Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2020

আস্থা ও ধৈর্যশীলরাই সফল হন

মানুষ আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি, তাঁরই প্রতিনিধি। জ্ঞান, বুদ্ধি, যোগ্যতায় সকল সৃষ্টির সেরা। প্রত্যেকটি মানুষকে স্বতন্ত্র দৈহিক কাঠামো, মেধা ও অপার সম্ভাবনাসহ আল্লাহপাক পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। একজন মানুষের মাঝে যে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে সেটি তাকে বুঝতে হবে। আল্লাহতায়ালা এ দুনিয়াটিকে একটি নিয়মের উপর ভিত্তি করে পরিচালনা করছেন। এখানে যে শ্রম দিবে, প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাবে ও ধৈর্য অবলম্বন করবে অবশ্যই আল্লাহ তাকে সাফল্য দান করবেন। আমাদের সন্তানদের মাঝে হতাশা দানা বেধে উঠেছে। হতাশা তাদেরকেই স্পর্শ করে যারা অলশ ও কর্মবিমুখ। স্কুল জীবনে আমাদের ভাবসম্প্রসারণ/রচনা থাকতো ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’। পরিশ্রমী ব্যক্তি নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে জানে। জীবনে সাফল্য লাভ করতে চাইলে প্রথমেই থাকতে হবে নিজের উপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করার পর একজন তরুণকে বুঝতে হবে, তার যোগ্যতা ছিল বলেই সে এতদূর অগ্রসর হতে পেরেছে। আব্রাহিম লিংকন তার ছেলের শিক্ষককে লেখা চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘তাকে এ শিক্ষাও দেবেন- নিজের প্রতি তার যেন সুমহান আস্থা থাকে’। একটি শ্লোগান শুনি, ‘মা বলেছেন...

করোনা পরিস্থিতি : আমার পর্যবেক্ষণ

চীনের উহান শহরে ৩১ ডিসেম্বর দেখা দেয়া করোনায় এই পাঁচ মাসে সাড়ে তিন লক্ষ লোক প্রাণ হারালো এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ লক্ষ ছেড়ে গেছে। বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত এবং ১৮ মার্চ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া করোনায় ঝরে পড়লো পাঁচ শতাধিক প্রাণ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে ১ মে ছিল ৬ হাজার এবং গতকাল (২৫ মে) এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। এই করোনা মহামারি বিশেষ কোনো দেশ বা মহাদেশে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বিশ্বব্যাপী। আমরা জানছি, বিমানের কারণে দেশ-মহাদেশে এই করোনা দ্রুত ছড়িয়েছে। বিস্ময়কর হলো, চীনের উহান থেকে সাংহাই, বেইজিংসহ চীনের কোনো শহর বা জনপদ, আবার তার নিকটবর্তী ও বন্ধু রাষ্ট্র মিয়ানমার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান- যাদের সাথে চীনের ব্যবসায়িক লেনদেন ও যাতায়াত অনেক বেশি সেখানে করোনা প্রথমে ছড়ায়নি। আমাদের দেশে প্রচুর চীনা নাগরিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড ও শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত এবং চীনে আমাদের যাতায়াতও অনেক বেশি। অথচ করোনা প্রথম আঘাতটা হানলো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ সর্বক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার আমেরিকাসহ পারমানবিক শক্তিধর ইউরোপীয় দেশসমূহে। শিক্ষিতের হার শতভাগ, স্বা...

ঈদ মুবারক ! ঈদ মুবারক!! ঈদ মুবারক !!!

শেষ হলো দীর্ঘ একমাস ব্যাপী সিয়াম সাধনা। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে হাজারো শুকরিয়া যে তিনি দয়া করে আমাদেরকে শারীরিক সুস্থতাসহ রোযা আদায়ের তাওফিক দান করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ। রোযা শেষে উদিত হলো শাওয়ালের চাঁদ। আগামীকাল পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। করোনার কারণে এক ভিন্নতর পরিবেশে এবারে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। ঈদ প্রতি বছর মুসলিম ঐক্য ও সংহতির আহবান নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়। করোনার কারণে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানব সন্তান আমাদের মাঝখান থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। আমরা সবাই এক অজানা আশঙ্কায় আছি। জানি না আগামী রমযান ও ঈদ আমাদের ভাগ্যে রয়েছে কি না? আমরা কি ভুলে যেতে পারি না সব হিংসা-বিদ্বেষ এবং পারি না গড়ে তুলতে জাতীয় ঐক্য? হিংসুকের কোনো রোযা নেই, নেই ঈদ, নেই ভালো কাজের কোনো প্রতিদান। পরোয়ারদেগার! তোমার শেখানো ভাষায় বলি, তুমি আমাদেরকে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করো। হে রব! তুমি আমাদের নেতৃবৃন্দকে হিংসা-বিদ্বেষের উর্ধে উঠে দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করার তাওফিক দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের রোযা ও সব ধরনের নেক আমল কবুল করো এবং রোযার শিক্ষানুযায়ী বাকি জীবন তোমার নাফরমানি থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান কর...

ইসলামে বিনোদন

বিনোদন বলতে এমন কর্মকান্ড বোঝায় যা মানুষকে আনন্দ দেয়, অবসাদ দূর করে এবং সাময়িক হলেও উৎফুল্ল করে। কুরআন তেলাওয়াত, ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব, খেলাধুলা, ভ্রমণ, সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা, কৌতুক যা মানুষকে আনন্দ ও হাস্যরসের খোরাক যোগায় এমন সব কার্যক্রমকে আমরা বিনোদন বলতে পারি। মানুষের বয়স, রুচিবোধ, চিন্তা-চেতনা, পরিবেশ নানা বিষয় বিনোদনকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করে। সুমধুর আযান শুনে আমাদের এক কবি গেয়ে উঠলেন, ‘কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি, মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিলো কী সুমধুর’; আবার আর এক কবি বললেন, এ যেন বেশ্যাদের খদ্দের ডাকা আহবান (নাউজুবিল্লাহ)। একই আযানে কেউ আনন্দে উদ্বেলিত হচ্ছেন আবার কেউ বিরক্ত হচ্ছেন। বিনোদন মানুষের বিশ্বাস দ্বারা অনেকখানি প্রভাবিত। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ কিতাব আল কুরআন তার সাহিত্যিক মান ও ছন্দে অতুলনীয়। আল্লাহর রসুল (সা)-এর মুখনিঃসৃত তেলাওয়াত শুনে মানুষ আত্মহারা হয়ে পড়তো এবং অগণিত মানুষ তা মুখস্ত করে ফেলতো। এমন কী ইসলামের দুশমনরা গোপনে রসুলুল্লাহ (সা)-এর তেলাওয়াত শুনতো। সে সময় থেকে কুরআনের প্রতি আকর্ষণের কারণে অজস্র মানুষ কুরআন মুখস্ত করেছে এবং সেটি অব্যাহত আছে। ...

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য

ঈদ অর্থ আনন্দ উৎসব, আবার ঈদ অর্থ যা বারবার ফিরে আসে। ফিতর শব্দের অর্থ ভেঙ্গে দেয়া। রোযা ভাঙ্গাকে ইফতার বলা হয়। ঈদুল ফিতর অর্থ হলো রোযা ভাঙ্গার আনন্দ। দীর্ঘ এক মাস রোযা পালনের মধ্য দিয়ে মু’মিন জীবনে আসে ঈদের আনন্দ। এ যেন গুনাহ মাফের আনন্দ। পরিশুদ্ধির আনন্দ। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ঈদের দিন আল্লাহপাক রোযাদার সম্পর্কে ফেরেশতাদের কাছে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, যে গোলাম মনিবের হুকুম পালন তার ব্যাপারে মনিবের দায়িত্ব কী? ফেরেশতারা বলেন, গোলামকে পুরস্কৃত করা। আল্লাহ বলেন, আমি তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করছি’-বায়হাকি। অন্য হাদিসে এসেছে রোযাদাররা ঈদের নামায থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই ঘরে ফিরেন। রোযাদার সম্পর্কে হাদিসে অনেক শুভ সংবাদ রয়েছে। তার সকল গুনাহ মাফ, রাইয়ান দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ, রোযাদারের পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন ইত্যাদি। সাফল্যের সাথে রোযা পালনের ফলে ঈদের দিন রোযাদারের মধ্যে আলাদা এক আনন্দ বিরাজ করে। হিজরত করে মদীনায় আসার পর রসুলুল্লাহ (সা) মদীনাবাসীদের মাঝে দু’টি উৎসব লক্ষ্য করেন। উৎসব বলতে প্রচলিত অর্থে খেলাধুলা, গান-বাজনা, রঙ-তামাশা ইত্যাদি যা বোঝায়।...

ফিতরা ঈদের নামাযের পূর্বেই প্রদান করা আবশ্যক

রমযানের রোযার পরিশুদ্ধকরণ ও গরীব-দুখী মানুষকে ঈদের আনন্দে শরীক করানোর লক্ষ্যে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম ঈদের নামাযের ২/১ দিন পূর্বেই প্রদান করতেন। নামাযের ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে যেমন সহু সেজদা দিতে হয়, ফিতরাও তদ্রুপ। নামাযের পরে দিলে আর রোযার পরিশুদ্ধি হয় না, সেটি সাধারণ দান হয়ে যায়। তাই সবারই উচিত ঈদের জামাতের পূর্বেই ফিতরা আদায় করা। ফিতরা নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, স্বাধীন বা দাস সবার উপর ওয়াজিব। গৃহকর্তা সবার পক্ষ থেকে আদায় করবে। কেউ নিজে আদায় করলেও হবে। যার ঘরে একদিন ও একরাতের খাবারের উদ্বৃত্ত এক ছা পরিমাণ দ্রব্য বা অর্থ রয়েছে তার উপরই ফিতরা ওয়াজিব। এই মত ইমাম আবু হানিফা (রহ)ছাড়া বাকি তিন ইমামের। ইমাম আবু হানিফা (রহ)বলেন, ঈদের দিন যার নেছাব পরিমাণ সম্পদ আছে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব। যাকাত মালের উপর কিন্তু ফিতরা ব্যক্তির উপর। ধনী-দরিদ্র সবারই রোযার পরিশুদ্ধি দরকার। এই মতটি বেশি জোরালো। রসুলুল্লাহ (সা) ও খোলাফয়ে রাশেদীনের আমলে প্রচলিত খাদ্যশস্যের যে কোনো একটি দিয়ে জনপ্রতি এক ছা হিসাবে ফিতরা আদায় করা হত। হযরত আমির মুয়াবিয়া (রা)-এর শাসনামলে তিনি দেখেন যব, খেজুর ব...

এবারের ঈদের নামায

ঈদের নামায খোলা জায়গায় পড়াটাই সুন্নাত। রসুলুল্লাহ (সা) কাবা শরীফে নামায আদায় ছাড়া অন্যান্য স্থানে ঈদের নামায আদায়ের সময় খোলা ময়দানে চলে আসতেন। একবার বৃষ্টিজনিত কারণে তিনি মসজিদে নববীতে ঈদের নামায আদায় করেছিলেন। কোনো কারণে ঈদের জামাত ছুটে গেলে রসুলুল্লাহ (সা) বাসায় দু’রাকাত নামায পড়ে নেয়ার জন্য বলেছেন। তিনি বলেছেন : এটা আমাদের মুসলমানদের ঈদ। ইমাম বুখারি বলেছেন : ঈদের নামায ছুটে গেলে দু’রাকাত পড়ে নেবে। আতা বলেছেন : যখন ঈদের জামাত ছুটে যায়, তখন দু’রাকাত নামায পড়ে নেয়া উচিত। নারীরা ঈদগাহে না গিয়ে থাকলে বাসায় দু’রাকাত নামায পড়তে পারে। কোনো কারণে জামাতের সাথে পড়ার সুযোগ না হলে ঈদের নামায একাকী বা পরিবারের সদস্যদের সাথে আদায় রসুলুল্লাহ (সা) থেকে প্রমাণিত। ফিক্হুস্ সুন্নাহ (সাইয়্যেদ সাবেক) প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা ২৭৬। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে একত্রে সমাবেশ প্রতিহত করার জন্য জন্য চলছে লকডাউন। সরকারি ছুটি এবং অনেক শপিংমল, গণপরিবহন, রেল ও বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সবাইকে ঘরে অবস্থানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। শর্তাধীন মসজিদ খুলে দেয়া হয়েছে। ঈদগাহে নামায আদায় না করে মসজিদে সা...

রোযা ও সদাচরণ (রমযানের শিক্ষা ২৩)

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে যে রমযান আমাদের মাঝে এসেছিল তা বিদায়ের পথে। আমরা কতটুকু অর্জন করতে পারলাম তার হিসাব মেলানো দরকার। আমাদের পাপরাশি মিটিয়ে দেয়া ও নেকির পাল্লা ভারি করা ও জীবনাচার পরিশুদ্ধ করার এক অপূর্ব সুযোগ নিয়ে এসেছিল এই রমযান ও রোযা। রোযা সব পাপাচার থেকে আমাদেরকে হেফাজত করবে। সে শক্তি রোযার ছিল। রোযা তো এজন্যই ফরজ করা হয়েছে যাতে মানুষের মাঝে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়। আল্লাহর ভয়ই পারে মানুষকে পাপাচার থেকে দূরে রাখতে ও আল্লাহর বিধান মেনে চলার শক্তি যোগাতে। কত চমৎকারভাবেই না রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘রোযা একটি ঢাল। তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখবে, তখন সে যেন অশ্লীল কথা না বলে ও অভদ্র আচরণ না করে। কেউ যদি তার সাথে মারামারি বা গালাগালি করতে আসে তবে সে যেন দু’বার বলে আমি রোযাদার’- বুখারি ও আবু দাউদ। ঢাল তো তাই যা যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর আক্রমণ থেকে একজনকে রক্ষা করে। রোযাকে ঢাল হিসেবে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে রসুল (সা) রোযার কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করেছেন। রোযা রাখার মাধ্যমে একজন রোযাদারের উপলব্ধি তো এটিই, সে আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে নয় এবং সে যদি গোপনে পানাহার বা যৌন চাহিদা পূরণ করে তা...

যাকাতের তাৎপর্য ও গুরুত্ব

যাকাত কী? ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হলো যাকাত। মূলত নামাযের পরই যাকাতের স্থান। ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয় যেমন নামায তেমনি যাকাতের অবস্থানও তাই। আল্লাহপাক একই সঙ্গে নামায ও যাকাতকে ফরজ করেছেন। তাঁর বাণী, ‘আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো, যাকাত আদায় করো এবং যারা আমার সামনে অবনত হয় তাদের সাথে তোমরাও আমার আনুগত্য স্বীকার করো’-আল বাকারা: ৪৩। কালেমা তাইয়্যেবা ঘোষণার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ঈমান আনে। ঈমান আনার পর ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশের জন্য তাকে নামায আদায়ের সাথে সাথে যাকাত প্রদানেরও ঘোষণা প্রদান করতে হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘যদি তারা তাওবা করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত আদায় করে, তাহলে তারা হবে তোমাদের দ্বীনি ভাই’-আত্ তাওবা: ১১। যাকাত আদায় না করাকে কাফিরদের কাজ বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘তারা যাকাত দেয় না এবং তারা পরকালের ওপরও ঈমান আনে না’-হামীম আস্ সাজদা ৭। একজন ব্যক্তির মুসলমান দাবী করার জন্য নামায যেমন অপরিহার্য শর্ত, তেমনি একজন সচ্ছল (নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী) ব্যক্তির জন্য নামাযের সাথে সাথে যাকাতও অপরিহার্য। ইসলামী পরিভাষায় নেছাব পরিমাণ সম্পদের ...

লাইলাতুল ক্বদরের তাৎপর্য

লাইলাতুল ক্বদর অর্থ মহাসম্মানিত রাত, সৌভাগ্যের রাত এবং ভাগ্যোন্নয়নের রাত। সকল অর্থই এখানে প্রযোজ্য। এ রাতের মর্যাদা প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’। সূরা দুখানে বলা হয়েছে, ‘এ রজনীতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে বিজ্ঞোচিত ফয়সালা করা হয়’। সূরা ক্বদরে আরো বলা হয়েছে, ‘ফেরেশতা ও রুহ এ রাত্রিতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন। সে রাত্রি পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার-ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত’। বুখারি ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত্রিতে ঈমানের সাথে শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হবে আল্লাহ তার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দিবেন’। উপরে কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতির আলোকে আমরা সহজেই লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। প্রশ্ন জাগে-কেন এ গুরুত্ব? জবাবও আল্লাহ দিয়েছেন-‘নিশ্চয়ই আমি ইহা (কুরআন) ক্বদরের রাত্রিতে নাজিল করেছি’। রমযানের রোযা ফরজ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘রমযান মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হেদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন উপদেশাবলীত...

আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার এটিই সুযোগ (রমযানের শিক্ষা ২২)

আমরা এখন রয়েছি রমযানের শেষ দশকে। এই দশকেই রয়েছে মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর, যার মর্যাদা আল্লাহর ভাষায় হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। জিবরাইল (আ) ফেরেশতামন্ডলিকে সাথে করে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ফজরের উদয় পর্যন্ত থাকে রাতটি শান্তিময়। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে উদার হস্তে দিতে চান। শুধু চেয়ে নেয়ার দরকার। বান্দাকে শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহ কখনো বাহানা তালাশ করবেন না, বরং ক্ষমা করার জন্য উপায় তালাশ করবেন। ক্ষমা প্রাপ্তির বড় সুযোগটি আসে তাওবা (গুনাহ থেকে ফিরে আসা) ও এস্তেগফারের (ক্ষমা চাওয়া) মাধ্যমে। হতাশ হবার কিছু নেই। গুনাহের পাল্লা যতই ভারি হোক, বান্দাহ যদি তাওবা করে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে পূর্বের অপরাধের জন্য বান্দাহ আর শাস্তিযোগ্য থাকে না। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বান্দার ঈমান। ঈমান পরিশুদ্ধ হতে হবে। আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ এবং ইসলামকে একমাত্র দ্বীন (ধর্ম) হিসেবে মেনে সকল ব্যবস্থাপনাকে অস্বীকার করার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ। বান্দার কাছ থেকে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন কখনই আল্লাহ কবুল করবেন না। আল্লাহর বাণী, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন ...

৯৭ সূরা ক্বদর (মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৫)

بِّسْمِ اللَّـهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ﴿١﴾ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ﴿٢﴾ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿٣﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ ﴿٤﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿٥﴾ রহমান রহীম আল্লাহতায়ালার নামে- ১. আমি এটি (কুরআন) নাযিল করেছি কদরের রাতে। ২. তুমি কি জানো কদরের রাত কী? ৩. কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। ৪. ফেরেশতারা ও রুহ তাদের রবের সব ধরনের আদেশ নিয়ে (জমিনে) অবতরণ করে। ৫. এ রাতটি ফজরের উদয় পর্যন্ত পুরোপুরি শান্তিময়। নামকরণ : প্রথম আয়াতের কদর শব্দটিকে নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। নাযিলের সময়কাল ও বিষয়বস্তু : মক্কী সূরা। কিছুটা মতপার্থক্য থাকলেও বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভঙ্গি দৃষ্টিতে মক্কী সূরা বলেই প্রতীয়মান হয়। সূরাসমূহের বিন্যাসের ক্ষেত্রে সূরা আল আলাক্বের পরেই এই সূরাটিকে স্থান দেয়াতে মনে হয় মক্কীযুগের প্রাথমিক দিকেই সূরাটি অবতীর্ণ। রসুল (সা)-এর ওপর অবতীর্ণ এ কুরআনকে মক্কাবাসীরা...

রোযা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম

  ‘ রমযান মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হেদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। অতএব এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে তার জন্য পূর্ণ মাস রোযা রাখা অপরিহার্য। আর যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনগুলোয় রোযার সংখ্যা পূর্ণ করে। আল্লাহ তোমাদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করতে চান, কঠোর হতে চান না। তাই তোমাদেরকে এ পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে হেদায়াত দান করেছেন সেজন্য তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার স্বীকৃতি দিতে পারো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও ’ - সূরা আল বাকারা ১৮৫-১৮৬। এখানে স্পষ্ট, রমযান মাসের এতো ফজিলত ও মর্তবার পেছনে কারণ একটিই এবং তা হলো এই মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য সেরা উপহার। আর কুরআনকে পাঠানো হয়েছে মানবজাতির হেদায়াত (পথপ্রদর্শন) হিসেবে; কুরআনকে মেনে চলার মত যোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই রোযা ফরজ করা হয়েছে। কুরআনকে বাদ দিয়ে রমযানের কোনো আলাদা মর্যাদা নেই বা এ মা...

দুর্নীতি রোধে রোযা ও কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা

দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। একজন গরীব দুধবিক্রেতা সুযোগ পেলেই তার দুধে পানি মেশাচ্ছে, মাছবিক্রেতা পচা মাছটি ভালো মাছ বলে বিক্রি করছে বা ওজনে কম দিচ্ছে, ফলবিক্রেতা ফরমালিন মেশাচ্ছে বা ক্রেতার অজ্ঞাতসারে পচা ফলটা দিয়ে দিচ্ছে। আর বড় বড় রাঘব-বোয়ালদের চুরি তো রয়েছেই। সেটি পুকুর চুরি নয়, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর ভাষায় সাগর চুরি। রাজনীতিক, সরকারি আমলা, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক কেউ দুর্নীতির উর্ধে নয়। রমযান মাস ও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ত্রাণ চুরির অভিযোগে অনেক জনপ্রতিনিধিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ আমরা শুনি, বিশ্বের সবচেয়ে ধর্মভীরু দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এটি কি তারই প্রমাণ বহন করে? এদেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ মুসলমান। পবিত্র রমযান মাসে হাতে গোনা ২/১ জন বাদে সবাই রোযা রাখে। করোনার এই লকডাউনে মসজিদ খুলে দেয়ার আকুতিও কম নয়। তাহলে আমাদের নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত কি কোনোই মূল্য বহন করে না। আল্লাহপাক আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁরই গোলামী করার জন্য এবং এই গোলামী করার ক্ষেত্রে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। তাঁর দাবী, ‘ আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো ’ -সূরা নহল...