Skip to main content

জুমার খুতবা ১৩.০৯.২০২৪

 


ঈদে মিলাদুন্নবি সা. উপলক্ষে বিশেষ কোনো ইবাদত নেই

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ শুরুতে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুলুল্লাহ সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। তিনি বলেন, এটি রবিউল আউয়াল মাস এবং এ মাসে আমাদের প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা. জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আগমন ছিল এক আলোকবর্তিকা যার ফলশ্রুতিতে পৃথিবী থেকে অন্ধকার দূরীভূত হয়েছে। আমরা সেই মহান নবি সা.-এর উম্মত হওয়ায় গর্বিত। তাই মহান রবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করি, আলহামদু লিল্লাহ। প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা.-এর জীবনাদর্শ আলোচনা করে কূল-কিনারা পাওয়া যাবে না। আমরা তাঁর জন্ম নিয়ে আজকে আলোচনা করবো ইন শা আল্লাহ।

মিলাদ শব্দের অর্থ জন্ম। মিলাদুন্নবি সা. অর্থ নবি সা.-এর জন্ম। রসুলুল্লাহ সা.-এর জন্মের সঠিক দিন তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। মোটামুটি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, তাঁর জন্ম হস্তিবর্ষে। অর্থাৎ যে বছরে ইয়ামেনের শাসক আবরাহা বিশাল হস্তিবাহিনী নিয়ে কাবা ধ্বংস করতে এসেছিল সে বছরে তাঁর জন্ম। আবরাহা হস্তির পিঠে চড়ে সেই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং বাহিনীতে বেশ কিছু হস্তি ছিল বলে সেই যুদ্ধকে হস্তির যুদ্ধ বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা সুরা ফীলে সেই কাহিনীর উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি হস্তি বাহিনীকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়ে তাঁর পবিত্র ঘর কাবাকে রক্ষা করেছেন। সেই হস্তিযুদ্ধের ৫০তম দিনে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে মুহাম্মদ সা. জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা।

মাসের ব্যাপারে মোটামুটি ঐকমত্য রয়েছে যে, তিনি রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তারিখের ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। কেহ বলেন ২রা রবিউল আওয়াল, কেহ ৮ই রবিউল আওয়াল, কেহ ১২ই রবিউল আওয়াল আবার কেহবা বলেন তাঁর জন্ম রবিউল আওয়াল মাস শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে। ইবনে কাসির রহ. তাঁর গবেষণায় বলেছেন ৮ই রবিউল আওয়াল মতটি বিশুদ্ধ কিন্তু এটি প্রসিদ্ধ নয়। প্রসিদ্ধ মতটি হলো ১২ই রবিউল আওয়াল কিন্তু অতটা বিশুদ্ধ নয়। এই মতপার্থক্যের কারণ হলো মুহাম্মাদ সা. তাঁর জীবদ্দশায় নিজে জন্মদিন পালন করেননি বা সাহাবায়ে কেরামও নবির জন্মদিন পালন করেননি। হিজরি চারশত বর্ষে একজন শাসক তার দরবারি আলেমের সহযোগিতায় প্রথম নবি সা.-এর জন্মদিন পালন শুরু করেন এবং এখনো তা চালু রয়েছে। আমাদের এই উপমহাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবি সা. উদযাপনের রেওয়াজটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। অবশ্য শিক্ষাদীক্ষা প্রসারের কারণে এর আবেদন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। মিলাদ অর্থ জন্ম এবং এটি নিঃসন্দেহে একটি আনন্দের বিষয়। ১২ই রবিউল আওয়াল রসুলুল্লাহ সা.-এর জন্মদিন হওয়ার সাথে সাথে মৃত্যু দিনও। মৃত্যুদিন নিশ্চয়ই উম্মাহর জন্য একটি শোকাবহ দিন। অথচ এই ঈদে মিলাদুন্নবি সা. উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা কেবল আনন্দ উৎসব পালন করে থাকি। এদেশের মানুষ সকল কাজেকর্মে মিলাদ দিয়ে থাকে। কারো জন্মদিনে মিলাদ, মৃত্যুদিনে মিলাদ, ছেলেমেয়ের ভালো রেজাল্টে মিলাদ, নতুন বাড়ি নির্মাণে মিলাদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধনে মিলাদ অর্থাৎ সকল কাজেকর্মে মিলাদ। বুঝে আসে না এসব কাজেকর্মে জন্মদিনের কী সম্পর্ক? বড়জোর বলা যেতে পারে, একটি দোয়ার আয়োজন।

রসুলুল্লাহ সা. জন্ম হয়েছিল সোমবার শুবহে সাদিকে। এব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই। কী-বারে তাঁর জন্ম সেটি তিনি নিজেই ব্যক্ত করেছেন। রসুলুল্লাহ সা. সোম ও বৃহস্পতিবার এবং মাসে তিনদিন সাধারণত রোজা রাখতেন। সোমবারে রোজা রাখা প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ সা. নিজেই বলেছেন, সোমবারে আমার জন্ম এবং এইদিনে রোজা রাখা আমি পছন্দ করি। এতে বোঝা যায়, এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন মহান আল্লাহপাকের এক দয়া ও অনুগ্রহ। তাই কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই জন্মদিনে রোজা রাখা, দান-খয়রাত করা বা কোনো ভালো কাজের মধ্য দিয়ে আল্লাহপাকের দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেতে পারে। জন্মদিন পালন মুসলিম সংস্কৃতির অংশ নয়। আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। সংক্ষেপিত।

শ্রুতিলিখন : প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে তাৎক্ষণিক লিখতে না পারায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

Comments