Skip to main content

ইসলামই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম (জীবনব্যবস্থা)

জু’মা বক্তৃতা ২১.০৮.২০২০ আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জু’মার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ্জ মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর মসজিদের মর্যাদা, পবিত্রতা সংরক্ষণ, খুতবার গুরুত্ব, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করেন। জু’মায় সমসাময়িক বিষয়াবলী সম্পর্কে মুছল্লিদেরকে অবহিত করা খতিবের দায়িত্ব। রসূলুল্লাহ (সা) থেকে এটি চলে আসছে। মসজিদের পবিত্রতা বিধানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বৃষ্টির দিন জুতা-সেন্ডেল থেকে যাতে ময়লা পানি মসজিদের মেঝেতে না পড়ে সেজন্য তিনি মুছল্লিদের সচেতন হওয়ার আহবান জানান। মসজিদ পবিত্র স্থান এবং মু’মিনদের হৃদয়ে এর স্থান অনেক উচ্চে। তিনি মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু আদবের কথা উল্লেখ করেন। মসজিদে এসে প্রথমে বিসমিল্লাহ পাঠ, পরে রসূল (সা)-এর শানে সংক্ষিপ্ত দরুদ পাঠ (আচ্ছালাতু ওয়া আচ্ছালামু আলা রসূলুল্লাহ), মসজিদে প্রবেশের দুআ পাঠ (আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রহমাতিক, অর্থ হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও), ডান পা আগে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ ও ইতেকাফের নিয়ত করা এবং সময় থাকলে দু’রাকাত নামায পড়ে বসে যাওয়া। বের হওয়ার সময়ও অনুরূপ বিসমিল্লাহ পাঠ, পরে রসূল (সা)-এর শানে সংক্ষিপ্ত দরুদ পাঠ, মসজিদ থেকে বের হওয়ার দুআ পাঠ (আল্লাহমা ইন্নি আসয়ালুকা মিন ফাদলিক অর্থ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অনুগ্রহ ও দয়া প্রার্থনা করছি) এবং প্রথমে বাম পা ও পরে ডান পা দিয়ে মসজিদ থেকে বের হওয়া। জুতা পরার সময় প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা এবং খোলার সময় প্রথমে বাম পা এবং পরে ডান পা থেকে খোলা সুন্নাহ। সম্প্রতি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে কিছু মানুষের আদালতে রিট এবং বিষোদগার নিয়ে তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি সূরা আলে ইমরানের ১৯ ও ৮৫ নং আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, ইসলাম আল্লাহর কাছে মনোনীত একমাত্র ধর্ম (জীবনব্যবস্থা)। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবনবিধান যারা তালাশ করবে তা গ্রহণ করা হবে না, পরকালে তারা হবে চরমভাবে ব্যর্থ। ইসলামবিদ্বেষী বিভিন্ন ব্যক্তির ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বিষয়ে কটাক্ষ করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে এসব নিয়ে কটাক্ষ করে লাভ নেই, যারা করবে তারাই ধিকৃত হবে। তিনি ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার লক্ষ্যে বাঙ্গালীরা আন্দোলন করে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল। নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করায় আপত্তি কেন? ওরা জানে শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাদ দেয়া সম্ভব নয়, তারপরও তাদের এই উদ্যোগ হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দ-সম্প্রীতি নষ্টের উস্কানি ছাড়া আর কিছু নয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন সময়ে তাদের অপপ্রয়াস সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, তারা নিজেদেরকে অসাম্প্রদায়িক দাবী করেন অথচ নামটিই তো সাম্প্রদায়িক; সেখানে মুসলমানদেরকে বাদ রাখা হয়েছে। খতিব মহোদয় বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দ-সম্প্রীতি নিয়ে পাশাপাশি বসবাস করে আসছি। চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য কোথাও তাদের কোনো সমস্যা নেই। সরকারি চাকুরিতে সংখ্যানুপাতে তারা বেশিই আছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নামে এই সাম্প্রদায়িক সংগঠনটি ইসলাম ও বাংলাদেশের কল্যাণ চায় না। ওরা কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য তিনি মুছল্লিদের প্রতি আহবান জানান। খতিব মহোদয় অমুসলিমদের সাথে মুসলমানদের সদাচরণ তুলে ধরে বলেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সদাচরণের তাগিদ আমরা আমাদের ধর্ম থেকেই পেয়েছি। হযরত ওমর (রা)-এর শাসনামলে পারস্য সেনাপতি হরমুজানের দ্বারা মুসলমানদের প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল। হরমুজান যুদ্ধবন্দী হয়ে আসলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হবে না এই প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে ওমর (রা) তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু সে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। পরবর্তীতে আবার বন্দী হয়ে আসলে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হয়। হরমুজান কৌশল অবলম্বন করে মৃত্যুর আগে পানি পান করতে চায় এবং পানি পান শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি আদায় করে। ওমর (রা) তাকে নির্ভয়ে পানি পান করতে বলেন এবং পানি পান শেষ না পর্যন্ত হত্যা করা হবে না বলে জানান। হরমুজান প্রতিশ্রুতি আদায় করার পর পানি ফেলে দেয় এবং বলে, প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এখন আর তাকে হত্যা করতে পারবেন না। ওমর (রা) মুচকি হেসে বলেন, যাও তুমি মুক্ত। পরবর্তীতে হরমুজান মুসলমান হন (হরমুজান ভালো করেই জানতো মুসলমান কখনই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না)। খতিব মহোদয় কোনো ধরনের উস্কানিতে না জড়িয়ে নিজের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন। শুধু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নয়, ইসলামের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার জন্য তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। সংক্ষেপিত।

Comments