আল্লাহপাক প্রতিটি জীবকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। নর ও নারী মিলে এই পৃথিবীতে পূর্ণতা। উভয়কেই আল্লাহ সম্মানিত করেছেন। নর ও নারী যেই ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে আল্লাহপাক তাকে পুরস্কৃত করবেন। নর ও নারীর মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন, ‘ঈমানদার নর ও নারী পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী’। কেউ কারো দাসও নয়, আবার প্রভুও নয়। সম্পর্ক বন্ধুত্বের, ভালোবাসার, তবে পারিবারিক শৃঙ্খলা বিধানের জন্য পুরুষকে পরিবারের কর্তৃত্বশীল করা হয়েছে। তারা পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সকল কাজ সম্পন্ন করবে। আমার দৃষ্টিতে একজন পুরুষ হলেন পরিবার নামক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং স্ত্রী তাঁর অধীন প্রধানমন্ত্রী।
ইসলাম নারীকে মা, স্ত্রী, কন্যা ও ভগ্নি হিসেবে তার সম্মান ও মর্যাদা অনেক উচ্চে নির্ধারণ করেছে। মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত এবং পিতা অপেক্ষা মা’র মর্যাদা তিনগুণ বেশি। কুরআনে বলা হয়েছে, তারা উভয়ে (মাতা ও পিতা) বার্ধক্যে উপনীত হলে উহ্ শব্দটি উচ্চারণ করো না এবং সব সময় নত হয়ে চলার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
স্ত্রী হিসেবে নারী পুরুষের বন্ধু ও সাথী। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। স্ত্রীর নিকট উত্তম হতে হলে অবশ্যই তার মন জুগিয়ে চলতে হবে। আখিরাতে জান্নাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীর সাক্ষ্য প্রয়োজন হবে। পরস্পরের প্রতি দরদ, ভালোবাসা ও ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়ে একটি পরিবার হয়ে উঠতে পারে জান্নাতের একটি টুকরা।
পিতা-মাতার কাছে ছেলে ও মেয়ে কোনো পার্থক্য নেই। খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, লেখাপড়া করার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করার সুযোগ নেই। বরং কোনো উপঢৌকন নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে প্রথমে মেয়েকে দেয়ারই তাগিদ রয়েছে। কোনো পিতা-মাতা তার মেয়েকে (এক বা একাধিক) উত্তমভাবে লালন-পালন ও দ্বীন শিক্ষা শেষে উত্তম পাত্রে সমর্পণ করলে হাদিসের ভাষায় জান্নাতে তার ও রসূল (সা)-এর অবস্থান হবে একত্রে।
পিতার অনুপস্থিতিতে বোনের ভরণ-পোষণ, লেখাপড়া, দ্বীন শেখানো ও বিয়ে-সাদী সব দায়িত্ব ভাইয়ের এবং বিনিময়ে ভাই প্রভূত ছওয়াবের অধিকারী হবে। কুরআনে আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদাচরণের যে তাগিদ রয়েছে তাতে ভাই-বোন হলো সবচেয়ে নিকটতম।
একটি অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়, উত্তরাধিকার আইনে ইসলাম নারীকে পুরুষ অপেক্ষা অর্ধেক দান করেছে। এই অভিযোগ তারাই করে যারা তাদের বোনকে অর্ধেক সম্পত্তি দিতে কার্পণ্য করে। বুঝতে হবে, এটি আল্লাহর বিধান এবং আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি বেইনসাফী করতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবে ইসলাম নারীকে দায়িত্ব পালনে ইহসান করেছে। পিতার সংসারে, পিতার অবর্তমানে ভাই এবং স্বামীর সংসারে একজন নারীর পূর্ণ নিরাপত্তা রয়েছে। নারীর নিজস্ব উপার্জন বা আয় সে খরচ করতে বাধ্য নন এবং সে খরচ করলে প্রভূত ছওয়াবের অধিকারী হবে ও জান্নাত প্রাপ্তি সহজ হবে।
একটি উদাহরণ দিলে উত্তরাধিকার আইনের ন্যায্যতা উপলব্ধি করা যায়। মনে করি, একজন লোক তার এক ছেলে, এক মেয়ে ও ১৫ লক্ষ টাকা রেখে মারা গেলেন। এমতাবস্থায় ছেলে ১০ লক্ষ ও মেয়ে ৫ লক্ষ টাকা পাবে। মেয়ে অবিবাহিত হলে ভাই হিসেবে বোনের ভরণ-পোষণ ও বিয়ে-সাদীর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব ভাইয়ের। ভাই বোনের বিয়েতে তিন লক্ষ টাকা খরচ করলো। ভাইয়ের সংসারে বোনের খরচ ঐচ্ছিক। ধরে নেই, বিয়েতে বোন মহরানা পেল তিন লক্ষ টাকা। দেখা যাবে, ভাইয়ের অর্থ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং বোনের অর্থ বেড়ে যাচ্ছে। এভাবেই ইসলাম নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
আল্লাহর রসূল (সা) নারীর জান্নাতপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, ফরজ ইবাদতসমূহ পালন ও স্বামীর আনুগত্য করলে একজন নারী যে দরজা দিয়ে খুশি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আল্লাহপাক নারীর জন্য জান্নাতে যাওয়া সহজ করে দিয়েছেন।
পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য পর্দা মেনে চলা ইসলামে ফরজ। পর্দার প্রশ্নে মনে হয় নারী আটকে যাবে। মি’রাজে আল্লাহর রসূল (সা) বেপর্দা চলাফেরা নারীকে জাহান্নামে চুল বেঁধে লটকানো অবস্থায় শাস্তি ভোগরত দেখেছেন। পর্দা বলতে এখানে আমি আমার বোনদের নেকাব পরার কথা বলছি না; ন্যূনতম সতর আবৃত করার কথা বলছি। নেকাব অতি উত্তম এবং আমেরিকায় অবস্থানরত একজন বাঙালি ডাক্তারের ভিডিও শুনেছিলাম, তিনি বলেছিলেন, নেকাব পরিহিতা মহিলারা করোনা থেকে অনেকখানি নিরাপদ। আলহামদু লিল্লাহ।
নারীদের একটি বিরাট অংশ পর্দা মেনে চলে। এটি আশার দিক। রাস্তায় পর্দায় চলা নারীকে দেখলে আমার বলতে ইচ্ছা হয়, আপনি জান্নাতি। না, এমন কথা বলার অধিকার আমার নেই। তবে আশা করি, আল্লাহপাক পর্দায় চলা তাঁর বান্দীদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১৬.০৮.২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment