সমালোচনা সবসময় খারাপ নয়। সমালোচনা চলার পথে মানুষকে সতর্ক করে। সাধারণত যারা খুব নিন্দিত, ঘৃণিত মানুষ তাদেরই বেশি সমালোচনা করে এবং সেটি তাদের প্রাপ্য। আবার আদর্শিক কারণে যাকে পছন্দ করা হয় না তাঁরও সমালোচনা হয়। পৃথিবীর সর্বোত্তম মানুষটি সর্বাধিক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। মুহাম্মদ সা. ছিলেন মানবীয় সকল গুণাবলীতে ভূষিত। সততা, বিশ্বস্ততা, প্রতিশ্রুতি পালন, পরোপকারিতা সকল সৎ গুণাবলীর কারণে সমাজের মানুষ তাঁকে আল আমিন ও আস সাদিক ডাকতেন। সুদীর্ঘ চল্লিশটি বছর তিনি তাঁর সমাজে বসবাস করেছেন; কোনো অভিযোগ ছিল না কিন্তু যখনই মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান জানিয়েছেন তখনই বিরোধিতা শুরু হয়। তিনি যা নন তাঁকে তাই বলা হতো। আল্লাহপাক নিজেই তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এই বলে, ‘আমি জানি, লোকেরা যা বলে তাতে তোমার বড়োই মনোকষ্ট হয় কিন্তু এই জালেমরা তোমাকে নয়, তারা আল্লাহর নিদর্শন মানতেই অস্বীকার করে’- সুরা আনয়াম ৩৩।
সাংবাদিক নেতা স্বৈরাচারের আতঙ্ক বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মরহুম রুহুল আমিন গাজীর জানাজা উপলক্ষে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জনাব নাহিদ ইসলাম এবং বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়েছিলেন। জানাজায় ইমামতি করেন আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। এই জানাজায় দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল। বৃষ্টিজনিত কারণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় একটু বিলম্বে। ভিআইপি লাউঞ্জে আমিরে জামায়াতকে বসানো হলে কয়েকজন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আমিরে জামায়াতের দিকে এগিয়ে আসলে জামায়াতের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সৌজন্যের খাতিরে আমিরে জামায়াতের পাশে তাঁদের জায়গা করে দেন। একসময়ে যারা জামায়াত নেতৃবৃন্দের ছায়া মাড়াতে রাজি ছিল না বর্তমানে আল্লাহপাকের মেহেরবানিতে তারা আমিরে জামায়াতের পাশে বসে কৃতার্থ হতে চান। এটি আল্লাহপাকের একটি বড়ো অনুগ্রহ। এই একত্রে বসাটা পূর্বনির্ধারিত জামায়াতের কোনো প্রোগ্রাম ছিল না বা আওয়ামী লীগের কোনো প্রোগ্রামেও জামায়াতের আমিরকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। এমন আচরণে স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের গন্ধ খোঁজার কিছু দেখি না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এদেশে হিংসা- বিদ্বেষের যে চাষ করেছে তা থেকে বের হয়ে আসা বড়ো কঠিন।
আমাদের রাজনীতিতে একটি অনুদার মন- মাননিকতা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। নেলসন মেন্ডেলেরা পারেন যিনি ত্রিশটি বছর শ্বেতাঙ্গদের জেলখানায় কাটানো সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে বলতে, ‘আমরা সবাই আফ্রিকান, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বলে কিছু নেই।’ এই উদারতা ও ক্ষমাশীলতার গুণেই তিনি হয়ে পড়েন বিশ্বনন্দিত নেতা ও নোবেল বিজয়ী। তাঁর উদারতা ও ক্ষমাশীলতার অনেক গল্প শুনেছি। যারা গণহত্যা চালিয়েছে এবং ইন্ধন জুগিয়েছে সরকার তাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সৃষ্ট মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার করবে এবং ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অপরাধীদের বিচার আমিরে জামায়াতও চান এবং সমগ্র জাতিও চায়। আওয়ামী লীগ যে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ও বাড়িঘর জালিয়েছে প্রতিশোধ হিসেবে সেটা করা সম্ভব নয়। আর এমন হলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। ফলে দল হিসেবে আমিরে জামায়াতের ক্ষমা ঘোষণা যৌক্তিক। অপরাধের শাস্তি দেবে সরকার। ঢাবি, জাবিসহ কিছু স্থানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে পিনাকী দাদা কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন। নিন্দা জানানোটা ইনসাফেরই দাবি।
আমাদের দেশে রাজনীতিসহ সকল অঙ্গনে হিংসা-বিদ্বেষের চাষ হয় এবং স্বৈরাচার হাসিনা সরকার ও তাদের মদদপুষ্ট বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ জাতিকে বিভক্ত করে রেখেছিল। জুলাই- আগস্টের গণবিপ্লব বৈষম্যের কবর রচনা করেছে। পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করো- এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা এখনো সম্ভব হয়নি। মনমানসিকতা গড়ে তোলার জন্য সময় লাগবে। এটি দূর করার উপায় ও ক্ষমতা রয়েছে জামায়াত-শিবির ও ইসলামী দল এবং উদারমনা রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের। আল্লাহপাকের মেহেরবানী যে আমিরে জামায়াত অপেক্ষাকৃত নম্র প্রকৃতির এবং খুবই সহনশীল, ক্ষমাশীল ও উদারমনা। হ্যাঁ, উনি যেটা করেন সেটি কুরআন-হাদিসের হেদায়াত অনুসারেই করেন। আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা.-এর অভিপ্রায় হলো হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিশোধ নয় সমাজে ক্ষমা ও উদারতার চর্চা করা। আল্লাহর বাণীগুলো একটু লক্ষ করুন, ‘অন্যায়ের প্রতিবিধান সমপরিমাণ অন্যায়, কিন্তু কেহ যদি ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়। আল্লাহ জালেমদের পছন্দ করেন না’- সুরা শূরা ৪০। বদলা নেয়ার সুযোগ লাভের পরও কেহ যদি ক্ষমা করে দেয় তাহলে তার প্রতিদানের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহপাক গ্রহণ করেছেন। নবিকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেছেন, ‘ভালো ও মন্দ কখনো এক নয়। তুমি মন্দকে দূর করো সেই ভালো দ্বারা যা অতীবও উত্তম; তাহলে দেখবে জানের দুশমনরা প্রাণের বন্ধু হয়ে গেছে’- সুরা হামিম আস সেজদা ৩৪। আমরা সুরা ইয়াসিনে পড়েছি, একটি লোকালয়ে তিন তিনজন রসুলের আগমন ঘটেছিল। তাঁদের দীর্ঘ চেষ্টা-প্রচেষ্টায় একজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণ করেই ছুটে আসে জাতির কাছে এবং বলেন, ‘হে জাতির লোকেরা তোমরা রসুলদের আনুগত্য করো যারা কোনো বিনিময় চান না এবং যারা হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত’- সুরা ইয়াসিন ২০-২১। কিন্তু সেই হতভাগা জাতি তাদের দরদী লোকটিকে হত্যা করে। আল্লাহপাক তাঁর সেই বান্দার মুখ থেকে আমাদের শুনিয়েছেন, ‘হায়! আমার জাতির লোকেরা যদি বুঝতো কীসের বদৌলতে আমার রব আমাকে ক্ষমা করলেন ও সম্মানিত লোকদের মধ্যে গণ্য করলেন’- সুরা ইয়াসিন ২৭। কী আশ্চর্য! মৃত্যুর মুহূর্তেও একজন ব্যক্তি তাঁর হন্তাদের জন্য কোনো বদদোয়া নয়, অভিশাপ নয় বরং হেদায়াত চাচ্ছেন। যদিও আল্লাহপাক সেই জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
ঈমানদার বান্দাগণ আল্লাহর সাহায্যকারী, বড়ো প্রিয়। তাদের বিরোধিতা ও তাদের প্রতি জুলুম মূলত আল্লাহর সাথেই বিরোধিতা। জালেমের জুলুমের বদলা সাধারণত আল্লাহ নিজেই গ্রহণ করেন আবার কখনো কখনো তাঁর বান্দাদের মাধ্যমেও নেন। সর্বোপরি আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই। সীমালঙ্ঘনের কারণে নমরুদ, ফেরাউন, শাদ্দাদ, কারূণ প্রমুখের শাস্তি আল্লাহ নিজেই দান করেছেন। আবার আবু জেহেল-আবু লাহাবদের শাস্তি আল্লাহপাক মুহাম্মদ সা.-এর মাধ্যমে দিয়েছেন। কাফেরদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ সা.-এর বিজয়কে আল্লাহপাক তাঁর সাহায্য বলে উল্লেখ করে প্রিয়তম নবি সা.-কে বেশি বেশি করে আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। এ নির্দেশনা কিয়ামত পর্যন্ত সকল ঈমানদারদের জন্য যাতে বিজয় লাভের পর অহঙ্কারী ও নিজেরাই জালেম না হয়ে পড়ে। যখন জালেম সীমালঙ্ঘন করে এবং মজলুম প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে পড়ে মজলুমের পক্ষাবলম্বন করা। তাঁর বাণী, ‘আমি সংকল্প করেছিলাম, যাদেরকে পৃথিবীতে লাঞ্ছিত করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবো, তাদেরকে নেতৃত্ব দান করবো, তাদেরকে উত্তরাধিকার করবো এবং পৃথিবীতে তাদেরকে কর্তৃত্ব দান করবো’- সুরা কাাসাস ৫-৬।
শেখ হাসিনা জুলুম-নির্যাতনের সকল সীমালঙ্ঘন করে দেশটাকে এক বধ্যভূমি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। ভূয়া নির্বাচন ও শক্তিপ্রয়োগ করে বিরোধী দলের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম বিশেষ করে ৫ই মে হেফাজতের মহাসমাবেশ ও ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশ নস্যাৎ করে স্বৈরশাসনকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ ও যারা অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখার মূল কারিগর সেই জেনারেল আজিজ, বেনজির, মতিউর প্রমুখের দুর্নীতি একে একে প্রকাশ হতে শুরু করে। শেখ হাসিনা নিজেই বলেন, আমার পিয়নও চারশো কোটি টাকার মালিক। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে পিয়ন চারশো কোটি টাকার মালিক হলে তিনি কতো? সেই দুর্নীতি থেকে দৃষ্টি ফেরানোর লক্ষ্যে আদালতের মাধ্যমে কোটা পুনর্বহালের ঘোষণা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ ও পুলিশকে দিয়ে আন্দোলন দমন করতে গিয়ে তা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকারের সকল শক্তি তার নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও ছাত্র-জনতার আন্দোলন সরকার পতনের একদফায় রূপ লাভ করে এবং শেখ হাসিনা ৫ই আগস্ট ভারতে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পায়। সুরা কাসাসে আল্লাহপাকের সেই ওয়াদা সত্যে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছাত্র- জনতার গণজাগরণে রূপ লাভ করে। এ যেন সুরা ফিলে বর্ণিত আবরাহার হস্তিবাহিনী কর্তৃক কাবা ঘর ধ্বংস করতে এসে আল্লাহপাক কর্তৃক আবাবিলের পাথরকুচি নিক্ষেপ করে বিশাল হস্তিবাহিনীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়ার শামিল। আল্লাহু আকবার।
আল্লাহপাকের ধরা বড়ো শক্ত। শেখ হাসিনার সকল দর্প ধ্বংস হয়ে যায়। ‘শেখ হাসিনা পালায় না’- তিনি তাঁর ঘোষণায় স্থির থাকতে পারেননি। তাঁর বিশাল কর্মীবাহিনীকে ফেলে নিজের বোনকে সাথে নিয়ে তিনি পালিয়ে বাঁচেন। অনেকে বলেন, স্বৈরাচারের তো শাস্তি হলো না। কী দুর্ভাগ্য? আমাদের উপলব্ধি কতো সংকীর্ণ? আল্লাহর ঘোষণা ‘নির্যাতিতদের নেতৃত্ব দান করবো, তাদের উত্তরাধিকার করবো এবং পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করবো’- আজ জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের কর্তৃত্ব-এর চেয়ে বড়ো প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? যে জমিন ছিল মজলুমের জন্য সংকীর্ণ, পালিয়ে বেড়িয়েছে আজ সেখানে জালেমের জন্য জমিন সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং জালেম পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সর্বত্রই ছিল পিতার প্রশংসা। আজ পিতার মূর্তি একে একে ধ্বসে পড়েছে। গণভবন যেটা ছিল স্বৈরশাসনের কেন্দ্র জনতা সেটার ইটগুলো পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে। আগামীতে তার স্বৈরশাসনের ক্ষতচিহ্ন ও আন্দোলন-সংগ্রামের স্মারক হিসেবে গণভবন যাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত হতে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার জন্য এ কষ্ট সহ্য করা সহজ নয়। ফলে আন্দোলন-সংগ্রামকারীদের অস্থির ও প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে সরকারের উপর আস্থা রেখে পরম ধৈর্য অবলম্বন করা দরকার। সর্বোপরি আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই। আখেরাতে মহান আল্লাহপাকের দরবারে স্বৈরাচার ও তার দোসর সকল সহযোগী হতদরিদ্র হয়ে উত্থিত হবে। এতো ব্যাংক- ব্যালেন্স, সোনা-রূপা, জায়গা-জমি, লোকবল ও ক্ষমতা কোনো কাজে আসবে না। বরং যদি কোনো নেকি থেকে থাকে তা বদলা হিসেবে মজলুমকে দেয়ার পর জালেম নিঃস্ব হয়ে পড়বে এবং মজলুমের গুনাহ জালেমকে দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অসংখ্য নেয়ামতেভরা জান্নাতে জালেমের কোনো ঠাঁই নেই।
এবারের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন ও সকলের জন্য নিরাপদ একটি সমাজ গড়ে তোলা। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি মানবিক সমাজ যেখানে থাকবে মানুষের জান- মাল ও সম্মানের পূর্ণ নিরাপত্তা। থাকবে না হিংসা -বিদ্বেষ ও অপরকে হেয় করা বা অপদস্থ করার প্রবণতা। সমাজে খুনখারাবি, মারামারি ও হানাহানির বড়ো কারণ হিংসা-বিদ্বেষ। ধর্মপ্রাণ মানুষ মাত্রই হয় উদার ও হিংসা থেকে মুক্ত। দুর্ভাগ্য, আমাদের মটিভিশন হয় ধর্মকে বাদ দিয়ে। সমাজের নেতৃত্ব ধর্মবিমুখ স্বল্পসংখ্যক লোকের হাতে থাকায় সমাজের এই দুরবস্থা। অনৈতিক যতো কাজ- মিথ্যা বলা, খেয়ানত করা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা, চুরি-ডাকাতি-গুম-খুন, জেনা-ব্যাভিচার, মানুষের সঙ্গে অসদাচরণ সকল ধর্মেই হারাম। একজন ধার্মিক মুসলিম বা হিন্দু কেহই এসব ঘৃণ্য কাজ করতে পারে না। আমার দৃষ্টিতে দেশে এতো মারামারি-খুনোখুনি, জুলুম-নির্যাতন তার মূলে রয়েছে পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ। সমাজটাকে সবার জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য করতে হলে হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং বেরিয়ে আসার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা.-এর বিধান অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়।’ হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ শুধু কবিরা গুনাহ নয় বরং সেই সাথে পূর্বের জমা নেকিও নিঃশেষ করে দেয়। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করতে চান এবং করেনও। বিশেষ বিশেষ দিনে ও মুহূর্তে তিনি তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন কিন্তু সেই ক্ষমা থেকে বাদ পড়ে কেবল মুশরিক ও হিংসুক। হিংসা জঘন্যতম অপরাধ এবং কোনো হিংসুকের রোষানলে পড়লে মানুষ সর্বস্যহারা হয়ে যায়। তাই আল্লাহপাক সুরা ফালাকে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন।
আল্লাহপাক দয়া করে স্বৈরাচারের কবল থেকে আমাদের মুক্ত করেছেন। এজন্য তাঁরই দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং বলি ‘আলহামদু লিল্লাহ’। যাদের চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহপাকের এ দান তাদের জন্য কাতরভাবে দোয়া করি, মহান রব যেন তাদের আত্মত্যাগ কবুল করেন। আরো দোয়া করি, বৈষম্যহীন ও সকলের জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আল্লাহপাক আমাদের মাঝ থেকে সকল হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেন এবং ধর্ম-বর্ণ-ভাষা -লিঙ্গ ভেদাভেদ ভুলে সকলের প্রতি সহমর্মিতা দান করেন। আমিন। ৩০.০৯.২০২৪
Comments
Post a Comment