জুমার নামাজ আদায় করি নড়াইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। অনেক স্মৃতি। পুরাতন স্থাপনা ভেঙ্গে বর্তমান রূপ গ্রহণ করা যাদের হাত ধরে তন্মধ্যে অন্যতম সম্পাদক কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন ভাই, যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাই এবং আমি ছিলাম অর্থ সম্পাদক। আমরা সবাই ছিলাম মসজিদ মিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট। সেসময়ে মসজিদ পরিচালনার জন্য একটি গঠনতন্ত্রও প্রণয়ন করা হয়।
কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব মুফতি আশরাফ আলী মসজিদ মিশনের সভাপতি এবং আমি ছিলাম সম্পাদক। এই মসজিদ ছিল আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্র। খতিব মহোদয়ের জুমা বক্তৃতা ও মাগরিবে ধারাবাহিক তাফসির ক্লাস ছিল মুসল্লিদের জন্য আকর্ষণ। আমাদের সময়কালে কুরআন মজিদের তাফসির সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। ইমাম প্রশিক্ষণ, সেমিনার, বিভিন্ন মসজিদে তাফসির প্রোগ্রাম ও আলোচনা সভা এবং নানাবিধ অনুষ্ঠান লেগেই থাকতো। মিশনের প্রোগ্রামে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণ স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। আমি স্মরণ করছি জেলা জজ জনাব মাহবুবর রহমান, জনাব মাসদার হোসেন, জনাব আখতার উল আলম, জেলা প্রশাসক জনাব এ কে এম জাহাঙ্গীর, পুলিশ সুপার জনাব শেখ সাজ্জাত আলী প্রমুখকে। নড়াইল সদর থানা মসজিদের ইমাম ছিলেন মিশনের সদর উপজেলা সভাপতি মরহুম মাওলানা আব্দুর রহমান। থানা মসজিদে সাপ্তাহিক দরসুল কুরআন ক্লাস উদ্বোধন করেন সেসময়ের এসপি জনাব শেখ সাজ্জাত আলী এবং নিয়মিত দরস পেশ করতেন এসপি মহোদয়ের স্টেনোগ্রাফার জনাব মোনজেল মোরশেদ। নড়াইলে আমার অবস্থান ছিল আট বছর। সে সময়ে 'ইসলামী সমাজ গঠনে মসজিদের ভূমিকা' ও 'নড়াইলে ইসলাম প্রচার' তিনটি বই প্রকাশিত হয়। বইতে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের অবদান তুলে ধরা হয়।
শুক্রবার বাদ আসর এক সভায় মিলিত হয়ে নতুন-পুরাতন মিলে মসজিদ মিশনের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এই বিশ বছরে মসজিদ মিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট ২১ জন সঙ্গী-সাথি মহান রবের কাছে ফিরে গেছেন। মিটিংয়ে তাঁদের জন্য শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ও দোয়া করা হয়। যাঁরা বিদায় নিয়েছেন-
কমিটির সদস্যবৃন্দ :
১. মুফতি আশরাফ আলী
২. মাওলানা রশীদ আহমদ
৩. মাওলানা আব্দুর রহমান
৪. মাওলানা মাহবুবুর রহমান
৫. আলহাজ মো. লুৎফর রহমান
৬. মো. নূরুল হুদা
৭. কারী আতিয়ার রহমান
৮. আলহাজ নওশের আলী
৯. কারী শাহজাহান আলী
★ পৃষ্ঠপোষকবৃন্দ :
১. মাওলানা এ বি এম এ রব
২. এস এম নুরুজ্জামান
৩. আলহাজ আব্দুল জব্বার মিয়া
৪. সৈয়দ মাহমুদুর রহমান
৫. মো. জাহিদুল ইসলাম
৬. ডা. সৈয়দ লিয়াকত হোসেন
৭. আলহাজ মো. সিরাজুল ইসলাম
৮. অধ্যাপক মো. নূর হোসেন (নুরুজ্জামান)
৯. কারী শেখ আব্দুল ওহাব
১০. ফাররুখ আহমেদ
১২. মো. লুৎফর রহমান (লায়েক মিয়া)
নড়াইলে যাওয়ার মূল কারণ ছিল ২১ সেপ্টেম্বর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ। মিলনায়তন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। প্রধান অতিথি ছিলেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শহীদ লতিফ। তিনি আমার প্রাক্তন সহকর্মী। সেমিনারে পুরনো দিনের অনেকের সাথে দেখা হলো।
শনি ও রবিবার বেশ বেড়িয়েছি। দাওয়াতে খেয়েছি মরহুম মাওলানা আব্দুর রহমান ভাইয়ের বাসায়, আমার সহকর্মী ও অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ আব্দুর রউফ স্যার এবং গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া ভাইয়ের বাসায়। আমার স্ত্রীর বন্ধুদের প্রদত্ত সামষ্টিক ভোজেও শরীক হই। নড়াইলবাসীর আতিথেয়তা ও আন্তরিক ভালোবাসা ভুল হওয়ার নয়। আরো সাক্ষাৎ করেছি অসুস্থ জেলা আমির মাওলানা নুরুন্নবী জিহাদী ভাই , মো. মোনজেল মোরশেদ ভাই, কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন ভাই, শামসুজ্জামান ভাই, হাজি দেলোয়ার হোসেন ভাইয়ের সাথে তাঁদের বাড়িতে।
মাওলানা আশেক এলাহী ও বুলু আপা ঢাকা থেকে নড়াইলে ফিরে আসলে মেহমান হতে হয় তাঁদের বাসায়। সাক্ষাৎ হয় আমাদের সকলের মুরুব্বি রাহেলা আপার সাথে। নব্বই ঊর্ধ্বে বয়স কিন্তু তৎপরতায় ভাটা পড়েনি। তাঁর পরিবারে রয়েছে এগারো জন রুকন।
রবিবারে হাজির হই আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে। সেখানে আট বছর শিক্ষকতা করেছি। ছিলাম পরিষদ ও সমিতির সম্পাদক। অধ্যক্ষ মহোদয় ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মহোদয় আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎ হলো আমাদের সময়ের দু'জন সহকর্মী প্রফেসর অসীম কুমার সরকার (পদার্থবিজ্ঞান) এবং প্রফেসর হায়দার আলী দেওয়ান (গণিত) ও দুজন কর্মচারীর সাথে। গতকাল জনাব দেওয়ান প্রফেসর পদে পদোন্নতি লাভ করেছেন। আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া ও তাঁর প্রতি অভিনন্দন। সাথিদের খোঁজ করতে গিয়ে দেখলাম অনেকেই আল্লাহর দরবারে ফিরে গেছেন। তন্মধ্যে অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল গফুর, মঈন উদ্দিন স্যার, নুরুজ্জামান স্যার, আব্দুস সালাম স্যার, আবু হার মণ্ডল স্যার প্রমুখ। আমি স্যারদের মাগফেরাত কামনা করি।
পুরাতন সাথিদের সাথে আলকুবা স্কুলে সাক্ষাৎ হয় বাদ আসর। স্কুলের পাশাপাশি একটি আদর্শ হেফযখানা পরিচালিত হচ্ছে। নড়াইলে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে এখন একঝাঁক তরুণ। আতাউর রহমান বাচ্চু আমার ছাত্র বর্তমান জেলা আমির। কাজের অগ্রগতি বিবেচনায় সারা দেশে নড়াইল শীর্ষে। আলহামদু-লিল্লাহ। রাতে সাক্ষাৎ করলেন জেলা আমির ও জেলা সেক্রেটারি।
তিনটি দিন আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই বেশ কর্মতৎপর ছিলাম। ফেরার পথে মিশনের যুগ্ম সম্পাদক হাজি দেলোয়ার হোসেন ভাই বললেন, আমার গাড়িতে যাবেন। সেভাবে ঢাকা ফিরলাম। মালিকের মেহমান হিসেবে কাউন্টার থেকে শুরু করে ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেল্পার বেশ সম্মান দেখালেন। ঢাকায় পৌঁছার পর দেলোয়ার ভাই ফোন দিয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার পাশাপাশি বললেন, 'কিছু মনে না করলে নড়াইলে আসা- যাওয়া করলে আমার বাসে মেহমান হয়ে আসলে খুব খুশি হবো।'
নড়াইলে আমাদের ভ্রমণটা বেশ উপভোগ্য হলো।আলহামদু লিল্লাহ। নড়াইলবাসী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে শেষ করছি।
Comments
Post a Comment