রমযানের প্রথম অধ্যায় (রহমত) অতিক্রম করে আজ শুরু হচ্ছে মাগফিরাতের অধ্যায়। রমযান আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্তির মাস। বান্দার অপরাধ ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যারা ঈমান ও এহতেছাবের সাথে রোযা রাখবে আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। গুনাহ ক্ষমা করে নেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহপাক তাঁর সকল বান্দার দুআ বা প্রার্থনা কবুল করেন। তারপরও হাদিসে কয়েক শ্রেণির মানুষের কথা বলা হয়েছে যাদের দুআ কবুল হয়। এর বর্ণনা বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়। যেমন, সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দুআ, মজলুমের দুআ, অসুস্থ মানুষের দুআ, রোযাদারের ইফতারের পূর্বের দুআ, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুআ, পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দুআ, একজন মুসলমান কর্তৃক তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দুআ। আল্লাহপাক যে তাঁর বান্দার প্রার্থনা কবুল করেন তা তিনি নিজেই ব্যক্ত করেছেন।
‘আর হে নবী! আমার বান্দারা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের অতি নিকটে। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা তাদের কর্তব্য। এ কথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো তারা সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে’- সূরা আল বাকারা ১৮৬।
আল্লাহপাক তাঁর বান্দার সাথে করা প্রতিশ্রুতি কখনই ভঙ্গ করেন না। তাই পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থার সাথে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। চাইতে হবে ছোট বড় সব ধরনের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে। ব্যক্তি তার ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ক্ষমা, নিজ ও পরিবারের সুস্থতা ও নিরাপত্তা, চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিয়ে-সাদী, সন্তান সবকিছু আল্লাহরই কাছে চাইতে হবে। এই চাওয়ার কোনো দিন-ক্ষণ নেই, সবসময়ই চাওয়া যায়। রাস্তায় হাঁটতে ও গাড়িতে চলার সময় নিরাপত্তা, উঠতে, বসতে, চলতে-ফিরতে সব সময় চাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণে নিজের জিহবাকে সিক্ত রাখতে হবে। তারপরও কিছু সময় ও মুহূর্ত আছে যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অধিক পরিমাণে দয়াপ্রবণ হন। যেমন, ইফতার পূর্বমুহূর্তে বান্দার তার রবের কাছে চাওয়া, শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাযে বিশেষ করে বান্দাহ যখন সেজদায় লুটিয়ে পড়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া। হাদিসের ভাষায় বলা হয়েছে, বান্দাহ যখন সেজদায় যায় তখন আল্লাহর খুব নিকটবর্তী হয়ে পড়ে।
বান্দার দুআ আল্লাহপাক তিনটি পর্যায়ে পূরণ করেন। এক. তাৎক্ষণিক, দুই. পরবর্তীতে যখন তিনি প্রয়োজন মনে করেন, তিন. আখিরাতে প্রদানের জন্য জমা করে রাখেন। বান্দার জন্য যেটি কল্যাণকর হবে আল্লাহ সেটিই করেন। বান্দাহ আল্লাহর কাছে চাইবে এবং এই চাওয়ার মাঝ দিয়ে বান্দাহ আল্লাহর বড়ত্ব ও নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। বান্দার মধ্যে বিনয় আল্লাহর খুব পছন্দ। মানুষের কাছে চাইতে প্রার্থী লজ্জিত হয় এবং যার কাছে চাওয়া হয় তিনি হন বিরক্ত। কিন্তু আল্লাহর কাছে চাওয়াতে বান্দাহ নিজের মধ্যে স্বস্তি, আনন্দ ও তৃপ্তি অনুভব করে এবং আল্লাহও খুশি হন। তাই বারবার ও বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে এবং চাইতে হবে এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যে আল্লাহ তা পূরণ করবেন। এ দুনিয়ায় বান্দার কোনো প্রার্থনা মঞ্জুর না হওয়ার অর্থ আল্লাহ শোনেননি, এমনটি নয়। বরং আখিরাতে যখন তার সম্মুখে প্রার্থনার বিনিময় পেশ করা হবে তখন বান্দাহ খুশি হয়ে বলে উঠবে দুনিয়ায় কিছুই না দিয়ে সবই যদি আজ এখানে পেতাম, কতই না ভালো হত।
আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য কোনো পথ অতিক্রম করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ বলেছেন, আমি বান্দার অতি নিকটে, যে ডাকে আমি তার ডাক শুনি ও জবাব দেই। আল্লাহপাক তাঁর দরজা সকল বান্দার জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন। কারো প্রতি কোনো শত্রুতা বা পক্ষপাতিত্ব নেই। যতো বড় পাপী-গুনাহগার হোক সে যদি ফিরে আসতে চায় ও ক্ষমা প্রার্থনা করে সে সুযোগ আল্লাহ রেখেছেন। বান্দার চাওয়ার বিনিময়ে তা কবুল করার প্রতিশ্রুতির সাথে আল্লাহর চাওয়া হলো বান্দাহ যেন তাঁর প্রতি ঈমান এনে বন্দেগীর জীবন শুরু করে। বান্দার প্রতি তাঁর এতো দয়া-অনুগ্রহের কথা তাঁর আত্মভোলা বান্দাদের শুনিয়ে দেয়ার জন্যও তিনি বলেছেন, যাতে তারা পাপ-পঙ্কিল পথ থেকে ফিরিয়ে এসে সত্য পথ গ্রহণ করে।
রহমতের ভান্ডার নিয়ে হাজির হওয়া রমযানের দশটি দিন আমাদের মাঝ থেকে অতিক্রম করে গেল। করোনা ভাইরাসের মতো মহামরির ছোবলে আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত জীবন যাপন করছি। ইতোমধ্যেই আড়াই লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে গেছে। কোনো জনপদের মানুষ যখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন আল্লাহপাক সাধারণত তাদের ওপর বালা-মুসিবত দেন না। বর্তমানে একযোগে সমগ্র বিশ্ববাসী আল্লাহপাক প্রদত্ত মুসিবতের মুখোমুখি। এই মুসিবত দিয়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সতর্ক করছেন। জুলুম-নির্যাতন ও সব ধরনের পাপাচার থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করে মানুষ যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারতো তাহলে হয়তো আল্লাহপাক দয়াপরবশ হয়ে তাঁর বান্দাদেরকে দ্রুতই হেফাজত করতেন। পবিত্র এই রমযান মাসে আমরা আল্লাহরই কাছে প্রত্যাবর্তন করছি। হে পরোয়ারদেগার! তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো।
Comments
Post a Comment