জু’মা বক্তৃতা
২৮.০৮.২০২০
আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জু’মার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ্জ মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর মুহাররম মাস ও আশুরার ফজিলত এবং আশুরাকে কেন্দ্র করে নানা কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করেন।
হিজরী সনের গণনা শুরু হয় রসূল (সা)-এর হিজরতের মধ্য দিয়ে এবং প্রথম মাস মুহাররম অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন। হাদিস উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মুহাররম মাস আল্লাহর মাস যেমনটি আল্লাহর ঘর, আল্লাহর কিতাব ও আল্লাহর রসূল। পুরো মাসটিই ফজিলতে পূর্ণ। রমযান মাসের পরে এ মাসের আমলসমূহের মধ্যে নফল রোযা, নফল নামায ও নফল দান-সাদাকা অধিক ফজিলতপূর্ণ। নফল রোযা মানুষকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখে।
এই মাসের ১০ তারিখ আশুরা হিসেবে (আশুরা অর্থ দশ) পরিচিত, নানা ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হওয়ায় দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমযান মাসে রোযা ফরজ হওয়ার পূর্বে মুহাম্মদ (সা) আশুরার রোযা ফরজ হিসেবে পালন করতেন। আশুরা ইহুদীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে মুসা (আ)সহ বনি ইসরাইল ফিরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আল্লাহপাক বনি ইসরাইলকে লোহিত সাগর অতিক্রম করে ফিলিস্তিনে পৌঁছার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং মাঝ দরিয়ায় ফিরাউনসহ তার দলবলকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ইহুদীরা আশুরার দিনে রোযা পালন করতেন।
মদীনায় হিজরত করে আসার পর রসূলুল্লাহ (সা) ইহুদীদের আশুরার রোযা সম্পর্কে বলেন, মুসা (আ) আমার ভাই, ওদের চেয়ে তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ। তোমরা আশুরার রোযা পালন করবে, ওরা একদিন রোযা রাখে তোমরা তাদের থেকে ভিন্ন করে আশুরার আগে বা পরে মিলায়ে দুই বা তিনদিন রোযা রাখবে। (বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র বজায় রাখার লক্ষ্যেই তিনি এমনটি করেছিলেন।) তিনি এর ফজিলত প্রসঙ্গে বলেছেন, যারা আশুরার রোযা পালন করবে (আগে-পরে যোগ করে) তাদের বিগত এক বছরের ছগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
খতিব মহোদয় বলেন, আমাদের সমাজে আশুরা বলতেই কারবালার ঘটনা বোঝানো হয়। কারবালার মর্মবিদারক ঘটনা ঘটেছে ৬১ হিজরিতে, রসূল (সা)-এর ইন্তেকালের অর্ধশতাধিক বছর পরে। অথচ আশুরার রোযা রাখা সম্পর্কে স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সা) বলে গেছেন। কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা)-এর সপরিবারে শাহাদত আমাদেরকে ব্যথিত করে, এই শোকাবহ ঘটনা উম্মাহ কখনই ভুলতে পারবে না। তবে শোক প্রকাশের ক্ষেত্রে এক শ্রেণির মানুষ যা করে তা কখনই মেনে নেয়া যায় না। তাজিয়া মিছিল, বুকে-পিঠে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় হায় হোসাইন হায় হোসাইন নামে মিছিল করে শোক পালন ইসলামসম্মত নয়। এসব বিদয়াত ও গুনাহের কাজ।
তিনি বলেন, কারবালার ঘটনা আমাদেরকে ব্যথিত করে, ক্ষুব্ধ করে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য প্রেরণা যোগায়। তবে অতিরিক্ততা ভালো নয়। ইসলামের ইতিহাসে আরো বিয়োগান্তক ঘটেছে। ওহুদের যুদ্ধে রসূল (সা)-এর চাচা আমীর হামযাসহ অনেক সাহাবী শহীদ হয়েছেন, রসূল (সা) আহত হয়েছিলেন, তিনজন খলিফা কর্মরত অবস্থায় শহীদ হয়েছেন এবং এমন বহু শোকাবহ ঘটনা বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে।
রসূল (সা) শোক প্রকাশের সময়সীমা সাধারণভাবে তিন দিন এবং স্বামীর ইন্তেকালে স্ত্রীর চার মাস দশ দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমরা ইতিহাস জানবো, পড়বো এবং সেখান থেকে প্রেরণা লাভ করবো। কিন্তু ইসলাম সমর্থন করে না এমন আচার অনুষ্ঠান উদ্ভাবন থেকে বিরত থাকবো। ইসলামে জন্ম ও মৃত্যুদিবস বলে কিছু নেই।
যশোরে মটর সাইকেল শোভাযাত্রা করে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, সমাজে অশ্লীলতা, বেয়াহাপনা ছড়িয়ে দেয়ার এটি একটি ঘৃণ্য অপপ্রয়াস বৈ আর কিছু নয়। নারীর সম্মান ও মর্যাদা ধ্বংস করে তারা সমাজটাকে কলুষিত করতে চায়। তিনি তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য তিনি তাঁর মুছল্লিদের প্রতি আহবান জানান। সংক্ষেপিত। শ্রুতিলিখনে-প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment