Skip to main content

জুমার খুতবা ২৫.১০.২০২৪ হালাল উপার্জন ইবাদতের পূর্বশর্ত

 


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ শুরুতে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুলুল্লাহ সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। হালাল উপার্জন প্রসঙ্গে খতিব মহোদয় বলেন, অন্যায় পথে আয় ও ব্যয় আল্লাহপাক হারাম করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কুরআন থেকে অনেকগুলো আয়াত উদ্ধৃত করেন-

‘হে মানবকূল! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’- সূরা বাকারা ১৬৮ নং আয়াত।

‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অবৈধ পদ্ধতিতে খেয়ো না এবং শাসকদের সামনেও এগুলোকে এমন কোনো উদ্দেশ্যে পেশ করো না যার ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে তোমরা অন্যের সম্পদের কিছু অংশ খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাও’- সূরা বাকারা ১৮৮ নং আয়াত।

‘হে মুমিনরা! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করো না, তবে পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ, তোমরা একে অন্যকে হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে এমন কাজ করলে তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, তা আল্লাহর পক্ষে সহজ’- সূরা নিসা আয়াত নং ২৯-৩০।

‘যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে তারা তাদের পেটে আগুণ ভক্ষণ করে এবং তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে’- সূরা নিসা আয়াত নং ১০।

ইসলামের মৌলিক ইবাদত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো হালাল উপার্জনও ফরজ এবং উপার্জনের সকল অবৈধ পথকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। সুদ, ঘুষ, ওজনে কম ও ভেজাল দেয়া, মিথ্যা কসম খেয়ে মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যসামগ্রী মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধি, সিন্ডিকেট করে মূল্যবৃদ্ধি, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, সবধরনের দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ সবই কবিরা গুনাহ এবং পরিণতি জাহান্নাম। এ জঘন্য অপরাধ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব তখনই যখন মজলুমের পাওনা পরিশোধ শেষে আল্লাহর কাছে তওবা করা হবে। আমাদের দেশে অফিস-আদালতে দুর্নীতি ব্যাপক রূপ লাভ করেছে এবং অনেকে দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। দুর্নীতির ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঘুষের দাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই রসুলুল্লাহ সা. জাহান্নামী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ঘুষ বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান বা কোনো জনহিতকর কাজে দান করলে তা আল্লাহর দরবারে গৃহিত হয় না। বরং আরো গুনাহ হয়। গুনাহ থেকে ফিরে আসতে চাইলে সংশ্লিষ্ট মজলুমকে খুঁজে বের করে তার প্রাপ্য ফেরত দিতে হবে। সম্ভব না হলে কোনো সওয়াবের আশা ছাড়া তার পক্ষে দান করতে হবে।

আমাদের সমাজে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ বলতে অনেক সময় খাবার গ্রহণে হালাল বস্তু খেতে হবে বুঝে থাকে। যারা বিদেশে যায় তারা হালাল খাবারের তালাশে অস্থির হয়ে পড়ে। হ্যাঁ, এটা উত্তম। তবে শুধু খাদ্য গ্রহণে নয় সকল ক্ষেত্রে রুজির বৈধতা খেয়াল করতে হবে। জনৈক মুসাফিরকে উস্কু-খুস্কু হয়ে আল্লাহর কাছে কাতরভাবে দোয়া করতে দেখে রসুলুল্লাহ সা. বলেন, তার দোয়া কবুল হবে কি? তার খাদ্যখানা হারাম, পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম-হারাম উপার্জনে গঠিত শরীর ও পোশাকে দোয়া কবুল হয় না। আমাদের দেশে চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে মানুষ অস্থির। চাঁদাবাজরা সুস্পষ্ট জালেম এবং তাদের সহযোগী ও সমর্থকরাও জালেম। জালেমদের পরিণতি জাহান্নাম বৈ আর কিছু নয়।

উপার্জনের পরিশুদ্ধতা ইবাদতের পূর্বশর্ত। কেহ যদি নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজের মতো ইবাদতের পাশাপাশি মানুষের প্রতি জুলুম করে তাহলে তাকে তার নামাজ-রোজা আখেরাতে পরিত্রাণ দেবে না। বরং রসুলুল্লাহ সা. এ ধরনের জালেমদের হতদরিদ্র বলে উল্লেখ করেছেন। প্রিয়তম নবি সা. তাঁর সাহাবিদের একদিন বলেন, তোমরা কি জানো হতদরিদ্র কে? স্বাভাবিকভাবে তাঁরা বলেন, যার স্বর্ণ-রৌপ্য বা দিনার-দিরহাম নেই। জবাবে তিনি বলেন, না, হতদরিদ্র সেই যার নামাজ-রোজার মতো ইবাদতের পাশাপাশি মানুষের প্রতি জুলুমের গুনাহ রয়েছে। কারণ কিয়ামতের দিন দিনার-দিরহাম থাকবে না। সেদিন মজলুমের পাওনা পরিশোধ করা হবে জালেমের নেকি দ্বারা এবং একসময় জালেম নিঃস্ব হয়ে পড়লে মজলুমের গুনাহ তার ঘাড়ে চাপিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপরও বলবো, নামাজ- রোজার মতো ইবাদত না ছেড়ে গুনাহ ছেড়ে আসুন। কারণ নামাজ-রোজার মতো ইবাদত মানুষের মাঝে ঈমান জাগিয়ে রাখে। আর আল্লাহপাক বলেছেন, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখে। লোককে দেখানো মতো নামাজ পড়লেও একসময় আল্লাহর ভয় জাগ্রত হতে পারে। আর আল্লাহর ভয় মানুষকে সবধরনের অন্যায় থেকে ফিরিয়ে রাখে।

আমাদের সমাজে অনেকেই আইনের ফাঁক- ফোঁকর দেখে ভালো উকিল ও বাগ্মিতার জোরে মামলার রায় তার পক্ষে নিয়ে নেয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খুব ভালো করেই জানে যে, জমিটির প্রকৃত মালিক তার প্রতিপক্ষ। এভাবে বিচারের মাধ্যমে কেহ যদি অবৈধ কিছু নিয়ে নেয় তাহলেও সে অন্যায়কারী হিসেবে আখেরাতে শাস্তি ভোগ করবে। এভাবে অবৈধ উপার্জনের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সা. কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, অবৈধ উপার্জনে গঠিত শরীর জাহান্নামের জ্বালানি বৈ অন্য কিছু নয়। কারো জীবনে যদি হারাম উপার্জন থেকে থাকে তাহলে তার উচিৎ দ্রুত তা মিটিয়ে ফেলা। কারণ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার পর দুনিয়ার জীবনের টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-রৌপ্য, ধন- সম্পদ কোনো কাজে আসবে না। আখেরাতের দিন মজলুমের পাওনা নেক আমল দ্বারা পরিশোধ করতে হবে এবং নেক আমল শেষ হয়ে গেলে মজলুমের গুনাহ জালেমের ঘাড়ে চাপানো হবে। তখন জালেমের পরিণতি হবে জাহান্নাম। খতিব মহোদয় সবধরনের জুলুম ও উপার্জনের সকল অন্যায় পথ পরিহার করে চলার জন্য তাঁর মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানান এবং আল্লাহর কাছে তৌফিক কামনা করেন।

শ্রুতিলিখন : প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী।

Comments