Skip to main content

এবারের ঈদের নামায

ঈদের নামায খোলা জায়গায় পড়াটাই সুন্নাত। রসুলুল্লাহ (সা) কাবা শরীফে নামায আদায় ছাড়া অন্যান্য স্থানে ঈদের নামায আদায়ের সময় খোলা ময়দানে চলে আসতেন। একবার বৃষ্টিজনিত কারণে তিনি মসজিদে নববীতে ঈদের নামায আদায় করেছিলেন। কোনো কারণে ঈদের জামাত ছুটে গেলে রসুলুল্লাহ (সা) বাসায় দু’রাকাত নামায পড়ে নেয়ার জন্য বলেছেন। তিনি বলেছেন : এটা আমাদের মুসলমানদের ঈদ। ইমাম বুখারি বলেছেন : ঈদের নামায ছুটে গেলে দু’রাকাত পড়ে নেবে। আতা বলেছেন : যখন ঈদের জামাত ছুটে যায়, তখন দু’রাকাত নামায পড়ে নেয়া উচিত। নারীরা ঈদগাহে না গিয়ে থাকলে বাসায় দু’রাকাত নামায পড়তে পারে। কোনো কারণে জামাতের সাথে পড়ার সুযোগ না হলে ঈদের নামায একাকী বা পরিবারের সদস্যদের সাথে আদায় রসুলুল্লাহ (সা) থেকে প্রমাণিত। ফিক্হুস্ সুন্নাহ (সাইয়্যেদ সাবেক) প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা ২৭৬। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে একত্রে সমাবেশ প্রতিহত করার জন্য জন্য চলছে লকডাউন। সরকারি ছুটি এবং অনেক শপিংমল, গণপরিবহন, রেল ও বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সবাইকে ঘরে অবস্থানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। শর্তাধীন মসজিদ খুলে দেয়া হয়েছে। ঈদগাহে নামায আদায় না করে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামায পড়ার জন্য বলা হয়েছে। সাথে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের মসজিদে না আসার জন্যও বলা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জু’মার নামায না পড়েও আমাদের সমাজে ঈদের নামায পড়ার রীতি রয়েছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে ঈদগাহে ভীড় একটু হয়েই থাকে। এমতাবস্থায় কেউ যদি বাসায় ঈদের নামায আদায় করে তাহলে তাদের নামায হবে কি-না সে প্রসঙ্গেই আমার লেখা। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সউদী আরবের গ্রান্ড মুফতি ও সিনিয়র আলেমগণ ঈদের নামায বাড়িতে পড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শেখ আব্দূল আজিজ আল শেখ জানান, ব্যতিক্রমী ও জরুরি পরিস্থিতিতে ঈদের নামায বাড়িতে পড়া জায়েজ। আমাদের দেশের একজন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও ফকিহ শায়খ আহমাদুল্লাহ ঈদের নামায নিজ ঘরে আদায় প্রসঙ্গে একটি ভিডিও প্রচার করেছেন। ইউটিউবে সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। আমি আমার নিজের কথা বলতে চাই। আমি সবসময় দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে সহজটা গ্রহণ করার পক্ষে এবং যে সব ক্ষেত্রে মতপার্থক্য রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে যে কোনো একটি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি। লকডাউন সময় পুরোটাই আমি পাঁচ ওয়াক্ত ও জু'মার নামায (জু’মার পরিবর্তে যোহর) বাসায় জামাতের সাথে আদায় করেছি। এক ওয়াক্ত নামাযও জামাত ছাড়া হয়নি। আলহামদু লিল্লাহ। আমি প্রথমেই ঘোষণা দিয়েছিলাম, লকডাউন পিরিয়ডে আমাদের ঘরই হবে মসজিদ। প্রতিদিন যোহর বাদে হাদিসের আলোচনা, ব্যক্তিগতভাবে কুরআন অধ্যয়ন, ইসলামী সাহিত্য পাঠ ও পরিবারের সবাই মিলে কুরআন খতম আমাদের কর্মসূচির অংশ ছিল। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন মিলে আমাদের এক আইডিতে যারা আছেন তাদের নিয়ে নয় আইটেমে নানাবিধ প্রতিযোগিতা চলছে। শিশু থেকে বয়স্ক (০ থেকে ৪, ৪+ থেকে ১০, ১০+ থেকে এসএসসি, বয়স্ক এবং আমাদের পিতা-মাতা ও সমপর্যায়ের) বিভিন্ন পর্যায়ের কুরআন তেলাওয়াত, তাফসির পাঠ, ইসলামী সাহিত্য পাঠ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের আয়োজন রয়েছে। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ছিল স্বতস্ফুর্ত ও আনন্দঘন। একথাগুলো এজন্যই লিখলাম যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন, কারণ লকডাউন সহজে যাচ্ছে না, আরো কয়েক মাস হয়তো আমরা খোলামেলা হতে পারবো না। ঈদের নামাযের নিয়ম : ঈদের নামায দুই রাকাত, অন্যান্য নামাযের মতই। শুধু পার্থক্য তাকবির সংখ্যা নিয়ে। প্রথম তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবর) শেষে ছানা পড়ার পর তিনবার তাকবির (ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর মতে) বলার পর সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা (উচ্চ আওয়াজে) মেলাতে হবে। তারপর যথানিয়মে রুকু-সেজদা পর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা মেলানো শেষে তিন তাকবির (প্রত্যেক তাকবিরের সময় হাত উঠাতে হবে) বলার পর যথানিয়মে রুকু-সেজদা এবং বৈঠক করে সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করতে হবে। ঈদের খুতবা সুন্নাত। খুতবা পাঠ না করলে নামাযে কোনো সমস্যা নেই। যারা ঘরে নামায আদায় করতে চান তারা এভাবে আদায় করতে পারেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার স্বার্থে ঘরে নামায আদায় করে পরিবারসহ ঘুরে বেড়ানো মোটেই ঠিক হবে না। নিজের কাছে জিজ্ঞেস করলেই এর জবাব পাবেন। করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমরা চেষ্টা করি ঘরে থাকার। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন। ২৬ রমযান ১৪৪১, ২০ মে ২০২০।

Comments