Skip to main content

দাওয়াতে দ্বীন

আল্লাহ তায়ালার দরবারে লাখো শুকরিয়া যে, তিনি দয়া করে আমাদেরকে মুসলমানের ঘরে জন্ম দিয়েছেন এবং ইসলামকে জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে এর ওপর চলার তাওফিক দান করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ। আমরা লক্ষ্য করি, আমাদেরই আশে-পাশে আল্লাহর অগণিত বান্দাহ রয়েছে যারা ইসলামকে জানে না, বুঝে না এবং এর ওপর না চলে জাহান্নামের পথে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। এদের ব্যাপারে কি আমাদের কিছু করণীয় নেই? একজন অশিক্ষিত ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য ঈমান, হালাল রুজি ও নামায-রোযার মতো মৌলিক ইবাদত জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ যাদেরকে জ্ঞান-বুদ্ধি-যোগ্যতা ও মোটামুটি চলার মতো ব্যবস্থা করেছেন, তাদের জন্য কি শুধু ঈমান ও নেক আমল যথেষ্ট হতে পারে? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কী বলেন? ছোট্ট সূরা আল আসরে আল্লাহপাক কসম খেয়ে বলেছেন, ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে মানুষের মধ্যে চারটি গুণ থাকতেই হবে। তন্মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে দু’টি গুণ ঈমান ও নেক আমল এবং আরো দু’টি গুণ হলো, ঈমান ও নেক আমলে সমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গ মানুষকে হকের পথে ডাকবে ও ধৈর্যধারণের উৎসাহ যোগাবে। এতে বোঝা যায়, পথহারা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন। সকল নবী-রসূলের মৌলিক কাজ ছিল মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা। আল্লাহর বাণী, ‘আমি তাদের (নবী-রসূল) নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সুপথ দেখাতো এবং নেক কাজ করা, নামায প্রতিষ্ঠা করা ও যাকাত দেয়ার জন্য আমি তাদের প্রতি ওহী পাঠিয়েছি, তারা আমার আনুগত্য করতো’- সূরা আল আম্বিয়া ৭৩। আল্লাহপাক তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা)-এর অনুসারীদেরকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছেন। তাদের কাজ হলো মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দান ও অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী, ‘তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা মানুষদের কল্যাণের দিকে ডাকবে, সত্য ও ন্যায়ের আদেশ দেবে, আর অসত্য ও অন্যায় কাজ থেকে তাদের বিরত রাখবে, এরাই হচ্ছে সফলকাম’- সূরা আলে ইমরান ১০৪। যারা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে তাদের সেই কাজের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, ‘তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে মানুষদের আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে নেক কাজ করে এবং বলে, আমি একজন মুসলমান’-সূরা হা-মীম আস সাজদা ৩৩। মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করে নবী করীম (সা) বলেছেন (হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত), ‘আল্লাহর পথে একটা সকাল ও একটা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া ও এর সমস্ত সম্পদ থেকে উত্তম’- বুখারি। কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, একজন মুসলিম হিসেবে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা আমাদের জন্য ফরজ। একজন মুসলিম তো সেই, যে ইসলামে বিশ্বাস করে, ইসলামকে মানে এবং মনেপ্রাণে ইসলামের বিজয় কামনা করে ও প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর নামায-রোযা-দাঁড়ি-পাগড়ি সব থাকা সত্বেও সে ইসলামের বিজয় কামনা করতো না এবং তার সম্পর্ক ছিল ইসলামের শত্রুদের সাথে। ফলে আল্লাহ তার সকল আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব যখন ব্যাপক জনগোষ্ঠী ইসলামের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে। এজন্য প্রয়োজন দ্বীনের ব্যাপক প্রচার। আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহর বান্দাদের কাছে অনলাইন, অফলাইন সকল পর্যায়ে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। তাই আসুন, নিজেদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, চলার সাথী (অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান), পাড়া-প্রতিবেশি সবার কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেই। জাহান্নামের পথে ধাবমান আল্লাহর বান্দাদেরকে অত্যন্ত দরদের সাথে ফিরায়ে আনার চেষ্টা করি। এর চেয়ে বড় কল্যাণকর ও নেকির কাজ আর নেই। আমরা আমাদের পরিবার থেকেই দাওয়াতের কাজটি শুরু করি। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে আমরা জান্নাতের বাসিন্দা হওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছেন। মানুষকে হতাশ না করে আমরা আল্লাহর ক্ষমার দিকে আহবান জানাই। বাসার কাজের মেয়েটিকে বলি, ‘তোর তো সবই ভালো, নামাযটা ঠিকমত পড়লেই আল্লাহ তোকে ক্ষমা করবে’। স্ত্রী পর্দা না করলে তাকে বলি, ‘দেখ, পর্দা না মানার কারণে তোমার সাথে আমারও স্থান হবে জাহান্নাম (কারণ আল্লাহর রসূল (সা) বলেছেন, দায়ুস কখনো জান্নাতে যাবে না)’। সন্তান নামায না পড়লে অত্যন্ত দরদ দিয়ে তাকে নামাযের কথা বলি। পরিবারে একসাথে খানা খাওয়া, তাদেরকে নিয়ে বেড়ানো এবং সপ্তাহে একটা দিন তাদেরকে নিয়ে দ্বীনের আলোচনা করি। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে মৌখিক ও বইপত্রের মাধ্যমে দাওয়াত দেই, ফেসবুকে দাওয়াত দেই, ভালো লেখা শেয়ার ও কপি করে বন্ধু-বান্ধবদের কাছে পৌঁছে দেই। রিক্সায় উঠলে রিক্সাওয়ালার সাথে কথা বলি, তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেই এবং সুযোগ মতো বলি, তোমার এই হালাল রুজির সাথে নামাযটা আদায় করলেই আশা করা যায় আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন। এভাবে যদি মানুষের কাছে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে দুনিয়াটা হবে আমাদের জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক এবং আখিরাতে জান্নাতে যাওয়ার পথটা হবে প্রশস্ত। হে আল্লাহ দয়াময়, মেহেরবান! তুমি আমাদের ক্ষমা করো এবং তোমার বান্দাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তাওফিক দান করো। আমিন। ১৭.০৮.২০২০

Comments