Skip to main content

রোযা ও সদাচরণ (রমযানের শিক্ষা ২৩)

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে যে রমযান আমাদের মাঝে এসেছিল তা বিদায়ের পথে। আমরা কতটুকু অর্জন করতে পারলাম তার হিসাব মেলানো দরকার। আমাদের পাপরাশি মিটিয়ে দেয়া ও নেকির পাল্লা ভারি করা ও জীবনাচার পরিশুদ্ধ করার এক অপূর্ব সুযোগ নিয়ে এসেছিল এই রমযান ও রোযা। রোযা সব পাপাচার থেকে আমাদেরকে হেফাজত করবে। সে শক্তি রোযার ছিল। রোযা তো এজন্যই ফরজ করা হয়েছে যাতে মানুষের মাঝে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়। আল্লাহর ভয়ই পারে মানুষকে পাপাচার থেকে দূরে রাখতে ও আল্লাহর বিধান মেনে চলার শক্তি যোগাতে। কত চমৎকারভাবেই না রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘রোযা একটি ঢাল। তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখবে, তখন সে যেন অশ্লীল কথা না বলে ও অভদ্র আচরণ না করে। কেউ যদি তার সাথে মারামারি বা গালাগালি করতে আসে তবে সে যেন দু’বার বলে আমি রোযাদার’- বুখারি ও আবু দাউদ। ঢাল তো তাই যা যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর আক্রমণ থেকে একজনকে রক্ষা করে। রোযাকে ঢাল হিসেবে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে রসুল (সা) রোযার কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করেছেন। রোযা রাখার মাধ্যমে একজন রোযাদারের উপলব্ধি তো এটিই, সে আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে নয় এবং সে যদি গোপনে পানাহার বা যৌন চাহিদা পূরণ করে তাহলে তার রোযা ভাঙ্গার পাশাপাশি সে শাস্তির সম্মুখিন হবে। এই বোধ ও উপলব্ধিই রোযাদারকে সব ধরনের গুনাহ থেকে হেফাজত করে। এই একটি মাস রোযাদার সব ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা ও অভদ্র আচরণ থেকে দূরে থাকে। কারো সঙ্গে ঝগড়া-ঝাটি ও মারামারির তো প্রশ্নই উঠে না। কেউ ঝগড়া-ঝাটি করতে চাইলেও সে তাতে না জড়িয়ে বিনয়ের সাথে বলে, আমি রোযাদার, আমার পক্ষে এ অন্যায়-অপকর্ম সম্ভব নয়। এভাবে চলার ফলে তার জীবনে ঘটে এক আমূল পরিবর্তন। সে হয়ে পড়ে ন্যায়, কল্যাণ ও উত্তম আচরণের এক মূর্ত প্রতীক। ইসলাম সদাচরণের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। এমন কি নামায-রোযার মত আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগী ফরজ হওয়ার পূর্বে সদাচার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, গালি দেয়া, অসাক্ষাতে নিন্দাবাদ করা, ইয়াতিমকে ধাক্কা দেয়া, মিসকিনকে খাবার দানে উৎসাহিত না করা-এ সবই পরকালে অবিশ্বাসীদের কাজ বলে নবুয়তের প্রথম দিকে নাযিলকৃত সূরাসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মানুষের সাথে সদাচরণের বিষয়ে আলোচনা ও উদ্বুদ্ধকরণে কুরআন ও হাদিসের পৃষ্ঠাসমূহ ভরপুর। পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ, আত্মীয়তার হক আদায়, গরীব-দুখীর প্রতি দায়িত্বপালন, প্রতিবেশি ও অমুসলিমদের সাথে সদাচরণ; এমন কি জীব-জন্তু, পশু-পাখি ও উদ্ভিদের হকও উল্লেখ রয়েছে। রোযা পালনের মাধ্যমে অর্জিত তাকওয়া ব্যবহারিক জীবনে যে প্রয়োগ করতে পারলো সেই সফলকাম। রোযা রাখার মাধ্যমে কেউ যদি তার চরিত্রের পরিশুদ্ধি আনতে ব্যর্থ হয় অর্থাৎ মিথ্যা, অশ্লীলতা, অপরের সঙ্গে দুর্ব্যাবহার পরিহার করতে না পারে তাহলে তার রোযার নামে পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই। এ যেন সেই যোদ্ধার মত যুদ্ধের মাঠে যার ঢাল ভেঙ্গে যায়। ফলে সে আর নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। রোযাও একটি ঢাল। রোযাদার যদি রোযার উদ্দেশ্য বিস্মৃত হয়ে পড়ে তাহলে ঢাল ভেঙ্গে ফেলার মত সে আর নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় না। সদাচরণ সম্পর্কে ২/১টি হাদিস উল্লেখ করে আজকের আলোচনা শেষ করতে চাই। ভূপৃষ্ঠে যারা আছে তাদের সাথে সদাচরণ করো, তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের সাথে সদাচরণ করবেন। যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না। প্রসন্নচিত্তে পিতা-মাতার প্রতি দৃষ্টিদান কবুল হজ্জের সমান ছওয়াব। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। আত্মীয়তার হক নষ্টকারী জান্নাতে যাবে না। কেউ যদি রুজির প্রশস্ততা ও হায়াত বাড়াতে চায় সে যেন গরীব আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করে। আত্মীয়তার হক এ নয় যে, কেউ তোমার সঙ্গে সদাচরণ করলেও তুমিও করবে, বরং কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করলে তা জুড়ে দেয়ার নামই হলো আত্মীয়তার হক। যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয় সে মু’মিন নয়। কিয়ামতের দিন সৎ চরিত্রের চেয়ে ওজনদার আর কিছু থাকবে না। কৃপণ ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। দানকারী আল্লাহর নিকটবর্তী। আগুন যেমন শুকনা কাঠ জালিয়ে ভস্ম করে দেয়, তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। মল্লযুদ্ধে যে বীর সে বীর নয়, সেই বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করে। তোমরা অধীনস্থদের অপরাধ ক্ষমা করো দৈনিক সত্তর বার হলেও। মানুষকে সৎ, বিনয়ী, পরোপকারী, সদাচারী, কল্যাণকামী ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে উদ্বুদ্ধকরণ (Motivation) তা পুরোটিই আমরা আমাদের প্রিয়তম নবী (সা)-এর জীবন থেকে পেতে পারি। আল্লাহপাক আমাদেরকে রোযার মাধ্যমে যথার্থ মুত্তাকী হওয়ার তাওফিক দান করুন, যার ফলে মানবজাতি কেবল কল্যাণই লাভ করতে পারে। ২৩ রমযান ১৪৪১, ১৭ মে ২০২০।

Comments