সন্তানের ভালো কিছু দেখা অভিভাবকের জন্য প্রশান্তি
গত ১১ তারিখ তাহেরাদের বাসায় আমরা মামা-ভাগনে (রেহান) অনেকক্ষণ গল্প করলাম। গল্পের বিষয় ছিল ক্যারিয়ার গঠন। আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া যে লিটন ও রেহান দু'ভাই একটি কর্মের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। রেহানের ১২ ঘন্টা ডিউটি। তাকে বললাম, কাজ যতো কঠিনই হোক (শিক্ষা নবিশকাল) নিজের কাজ মনে করে পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে করবে। এতে সওয়াবের পাশাপাশি তোমার কর্মদক্ষতা বাড়বে যা পরবর্তী সময়ে উন্নতির পথ প্রশস্ত করবে। সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে অফিসে গমন ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে। একটা সেকেন্ড যেন বিলম্ব না হয়। মাহাথির মোহাম্মদের অফিসে উপস্থিতির ক্ষেত্রে কক্ষনো বিলম্ব হতো না।
আস্তে আস্তে সবারই ব্যবস্থা হচ্ছে এবং যাদের এখনো হয়নি হবে ইনশা-আল্লাহ। নিজের উপর আস্থা রাখতে হবে। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তাঁর ছেলের শিক্ষককে লিখেছিলেন, আমার ছেলেকে শেখাবেন, পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে পরিশ্রম করে একটি ডলার পাওয়া অনেক মূল্যবান। তার যেন নিজের প্রতি সুমহান আস্থা থাকে।
পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা. আমাদেরকে পরিশ্রমী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা নামাজ শেষে রুজির জন্য বেরিয়ে পড়তে বলেছেন। রসুল সা. বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষ আল্লাহর বন্ধু। পরিশ্রম করে ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষ ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই রাত যাপন করে।
আমাদের জীবনে স্বপ্ন থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে এপিজে আব্দুল কালাম বলেন, 'স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে। আর স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ। স্বপ্ন হলো সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না'।
জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন থাকবে এবং সেই স্বপ্ন পূরণে কঠোর পরিশ্রম করার মনোবৃত্তি থাকতে হবে। আলোস্য ঝেড়ে ফেলতে হবে। অলস মানুষকে কেউ পছন্দ করে না, আল্লাহও না। ওমর রা. বলেছেন, যে কাজ করে না তার খাওয়া অন্যায়। তাই আমাদের পরিশ্রমী হতে হবে। অফিসে বাসায় সর্বত্র। আমরা সেবা গ্রহণ করে নয়, সেবা দানে সন্তুষ্ট হবো ইনশা-আল্লাহ।
সুস্থতার জন্য পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালার দয়ায় আমি মোটামুটি সুস্থ। প্রচুর লেখালেখি করি। ফজরের নামাজ পড়ে নিয়মিত হাঁটি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়ি। নিজের কাজ নিজে করি। আমার নিজের কাপড়চোপড় ধোয়া ও ইস্ত্রি নিজেই করি। মাহেরের দাদি আমার চেয়েও বেশি কাজ করে। ভোর চারটা থেকে রাত এগারোটা বিরতিহীন চলে। খুব কমই বিশ্রাম নিতে পারে। পড়ানো, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন ও সাংসারিক কাজে তাকে প্রচুর সময় দিতে হয়। কোনো অনীহা নেই। এই পরিশ্রমের বিনিময় আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে দান করবেন ইনশা-আল্লাহ।
এসব প্রসঙ্গে প্রচুর লেখার রয়েছে। কোনো এক সফরে রসুলুল্লাহ সা. একস্থানে যাত্রা বিরতি করলেন। কিছু মানুষ মাল-সামান রেখে কঠোর ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত হলেন আর কিছু লোক তাদের জন্য রান্নাবান্না, উট ও ঘোড়াগুলোর তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত হলেন। সবশেষে এসব সাহাবি রসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে গিয়ে বললেন, আমরা সব সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়লাম। সব শোনার পর তিনি বললেন, সওয়াব তো তোমরা সবই লুটে নিয়েছ। আমার বিশ্বাস, দুনিয়ার জীবনে যারা ঈমানদার ও পরিশ্রমী আল্লাহপাক তাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতে পরমানন্দে রাখবেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর পরিশ্রমী বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment