ষমা করার জন্য উপায় তালাশ করবেন। ক্ষমা প্রাপ্তির বড় সুযোগটি আসে তাওবা (গুনাহ থেকে ফিরে আসা) ও এস্তেগফারের (ক্ষমা চাওয়া) মাধ্যমে। হতাশ হবার কিছু নেই। গুনাহের পাল্লা যতই ভারি হোক, বান্দাহ যদি তাওবা করে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে পূর্বের অপরাধের জন্য বান্দাহ আর শাস্তিযোগ্য থাকে না। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বান্দার ঈমান। ঈমান পরিশুদ্ধ হতে হবে। আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ এবং ইসলামকে একমাত্র দ্বীন (ধর্ম) হিসেবে মেনে সকল ব্যবস্থাপনাকে অস্বীকার করার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ। বান্দার কাছ থেকে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন কখনই আল্লাহ কবুল করবেন না। আল্লাহর বাণী, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি কখনই গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত’-আলে ইমরান ৮৫। আমলের দুর্বলতা ক্ষমার যোগ্য কিন্তু ঈমানের দুর্বলতা ক্ষমার যোগ্য নয়। ইসলামকে নিজের জীবনাদর্শ হিসেবে মানার ক্ষেত্রে যদি কারো মধ্যে দুর্বলতা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সে হতভাগা, সে কপালপোড়া। জাহান্নামকেই সে তার ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছে। আল্লাহপাক তাঁর দ্বীনকে খুব সহজভাবে মানুষের কাছে পেশ করেছেন। ইসলামকে বলা হয় ফিতরাতের ধর্ম। স্বভাব-প্রকৃতি যা দাবী করে সেটিই ইসলাম। কোনো প্রকার কাঠিন্য তিনি আরোপ করেননি। একদা আল্লাহর রসুল (সা)-এর কাছে এক বেদুইন ইসলাম গ্রহণ করতে আসে। ঈমান আনার পর তার কাজ জানতে চাইলে রসুলুল্লাহ (সা) তাকে নামায পড়তে বলেন ও রমযান মাসে রোযা রাখার কথা বলেন। আর সামর্থ হলে যাকাত আদায় ও হজ্জ করতে বলেন। বেদুইন যাওয়ার সময় বলে, আল্লাহর কসম! আমি এর বেশিও করবো না, আবার কমও করবো না। বেদুইনের চলে যাওয়ার পর রসুলুল্লাহ (সা) বলেন, লোকটি সত্যবাদী হলে সে জান্নাতী। এর কারণ হলো, তার ঈমান ছিল নির্ভেজাল। পক্ষান্তরে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই রসুলুল্লাহ (সা)-এর পেছনে নামায পড়েছে এবং সমাজের নেতা হিসেবে প্রথম কাতারেই হয়তো দাঁড়িয়েছে, কিন্তু সে ছিল ইসলামের কঠোর দুশমন, তার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করেনি। তাই এতো সামাজিক মর্যাদা তার কোনো কাজে আসেনি বরং মুনাফিক সরদার হিসেবে সে পরিচিতি লাভ করেছে, জাহান্নামই যার ঠিকানা। ব্যক্তিগত জীবনে নামায, রোযা, দান-খযরাত, তাহাজ্জুদ আদায়ে নিষ্ঠাবান হয়েও একজন ব্যক্তি জাহান্নামে যেতে পারে যদি সে ইসলামকে নিজের জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। কুরআন নাজিলের মাস রমযানুল মুবারক বিদায়ের পথে। লাইলাতুল কদর তালাশের সময়। কদরের রাত পাওয়ার লক্ষ্যে রসুল (সা) শেষ দশক ইতেকাফে কাটিয়েছেন। কোন্ রাতটি কদর আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা) কেউ স্পষ্ট করেননি। তবে হাদিসে বেজোড় রাতে তালাশ করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ চান, তাঁর বান্দারা একটু বেশি বেশি তাঁর কাছে ধর্ণা দিক। আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি খুশি হন। আসুন, আমরা আল্লাহর দ্বীন মানার ক্ষেত্রে এননিষ্ঠ হই এবং নিজের গুনাহের মার্জনার জন্য মহান মুনিব আল্লাহতায়ালার দরবারে ধর্ণা দেই। পরোয়ারদেগার! তুমি আমাদের তাওবা কবুল করো ও ক্ষমা করো। ২২ রমযান ১৪৪১, ১৬ মে ২০২০।

Comments