নামাজ পড়ে ও দেখে শিখতে হবে
আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জুমার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর সুরা আল মায়েদা ৬ নং আয়াত তেলাওয়াত করেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. বর্ণিত একটি হাদিস উদ্ধৃত করেন। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে নামাজ ছেড়ে দিল সে মূলত দ্বীনকে ধ্বংস করে ফেললো। তিনি আরো বলেছেন, যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কুফরি করলো। মূলত নামাজ ছেড়ে দেয়ার ফলে তার আর ইসলামের সাথে কোনো সম্পর্ক থাকে না। নামাজ সহিহ -শুদ্ধ করে আদায় করার জন্য তিনি নামাজের মাসালা নিয়ে কয়েক জুমা আলোচনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, নামাজ দেখে শিখতে হবে এবং সাথে সাথে বইপুস্তক পড়েও শিখতে হবে। কেবল বই পড়ে নামাজ শিখতে চাইলে অনেক সময় বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখ। আমরাও আমাদের বাপ-দাদা ও মা-দাদিদের কাছ থেকে নামাজ শিখেছি। এই শেখার মধ্যেও ভুল থাকতে পারে। এজন্য দরকার আলেমদের ছোহবতে থেকে নামাজের মাসালা জেনে নেয়া।
নামাজ পড়া যেমন ফরজ তেমনই নামাজের নিয়ম- কানুন (মাসালা-মাসায়েল) জানাও ফরজ। নামাজে ১৩টি ফরজ রয়েছে। নামাজ শুরুর পূর্বে রয়েছে ৭টি যেগুলোকে আরকান বা শর্ত বলা হয় এবং নামাজের ভেতরে রয়েছে ৬টি যেগুলোকে আহকাম বলে।
১. জায়গা পাক : অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা দরকার। মুসলমানদের জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গার পাশাপাশি সমগ্র পৃথিবীই মসজিদ। বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে, আকাশে, সমুদ্রে সর্বত্রই নামাজ আদায় করা যায়। পবিত্রতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা বড় উদার। মলমূত্র নাপাক কিন্তু শুকিয়ে যাওয়ার পর তার উপরে কিছু বিছায়ে নামাজ পড়া যায়।
২. কাপড় পাক : ‘তোমার পোশাক পবিত্র রাখো এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো’- সুরা মুদ্দাস্সির ৪-৫। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে পোশাক অবশ্যই পবিত্র পরিচ্ছন্ন হতে হবে। যেখানে নাপাকি লেগেছে সেখানে ধুয়ে ফেললেই পোশাক পাক হয়ে যায়। পুরো পোশাক বারবার ধোয়ার প্রয়োজন নেই।
৩. শরীর পাক : পোশাকের সাথে সাথে নিজের শরীরও পাক হতে হবে। গোসল ফরজ হলে গোসল করতে হবে। অন্যথায় অজু করে নামাজের জন্য উপযুক্ত হতে হয়। পানির বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করা যাবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী,
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজের জন্য দাঁড়াবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাতদুটো ধুয়ে নেবে, অতপর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা দুটো গোড়ালি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে। কখনো যদি নাপাক (জানাবাত) হয়ে যাও, তাহলে গোসল করে পবিত্র হয়ে নেবে। যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো কিংবা তোমরা যদি সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ যদি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা নারী সম্ভোগ করে থাকো (তাহলে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করো), আর যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও (তায়াম্মুমের নিয়ম হচ্ছে), পবিত্র মাটি দিয়ে তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করে নেবে; আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না বরং তিনি চান তোমাদের পাক-সাফ করে দিতে এবং এভাবেই তিনি তোমাদের ওপর তাঁর নেয়ামতসমূহ পূর্ণ করে দিতে চান, আশা করা যায় তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে’- সুরা মায়েদা ৬।
খতিব মহোদয় বলেন, বাহ্যিক পবিত্রতা সম্পন্ন করার সাথে সাথে নিজের রক্ত-গোশ্তও পবিত্র করতে হবে। এটা নির্ভর করে হালাল রুজি ভক্ষণের ওপর। হারাম উপার্জনে গঠিত শরীর ও রক্ত-মাংস আল্লাহর ইবাদতের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত এবং জাহান্নামের জালানি বৈ আর কিছু নয়। তিনি সুদ-ঘুষের তীব্র সমালোচনা করে তা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।
৪. ওয়াক্তমত আদায় : 'নিশ্চয় নামাজকে ঈমানদারদের জন্য নির্ধারিত সময়ে আদায় করা আবশ্যক কর্তব্য করা হয়েছে'- সুরা নেসা ১০৩। কুরআন ও হাদিসে নামাজের যে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা হয়েছে সেভাবে নামাজ আদায় করতে হবে।
৫. কিবলামুখি হওয়া :
আর যেখান থেকেই তুমি চলো না কেন তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও এবং যেখানেই তোমরা থাকো না কেন সে দিকেই মুখ করে নামাজ পড়ো---- সুরা বাকারা ১৫০।
নামাজের আর একটি শর্ত হলে অবশ্যই কিবলামুখি হয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। কোনো সময়ে কিবলা নির্ধারণে সমস্যা হলে সমস্ত প্রক্রিয়া অবলম্বন করে মোটামুটি স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নামাজ আদায় করতে হবে।
৬. সতর আবৃত করা : নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সতর আবৃত করা নামাজের অন্যতম শর্ত। পুরুষের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীর সতর হলো মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ছাড়া সমগ্র শরীর আবৃত করে রাখা। অবশ্য এই সতর স্বামী- স্ত্রী ছাড়া সর্বক্ষণের জন্য। নামাজের সময় মেয়েরা যে বিশেষ ধরনের হিজাব পরিধান করে সেটা বেশ উত্তম। মাথার চুল এবং শরীরের কোনো অংশ খোলা থাকলে নামাজ হবে না। তেমনি ছেলেদেরও গেঞ্জি ও টাইট প্যান্ট পরে রুকু-সেজদা করলে সতর অনাবৃত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তাদের নামাজ হবে না।
নামাজের সময় উত্তম পোশাক পরিধানের কথা কুরআন মজিদে বলা হয়েছে। আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়ার জন্য সর্বোত্তম পোশাকটাই পরিধান করা উচিত।
৭. নিয়ত করা : নিয়ত পড়া বা মুখে উচ্চারণ করার বিষয় নয় বরং নিয়ত করতে হয়। অন্তরে দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করার নামই নিয়ত করা।
নামাজের ভেতরে ৬ ফরজ পরবর্তী জুমায় আলোচনা করার ইচ্ছা পোষণ করে তিনি তাঁর আলোচনা সমাপ্ত করেন। সংক্ষেপিত।
Comments
Post a Comment