'মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল। তাঁর সাথে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা কাফেরদের প্রতি আপোষহীন এবং নিজেদের প্রতি দয়ার্দ্র'- সুরা ফাতাহ ২৯।
এই সুরাটি হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে নাজিল হয়। সন্ধিটি বাহ্যত মুসলমানদের জন্য অবমাননাকর হলেও আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন। আর হয়েছেও তাই। অনুকূল পরিবেশে ব্যাপক দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলাম দ্রুত প্রসারিত হয়। সন্ধিপত্রে মুহাম্মদ সা.-এর নামের সাথে রসুলুল্লাহ লেখাতে কাফেররা তীব্র বিরোধিতা করে। শেষে লেখা হয় মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ। কে কী বললো সেটি বড় কথা নয় আল্লাহ নিজেই স্বীকৃতি দিচ্ছেন মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রসুল।
মুহাম্মদ সা.-এর সঙ্গী-সাথিদের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, তারা কাফেরদের প্রতি আপোষহীন ও কঠোর অর্থাৎ নীতির প্রশ্নে তারা কাফেরদের সাথে একাট্টা হয়ে চলে না। কোনো অবস্থাতেই নিজস্ব নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে কাফেরদের সাথে মিলে যায় না। কাফেরদের সাথে সদাচরণ ও বিপদাপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। কিন্তু বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তাদের কৃষ্টি-কালচারে নিজেকে বিলীন করে দেয়া সত্যিকার ঈমানদার কখনোই পারে না। এই অর্থে তারা কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর।
পক্ষান্তরে মুমিনরা পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত রহমদীল। একে অপরের ব্যথায় সমব্যাথী। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন মুমিনরা পরস্পর একটি দেহের মতো। দেহের কোনো একটি অংশে আঘাত লাগলে সারা দেহে সেটি অনুভূত হয়, তেমনি মুসলমান কোথাও নির্যাতিত হলে যদি অন্তরে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে বোঝা যাবে সে মুমিন।
আল্লাহপাক মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ দেখতে চান। মুস্তাহাব আমল নিয়ে আজ মুসলমানরা বহুধা বিভক্ত। এই ভিন্নতা স্বয়ং রসুলুল্লাহ সা.-এর আমলের মধ্যেই ছিল এবং আমি মনে করি এটা একটা সুযোগ। মত- পার্থক্যগত বিষয়ে যার যার পছন্দমত আমল করবে। ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠীর মাঝে এসব নিয়ে যারা অনৈক্য সৃষ্টি করে ও উস্কানি দেয় এবং শত্রতা পোষণ করে তাদের ঈমান নিয়েই সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। হতে পারে ইসলামের দুশমনদের এজেন্ডা এরা বাস্তবায়ন করছে।
ইসলামে হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণকে কঠোরভাবে ঘৃণা করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহপাক হিংসুক ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে বলেছেন (সুরা ফালাক)। আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের পরস্পর দয়া পরবশ হতে বলেছেন, আর আমরা করছি শত্রুতা। ধিক! এই নাদান মুসলমানদের। আল্লাহপাক আমাদের হেফাজত করুন।
Comments
Post a Comment