বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ শুরুতে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুলুল্লাহ সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। গত জুমায় খতিব মহোদয় হালাল উপার্জন প্রসঙ্গে পুরো সময়টি আলোচনা করেন এবং আজকে তিনি ঘুষের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, বর্তমান সমাজে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, হিংসা-বিদ্বেষ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে কাজ না হওয়া, সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে হয়রানি ও সরকারি অবকাঠামো দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ ঘুষের লেনদেন।
বাংলাদেশে ঘুষ মহামারির আকার ধারণ করেছে। কোনো এলাকায় মহামারি দেখা গেলে সেখানে অবস্থানরত সবারই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে মহামারি আক্রান্ত এলাকা থেকে পালানোর চেষ্টা করে বা প্রতিরোধ বা প্রতিষেধকমূলক নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। রোগ-ব্যাধির মহামারি মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় পক্ষান্তরে ঘুষের মতো মহামারি মানুষকে নিশ্চিত জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। এদেশে শতকরা ৯০ জন মানুষ মুসলমান এবং অনেকে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, জাকাত দেয় এবং হজ ও ওমরাহ পালন করে। এই মুসলমানদের বিরুদ্ধেই ঘুষের অভিযোগ উঠে। বর্তমানে ঘুষ যে সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে তাতে সরকারি অফিস-আদালত ও প্রতিষ্ঠান খুব কমই রয়েছে যারা ঘুষ থেকে পুরোপুরি মুক্ত। বরং অধিকাংশের যুক্তি সবাই ঘুষ নিচ্ছে আমি একটু নিলে সমস্যা কী? তাদের ধারণা সবাই ঘুষ ছাড়লে তারাও ছাড়বে। অথচ রোগব্যাধির মহামারি থেকে সবাই নিজে আগে বাঁচতে চায়। কপালপোড়া এই মুসলমানরা! রোগব্যাধি থেকে বাঁচার গুরুত্ব বুঝলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার গুরুত্ব অনুভব করছে না। ঈমান আর আজ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ঘুষের আদান-প্রদানের ফলে আমরা প্রত্যেকেই প্রতারিত হচ্ছি। অফিসে বসে একজন সেবাকারী সেবা গ্রহণকারীকে ঘুষের মাধ্যমে সেবা দান করছে আবার সেই যখন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছে সে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালের কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করছে। ঠিকাদারের কাছ থেকে একজন প্রকৌশলী ঘুষ খাওয়ার কারণে রাস্তাঘাট ও বিল্ডিং দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং তা সহজেই ধ্বসে পড়ছে। এতে জাতির সামগ্রিক ক্ষতি হচ্ছে।
ঘুষের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেককে ঠকাচ্ছি। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবন উভয় ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ঘুষের বিনিময়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। অবৈধ সম্পদের যারা পাহাড় গড়েছে তারা কি আসলে সুখী? জীবনে সুখ-শান্তি দানের ক্ষমতা কেবল আল্লাহর। আপনারা যদি অনুসন্ধান করেন তাহলে দেখবেন অবৈধ উপার্জনকারীদের জীবনে সুখ নেই। দুনিয়ার জীবনে নানাবিধ রোগব্যাধি, পারিবারিক অশান্তি, সন্তানের মাদকাসক্ত হওয়া আবার সম্পদ চুরি ধরা পড়ার ভয় নানাভাবে তারা পেরেশানির মধ্যে জীবন কাটায়। দুনিয়ায় বিপদাপদ ভালো মানুষের জীবনেও আসে কিন্তু সে সেটা পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য অবলম্বন করে। পক্ষান্তরে ঘুষখোরের জন্য আসে শাস্তি হিসেবে। সম্প্রতি দেশের পরিবর্তনের ফলে অবৈধ উপার্জনকারী সম্পদশালীদের জীবন বড়ো দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
ঘুষ প্রসঙ্গে খতিব মহোদয় দুটি হাদিস উল্লেখ করেন। তার একটি হলো ঘুষের দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি। এখানে রসুলুল্লাহ সা. শর্তহীন কথাটা বলেছেন। অর্থাৎ সে যদি নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, জাকাত দেয়, হজ পালন করে এবং মসজিদ-মাদ্রাসা তৈরী করে তবুও ঘুষের লেনদেনকারী দোযখে যাবে। গত জুমায় তিনি বিস্তারিত বলেছেন যে, অবৈধ উপার্জনে গঠিত শরীর আল্লাহর ইবাদতের জন্য একেবারেই অনুপযোগী এবং জাহান্নামের লাকড়ি বৈ আর কিছু নয়। আর একটি হাদিস খতিব মহোদয় বললেন, যারা ঘুষের লেনদেন করবে রসুলুল্লাহ সা. তাদের প্রতি লানত অভিশম্পাত করেছেন। সাধারণত তিনি তাঁর শত্রুদের প্রতিও অভিশাপ দেননি। কিন্তু ঘুষের লেনদেনকারী এতো ঘৃণিত যে, দয়ার নবি রহমাতুল্লিল আলামিন নরপশুদের নিজ থেকে অভিশাপ দান করেছেন। এ থেকে ঘুষের আদান-প্রদানের ভয়াবহতা আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি। মূলত তওবা ছাড়া জাহান্নামই তাদের ঠিকানা।
এখন প্রশ্ন, ঘুষের গুনাহ থেকে বাঁচার কোনো উপায় আছে কি? আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের হতাশ হতে না করেছেন। সহজ উপায় হলো, মজলুমের পাওনা ফেরৎ দিয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং মজলুমের জন্য দোয়া করা। আর মজলুমকে চিহ্নিত করা কঠিন হলে এবং সংখ্যা অনেক হলে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া মোটামুটি একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে মজলুমের মাগফেরাত কামনা করে দান করে দেয়া। তাদের উদ্দেশ্যে সদকা অব্যাহত রাখা এবং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা ও মজলুমের জন্য ক্রমাগত দোয়া করা। আশা করা যায় আল্লাহপাক তাঁর বান্দার তওবা কবুল করবেন।
Comments
Post a Comment