রসুলুল্লাহ (সা) একদিন মসজিদের মিম্বরে
আরোহন করার সময় প্রতি ধাপে আমিন বলেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা) আশ্চর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস
করেন, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা)! আপনি আমিন আমিন বলছেন কেন? জবাবে রসুলুল্লাহ (সা) বলেন,
এইমাত্র জিবরাইল (আ)আমাকে বলে গেলেন, যে লোক রমযান মাস পেল অথচ নিজের গুনাহ ক্ষমা করে
নিতে পারলো না সে যেন ধ্বংস হয়। আমি বললাম,আমিন।
তিনি আরো বলেন, জিবরাইল (আ)আমাকে বললেন,
যে লোক তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা দুই জন বা কোনো একজনকে জীবিত অবস্থায় পেল অথচ তাদের খেদমত
করে জান্নাত লাভ করতে পারলো না, সে যেন ধ্বংস হয়। আমি জবাবে বললাম, আমিন।
তিনি আরো বলেন, জিবরাইল (আ)আমাকে বলে গেলেন,
যার সম্মুখে আমার নাম উচ্চারিত হলো অথচ দরুদ পড়লো না সে যেন ধ্বংস হয়। আমি বললাম, আমিন।
মুসলিম শরীফ ২৫৫১ ও তিরমিযী শরীফ ৩৫৪৫।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস।এই হাদিসে
তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, আর এ কথাগুলো রসুল (সা)-এর নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে
জিবরাইল (আ)-এর কথা এবং তিনি তা সমর্থন করেছেন। রমযান মাসের প্রথম দশক অতিবাহিত হচ্ছে।
এ মাসটি পুরোটাই আল্লাহর রহমত ও বরকতে ভরপুর। এই মাসের বিশেষত্ব হলো, আল্লাহর অনুগত
বান্দাদের পুরোপুরি গুনাহ মুক্ত করে দেয়া।এ জন্য বান্দার দরকার গুনাহ থেকে ফিরে এসে
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। রমযান মাস পেয়ে আল্লাহর যে বান্দাহ পুরোপুরি
সদ্ব্যবহার করে জান্নাত লাভের উপযোগী হতে পারলো না জিবরাইল (আ)কর্তৃক তার ধ্বংস কামনাকে
রসুল (সা) সমর্থন করেন।
মাতা-পিতা সন্তানের জন্য বড় সম্পদ। তাঁদের
সাথে সদাচরণ ও খেদমত সন্তানের বড় প্রাপ্তি। তাঁরা কষ্ট পান এমন সামান্যতম উক্তি ও কাজ
আল্লাহর পছন্দ নয়। সব সময় তাঁদের মন জুগিয়ে চলা সন্তানের জন্য আল্লাহপাক ফরজ করে দিয়েছেন।
বৃদ্ধ মাতা-পিতার সাথে সন্তুষ্টচিত্তে তাকানোকে কবুল হজ্জের সমান ছওয়াব হিসেবে হাদিসে
উল্লেখ করা হয়েছে। পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের বিষয়ে কুরআন-হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।
এখানে জিবরাইল (আ)-কে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে খেদমত করতে ব্যর্থ
সন্তানের জন্য জাহান্নামই তার ঠিকান। দুর্ভাগ্য আমাদের,একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে
মাঝে-মধ্যেই মাতা-পিতার অনেক করুণ কাহিনী শোনা যায়।
কেবল জীবদ্দশায়ই নয়, মাতা-পিতার ইন্তেকালের
পরেও সন্তানের করণীয় রয়েছে। মাতা-পিতার সাথে সংশ্লিষ্ট আত্মীয়-স্বজন ও তাঁদের বন্ধু-বান্ধবদের
সাথে সদাচরণ করা এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে দান-সাদাকা, নফল ইবাদত ও দুআ করা সন্তানের জন্য
কর্তব্য। দান-সাদাকা ও দুআ করার ছওয়াব মাতা-পিতার সাথে যিনি করেন তার আমলনামাতেও যোগ
হয়। দুআ করার ভাষা স্বয়ং আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন, দুআ কবুল না হওয়ার প্রশ্নই আসে
না। হাদিসে এসেছে, দুআকারী নেক সন্তান ছদকায়ে জারিয়া এবং কবরে বসে মাতা-পিতা ছওয়াব
পেতে থাকেন।
তৃতীয়ত :দরুদ পাঠ। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা
তাঁর নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন এবং ঈমানদারদের প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশ প্রদান করা
হয়েছে। নামাযের মধ্যে দরুদ পাঠ এবং আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনার আগে দরুদ পাঠ মু’মিনদের সাধারণ
অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ।এখানে হাদিসে যে বিষয়টি বলা হয়েছে, রসুল (সা)-এর
নাম উচ্চারণ হওয়ার সাথে সাথে নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করতে হবে। একাকী বা কোনো মাহফিলে
তাঁর নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে ভক্তিভরে ‘সাল্লাল্লাহু
আলায়হি ওয়া সাল্লাম’ বলতে হবে। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, রসুল
(সা)-এর নাম উচ্চারিত হলে যে দরুদ পড়ে না সে একজন কৃপণ। আর আমরা জানি, কৃপণ জান্নাতে
যাবে না।
এখন রমযান মাস। নেকি কামাবার এক মওসুম।
রোযার উদ্দেশ্যকে খেয়াল করে রোযা পালনের সাথে সাথে পিতা-মাতাসহ আল্লাহর বান্দাদের সাথে
সদাচরণ এবং বেশি বেশি করে দরুদ পাঠের মধ্যমে নেকির পাল্লা ভারী করার সুযোগকে কাজে লাগার
তাওফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন।
Comments
Post a Comment