Skip to main content

চাই দান-সাদাকার অর্থনীতি


বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। উত্তরণের উপায় কী? সবাই বলছে কৃচ্ছতা সাধন করো। এতে কি সমাধান সম্ভব না আরো আটকে যাবে? শ্রমিক ছাঁটাই, তাদের মজুরি কমিয়ে দেয়া বা ফুটপাত থেকে দোকানপাট উচ্ছেদ করে দেয়ার মধ্যে কি কোনো সমাধান রয়েছে? আজ হাঁটতে গিয়ে লক্ষ করলাম, ধানমন্ডিতে ভ্যানের উপরে তরকারি বিক্রেতা নেই, ৬-এ জমজমাট বাজার বসে, সেখানেও বাজার নেই। এই বাজারগুলো দশটার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।

২/৩ দিন পূর্বে এক স্বনামধন্য ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কিছু বাজার করলাম। তাদের একজন কর্মচারীকে কাছে ডেকে তার নাম বাড়ি কী করে জানতে চাইলাম। রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সেখানে দুই শিফটে ডিউটি করতে হয়। ১৫ দিন সকালে এবং ১৫ দিন বিকেলে। সম্ভবত সাত ঘন্টা করে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আড়াইটা। বিকেলে আড়াইটা হতে রাত দশটা। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সময় হয়তো একটু কমতে পারে। বেতন জিজ্ঞেস করলে জানালো সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তার মেসের ভাড়া, খাওয়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে হয়। কষ্টের মাঝেও তাদেরকে হাসিখুশি থাকতে হয় ও কাস্টমারের সম্মুখে নিজেকে স্মার্ট হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়। একজনের বেতন শুধু এমন তা নয়, হয়তো ৮০% কর্মচারীর বেতনই এমন। এদের অবশ্য রোগব্যাধি নেই। রোগব্যাধি থাকবে কেন? কারণ তাদের বাজেটে চিকিৎসা খরচ বলে কিছু নেই। 

চোখ ঝলসানো বাড়ির দারোয়ানের বেতন বড়জোর বারো হাজার টাকা। দৃষ্টিনন্দন যে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন সেই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের বেতন আপনার জানা নেই, আর প্রয়োজনও বোধ করেন না। আপনি শুধু এতটুকুই জানেন মসজিদ নির্মাণ করলে আল্লাহ জান্নাতে ঘর নির্মাণ করে দিবেন। সব ঠিক আছে। কিন্তু মসজিদ কমিটি এটা (২/১ টা বাদে) জানে না, যারা সর্বক্ষণ আল্লাহর দ্বীনের কাজে নিয়োজিত, রুজিরোজগারে সময় দিতে পারে না আবার আত্মমর্যাদাবোধের কারণে কাউকে বলতেও পারে না, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। 

আমি বলতে চেয়েছি আমাদের সমাজের ৯০% মানুষের উপার্জন তাদের প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। আবার এদের ভোগপ্রবণতা অনেক বেশি। হাতে টাকা আসলেই এরা বাজারে যায় ও খরচ করে। অর্থনৈতিক মন্দা দূর করতে হলে বা দেশের সমৃদ্ধি আনতে হলে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের আয় বাড়াতে হবে। কর্মী হিসেবে যারা উৎপাদনে সহায়তা করছে তাদের হাতে পয়সা দিলে ভোক্তা হয়ে উৎপাদিত জিনিস ভোগ করে সহায়তা করবে। এটা অর্থনীতিবিদদের কথা। ১৯৩০ দশকে আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে মহামন্দা দেখা দিয়েছিল। লর্ড কেইনস সরকারকে ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইউরোপ-আমেরিকায় তাঁর তত্ত্বই অনুসরণ করা হয় এবং শ্রমজীবী মানুষকে প্রচুর মজুরি দেয়া হয়। ফলে সে-সব দেশে শ্রম অসন্তোষ নেই, শ্রমিক ধর্মঘটও নেই যদিও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর কাজ না পেলে বেকার ভাতা। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনও তাই বলেছেন, প্রাচুর্যের মাঝেও দারিদ্র্য থাকতে পারে যদি তাদের ক্রয়ক্ষমতা না থাকে।

মন্দা থেকে উত্তরণ ও সমৃদ্ধি আনতে হলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সে দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কর্মসংস্থান সংকুচিত করে নয় বরং নানা উপায় সৃষ্টি করে দিতে হবে। সমাজে যারা সম্পদশালী তাদের সম্পদে বঞ্চিত ও প্রার্থীদের হক রয়েছে। এটি আল্লাহরই কথা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি দান- সাদাকাকে ক্রমবৃদ্ধি দান করেন এবং সুদকে নির্মূল করে দেন। সাদাকা বিপদাপদ দূরে সরিয়ে রাখে এবং আল্লাহর নিকটবর্তী করে। তাই আমাদের টিকে থাকার জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি উদার হস্তে মানুষকে দান করতে হবে। এই দানের টাকা হতদরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে। তারা বাজারে আসে এবং বাজারে চাহিদা বাড়ে; ফলে উৎপাদন বাড়ে ও দেশ সমৃদ্ধ হয়। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর বান্দাদের কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দান করুন।

Comments