রোযার শাব্দিক অর্থ
হলো বিরত থাকা। এটি শুধু পানাহার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা নয়, বরং সেই সাথে সব ধরনের
পাপাচার থেকে বিরত থাকাও এর মধ্যে শামিল। মানুষের ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে অন্যতম হলো গীবৎ অর্থাৎ অপরের সমালোচনা করা। অপরের সমালোচনার চেয়ে সহজ,মুখরোচক ও তৃপ্তিকর আর কিছু নেই। এ সমালোচনা ফেসবুকে,বাসায়,অফিসে,চায়ের
দোকানে এমন কি মসজিদেও। এ থেকে যেন মানুষ মুক্ত নয়। অথচ কাজটি অত্যন্ত ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়।
মানুষের জীবন,সম্পদ ও সম্মান আল্লাহতায়ালার
কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। কোনো না কোনোভাবে তা
ক্ষুণ্ণ হোক আল্লাহপাক তা চান না এবং তাতে আল্লাহর চরম ক্রোধ প্রকাশ পায়। তাঁর বাণী-‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা
মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল করে ও পেছনে দোষ প্রচার করে’। মানুষকে হেয় করা,ছোট করা,গালি
দেয়া,বকা-ঝকা করা বা এমন কোনো আচরণ যাতে মানুষ কষ্ট পায়,সবই গুনাহের কাজ। অসাক্ষাতে নিন্দা করা বা সমালোচনা করাকে (যদিও
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মাঝে দোষ-ত্রুটি বর্তমান) গীবৎ বলা হয়-যা
কুরআনে মরা ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং হাদিসে যিনা অপেক্ষাও
জঘন্য বলা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো-রোযাবস্থায় কি মানুষের সাথে ঝগড়া-ঝাটি করা
বা কারো সমালোচনা করা যায়-এক কথায় জবাব হলো,না। হাদিসে বলা হয়েছে যে,কেউ ঝগড়া
করতে চাইলে সে বলবে-‘ভাই,আমি রোযাদার’। জবানের
হেফাজতের অভাবে আমরা অনেক সময় রোযার ফায়দা থেকে বঞ্চিত হই। কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোযা নয়,আল্লাহর সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে
বিরত থাকার নামই হলো রোযা-যা দীর্ঘ এক মাস রোযা পালনের মাধ্যমে সেই শিক্ষাই আমাদেরকে দেয়া হয়। তাই মাহে রমযানের শুরুতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই,আমাদের
এই জবান থেকে কেউ যেন সামান্যতমও কষ্ট না পায়।
দুই ঠোঁটের মাঝখান ও দুই রানের মাঝখান (লজ্জাস্থান)এর হেফাজতের
নিশ্চয়তা প্রদান করলে রসুল (সা)তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। আসুন,সমালোচনা
নয় মানুষের মধ্যে ভালো যা কিছু আছে তা তুলে ধরে প্রশংসা করি,একান্ত
না পারলে চুপ থাকি। সামান্য অসতর্কতা বা সাময়িক একটু
ভালো লাগা বা নিজের ক্রোধ প্রকাশ করে আমাদের এই কষ্টকর রোযার ফললাভ থেকে যেন আমরা
বঞ্চিত না হই। আল্লাহপাক আমাদের পূর্ণ মাস রোযা রাখার
তাওফিক দান করুন ও সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
হাদিসের ভাষায়, আল্লাহপাক শয়তানকে রমযান মাসে
শৃঙ্খলিত করে রাখেন। ফলশ্রুতিতে দ্বীনের এক অনুকূল পরিবেশ সর্বত্র বিরাজ করে। মানব
শয়তানগুলোকে শৃঙ্খলিত করতে পারলে সমাজ থেকে সকল অনাচার-পাপাচার বন্ধ হয়ে যেত। এ
দায়িত্ব ছিল আল্লাহর প্রতিনিধি (খলিফা) হিসেবে তাঁর অনুগত বান্দাদের।
Comments
Post a Comment