সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আল্লাহপাক এই বিশ্বজাহানের খালিক (স্রষ্টা), মালিক (শাসক), রব (ব্যবস্থাপক), হাকিম (বিচারক) এবং এভাবে তাঁর ৯৯টা সুন্দর নাম রয়েছে। এগুলো তাঁর সিফাত (গুণবাচক নাম) এবং এসব গুণের মধ্য দিয়ে আল্লাহপাক তাঁর ক্ষমতা ও গুণাবলী প্রকাশ করেছেন। সৃষ্টির সেরা হওয়ার সাথে মানুষ আল্লাহ তায়ালার খলিফা (প্রতিনিধি)। প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে আল্লাহপাক তাঁর গুণাবলীর এক সীমিত অংশ মানুষকে দান করেছেন যাতে মানুষ আব্দুল মালিক হয়ে সুশাসন এবং আব্দুল হাকিম হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এজন্যই বলা হয় আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও, আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হও। আল্লাহ তায়ালার অগণিত সৃষ্টি রয়েছে এবং সবাই তাঁর তাসবিহ করছেন অর্থাৎ প্রশংসা করছেন। আল্লাহর এই সাম্রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর রয়েছে অগণিত ফেরেশ্তা এবং এই ফেরেশ্তাদের সংখ্যা তিনি ছাড়া আর কেহ জানেন না। ফেরেশ্তারা সর্বদা আল্লাহর প্রশংসায় নিয়োজিত। সকল সৃষ্টিই আল্লাহর গোলামী করছে। মানুষ ছাড়া আল্লাহর কোনো সৃষ্টির স্বাধীনতা নেই। স্বাধীন সত্তার অধিকারী হয়েও আল্লাহর গোলামী এবং প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের কারণেই মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা লাভ করেছে।
আল্লাহপাকের অস্তিত্ব সম্পর্কে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী নিরেট নাস্তিকের সংখ্যা সুদূর অতীত থেকেই ছিল না বা খুব কমই ছিল। নমরুদ, ফেরাউন, শাদ্দাদ, কেনান, আবু জেহেল, আবু লাহাব কেউই নাস্তিক ছিল না। বরং নবি- রসুলদের ধার্মিকতা নিয়েই তাদের সন্দেহ ছিল। আবু জেহেল যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে বের হওয়ার সময়ে কাবার গিলাফ ধরে আল্লাহর কাছে হকপন্থীদের বিজয় কামনা করেছিল। বরং বলা যায়, নাস্তিকের উদ্ভব হয় হাল আমলে। ছাত্র ইউনিয়নকে (রুশপন্থী ও চীনপন্থী) ছাত্রজীবনে আমরা নাস্তিক বলেই জানতাম। কার্লমার্ক্স ধর্মকে অস্বীকার করে কম্যুনিজম মতবাদ প্রচার করেন, যারা তাঁকে অনুসরণ করতো তাদেরকে কম্যুনিস্ট বলা হতো এবং সমাজে তাদেরকে নাস্তিক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বর্তমানে অবশ্য খোদ রাশিয়া ও চীন কার্লমার্ক্সকে সেভাবে বিশ্বাস করে না বা অনুসরণও করে না। বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের অনুসারীরা রয়েছে সংশয়ের মধ্যে। তাদের মতে ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ব্যাপার; রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ধর্মের কোনো ভূমিকা নেই। তাদের স্লোগান ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’। তারা ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে চায়, ধর্ম-বর্ণ- লিঙ্গ-ভাষা সবার জন্য রাষ্ট্র এবং ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। এটা ইসলামেরই বক্তব্য। ইসলাম সকলের জন্য সমানাধিকার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বাস্তবে যারা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের অনুসারী তারা ব্যক্তিগত জীবনে তাহাজ্জুদ গুজার ও বারবার হজ-উমরাহ পালনের পরও গুম-খুন ও সীমাহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে এক একজন দানবে পরিণত হয়েছে। ওরা যদি বুঝতো ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে অবশ্য পালনীয় বিধান তাহলে এমন পরিণতি কখনই হতো না। জীবনের কোনো অংশেই মানুষ ইসলাম থেকে নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। এজন্য বলা যায়, ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ এক কুফরি মতবাদ, এর সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই।
ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট, ব্যক্তিগত-পারিবারিক- সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে জীবনকে ভাগ ভাগ না করে সমগ্র জীবনকে ইসলাম তার ছায়াতলে নিয়ে এসেছে। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো ব্যক্তিগত জীবনে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে নির্বিঘ্নে তার ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করবে এবং কেহ যাতে বাধা প্রদান না করতে পারে রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করবে। ইসলাম সকল মতাদর্শের উপর বিজয়ী হলে ইসলামের যে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান রয়েছে বিশেষ করে দণ্ড ও সামাজিক ন্যায়বিচার রয়েছে তা সকল নাগরিকের উপর সমভাবে প্রযোজ্য হবে। যেমন, চুরি-ডাকাতি, জেনা-ব্যভিচার, ওজনে কম-বেশি, ধোঁকা-প্রতারণা, কাউকে আঘাত প্রদান, কারো সম্মানহানি, কারো প্রতি মিথ্যা অভিযোগ আনয়ন এমনি ধরনের কার্যকলাপ যা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত করে বা কারো জন্য কষ্ট বয়ে আনে এমন সকল কর্মকাণ্ড হারাম; মুসলিম -অমুসলিম সবার জন্য সম অপরাধ এবং শাস্তি দানের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য হবে না। এরই নাম সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার। রসুলুল্লাহ সা. হিজরত করার পরম মদিনায় বসবাসরত সকল গোত্র ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে সহাবস্থানের মাধ্যমে জীবনে শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা এবং সুশাসন নিশ্চিত করেন এবং ইতিহাসে এটাকে মদিনা সনদ বলা হয় যাতে ৪৭টি ধারা ছিল। মানব ইতিহাসে মদিনা সনদ ছিল প্রথম লিখিত সংবিধান।
সমাজের মানুষ আল্লাহকে স্রষ্টা, শাসক, বিচারক হিসেবে স্বীকার করে এবং সাথে সাথে জানে, তিনি ন্যায়বিচারক, কারো প্রতি জুলুম করেন না। হ্যাঁ, এমনটি অনুভব করা লোকের সংখ্যাই বেশি। তাই ডাকাতি করে লুণ্ঠিত মালামাল ভাগ- বাটোয়ারায় কারো কম হলে সে তার বিচার আল্লাহরই কাছে দিয়ে থাকে। যে মজলুম জুলুমের প্রতিকার করতে পারে না সেও বিচারের ভার আল্লাহর উপর সোপর্দ করে নিজে প্রশান্তি খোঁজে। এ থেকে উপলব্ধি করা যায়, সত্যিকার সুশাসন ও ন্যায়বিচার আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়াটা সম্ভব-এমন বিশ্বাস সবার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু শয়তান যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল, আমি তাকে সামনে-পেছনে, ডানে-বামে সর্বাবস্থায় আক্রমণ করবো এবং খুব কমই শোকরগুজার হিসেবে আল্লাহ পাবেন। হ্যাঁ, আল্লাহপাক শয়তানের সে চাওয়া বা দাবি মেনে নিয়েছেন এবং বলে দিয়েছেন, তাঁর দেওয়া বিধান অনুসারে যারা চলবে তাদের উপর শয়তানের কোনো কর্তৃত্ব চলবে না। স্বাধীন সত্তার অধিকারী এই মানুষকে আল্লাহপাক বিবেক ও জ্ঞানবুদ্ধি দান করার সাথে সাথে তাঁর পক্ষ থেকে হেদায়াত দান করে বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে যখন কোনো হেদায়াত তোমাদের কাছে পৌঁছবে তখন যারা আমার সেসব হেদায়াত অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় ও দুঃখ থাকবে না’- সুরা বাকারা ৩৮। আল্লাহপাক তাঁর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক যুগে যুগে অসংখ্য নবি ও রসুল প্রেরণ করেছেন এবং সর্বশেষ নবি ও রসুল হলেন আমাদের প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা.।
হজরত আদম আ. থেকে মুহাম্মদ সা. সকল নবি ও রসুলের দাওয়াত ছিল অভিন্ন - ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ভিন্নভাবে বলা যায়, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো’- সুরা নহল ৩৬। এই কালিমা মূলত এক বিপ্লবাত্মক ঘোষণা, এক পলিটিকাল স্লোগান। কালিমা উচ্চারণকারী সকল নবি-রসুলের সাথে সমসাময়িক শাসকগোষ্ঠী ও তাদের উচ্ছিষ্ট্যভোগীদের প্রচণ্ড বিরোধ হয়েছে। এই দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে অনেক নবি- রসুল ও তাঁদের সঙ্গী-সাথিরা শাহাদত বরণ করেছেন এবং অনেকেই বিজয়ী হয়ে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সমাজে তাগুত প্রতিষ্ঠিত থাকলে কী পরিণতি হয় আমাদের দেশে দীর্ঘ ষোলো বছরে আমরা তা উপলব্ধি করেছি। তাই আল্লাহপাক সকল নবি-রসুলকে একই দায়িত্ব দীন কায়েম করার তাগিদ দিয়েছেন। মূলত দীন কায়েমের মধ্য দিয়ে প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন সম্ভব। আল্লাহর বাণী, ‘তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেসব নিয়ম-কানুন নির্ধারিত করেছেন যার নির্দেশ তিনি নুহকে দিয়েছিলেন এবং (হে মুহাম্মদ) যা এখন আমি তোমার কাছে ওহির মাধ্যমে পাঠিয়েছি। আর যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহিম, মুসা ও ইসাকে। তার সাথে তাগিদ করেছিলাম এই বলে যে, দীন কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে মতপার্থক্য সৃষ্টি করো না’- সুরা শুরা ১৩। দীন কায়েমের প্রশ্নে কোনো মতপার্থক্য আল্লাহপাক সহ্য করবেন না। হ্যাঁ, দীন কায়েমের প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। জমিনে আল্লাহর দীন কায়েমের লক্ষ্যেই রসুল সা.-এর সকল কর্ম-প্রচেষ্টা জারি ছিল এবং আল্লাহর ঘোষণাও তাই। আল্লাহপাক দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কুরআন মজিদে তিন জায়গায় সুরা তওবা (৩৩ নং), সুরা ফাতাহ্ (২৮ নং) ও সুরা সফে (৯ নং) উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘তিনি আপন রসুলকে হেদায়াত ও সঠিক জীবনব্যবস্থা (দীনে হক) দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে সকল জীবনব্যবস্থার ওপর একে বিজয়ী করে দিতে পারেন, মুশরিকদের কাছে তা যতই অসহনীয় হোক’- সুরা সফ ৯। রসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক দীন বিজয়ী হওয়ার ফলেই আমাদের পক্ষে মুসলমান হওয়া সম্ভব হয়েছে এবং বিশ্ববাসী ইসলামের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশে ইসলাম বিজয়ী হয়নি কিন্তু ইসলামকে বিজয়ী করার ক্ষেত্রে বড়ো বাধা যে স্বৈরাচার ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে মহান আল্লাহপাক দয়া করে সেই স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছেন এবং তার ফলেই ঈমানদার জনগোষ্ঠী আজ স্বস্তি প্রকাশ করতে পারছেন ও মহান রবের প্রশংসায় সেজদাবনত হচ্ছেন। ছাত্র- জনতার আন্দোলনে যারা মারা গেছেন আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাদের শাহাদত কবুলের জন্য দোয়া করি। আর যারা আহত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালা যেন তাদেরকে দ্রুত সুস্থতার নেয়ামত দান করেন। আল্লাহ তায়ালার দরবারে মৌখিক স্বীকারোক্তি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ প্রকাশের সাথে সাথে সকল ভেদাভেদ উপেক্ষা করে তাঁর খলিফা হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দীন কায়েমের প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করা সময়ের দাবি। এব্যাপারে গাফেলতি মুসলিম উম্মাহ ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে পারে। আমাদের উপলব্ধিতে আনতে হবে, ইসলাম আল্লাহপাক প্রদত্ত এক পূর্ণাঙ্গ দীন এবং এর সাথে গ্রহণ বা বর্জনের কোনো সুযোগ নেই। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ যেমন মানুষকে দানবে পরিণত করে ঠিক তেমনি রাজনীতি নিরপেক্ষ ধর্ম মানুষকে অথর্ব করে যা সমাজের কোনো কল্যাণে আসে না। সমাজে সুশাসন ও ন্যায়বিচার কায়েম করা রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। আল্লাহপাক যখন তাঁর নবিকে হিজরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন সে সময়ে তিনি নিজেই তাঁর নবিকে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন ‘তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও (সুলতানান নাসিরাহ), আর ঘোষণা করে দাও সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, মিথ্যার তো বিলুপ্ত হওয়ারই কথা’- সুরা বনি ইসরাইল ৮০-৮১।
আল্লাহপাক নিজে যেমন তাঁর সকল সৃষ্টির কল্যাণকামী তেমনি তিনি চান তাঁর যথার্থ প্রতিনিধি মুসলিম উম্মাহ ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষকে সম্মান প্রদান ও কল্যাণ সাধন করবে। আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘তোমরা সর্বোত্তম দল। তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানব জাতির কল্যাণ সাধনের জন্য। তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবে’- সুরা আলে ইমরান ১১০। আমাদের উদ্ভব হয়েছে মানবকল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে। ইসলামী রাষ্ট্র বলতে বোঝায় কল্যাণমূলক সমাজ, এক ইনসাফপূর্ণ সমাজ যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না, থাকবে না শোষণ-বঞ্চনা। এটি সম্ভব তখনই যখন রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ঈমানদারদের হাতে আসে। নির্দেশ দানের ক্ষমতা কেবল সরকার বা রাষ্ট্রশক্তির থাকে। প্রতি জুমায় খতিব ময়োদয়ের তেলাওয়াত আমরা শুনি, ‘আল্লাহ ন্যায়-নীতি, পরোপকার ও আত্মীয় -স্বজনদের দান করার হুকুম দেন এবং অশ্লীল- নির্লজ্জতা ও দুষ্কৃতি এবং অত্যাচার-বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষালাভ করতে পারো’- সুরা নহল ৯০। তিনি আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহর সাক্ষী হয়ে যাও, তোমাদের ইনসাফ ও সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের ব্যক্তিসত্তা অথবা তোমাদের বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে গেলেও। উভয় পক্ষ ধনী বা অভাবী যাই হোক না কেন আল্লাহ তাদের চাইতে অনেক বেশি কল্যাণকামী। কাজেই নিজেদের কামনার বশবর্তী হয়ে ইনসাফ থেকে বিরত থেকো না। আর যদি তোমরা পেঁচালো কথা বলো অথবা সত্যতাকে পাশ কাটিয়ে চলো, তাহলে জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু করছো আল্লাহ তার খবর রাখেন’- সুরা নিসা ১৩৫।
বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম দাবি। আল্লাহর বাণী, ‘আর মীমাংসা করে দিলে যথার্থ ইনসাফ সহকারে মীমাংসা করো। কারণ আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন’- মায়েদা ৪২। শাসক প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে না, তাকে হতে হবে ন্যায়পরায়ণ এবং সকলের সাথে ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। ইনসাফকারী শাসকের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অতি উচ্চে। এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘হাশরের ময়দানে যখন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো আশ্রয় থাকবে না সেই কঠিন মুহূর্তে আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম হবেন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী বিচারক’। আবার তিনি হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন, ‘যে শাসক জালেম ও খেয়ানতকারী হিসেবে মৃত্যুবরণ করবে, আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন’। তিনি বলেন, ‘যে বিচারক সত্যকে জানতে পেরেও ফায়সালা করার ব্যাপারে অবিচার ও জুলুম করেছে, সে জাহান্নামে যাবে। আর যে অজ্ঞতা সত্ত্বেও জনগণের জন্য বিচার ফয়সালা করেছে সেও জাহান্নামি হবে’।
আল্লাহপাক নিজে জুলুম করেন না এবং জুলুম সহ্যও করেন না। যে সমাজে জুলুম-নির্যাতন ও খেয়ানত চলে সেটি কখনই ইসলামী সমাজ নয়। যেহেতু আল্লাহপাক জুলুম সহ্য করেন না সেহেতু যে সমাজ তাঁর প্রদত্ত বিধান ইসলামের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় সে সমাজে অবশ্যম্ভাবী সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমিনে দীন প্রতিষ্ঠার তৌফিক আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের দান করুন। ১১.১০.২০২৪
Comments
Post a Comment