ইসলামে হত্যা, চুরি, ডাকাতি, রহাজানি যা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে সেসব অপরাধের পারলৌকিক শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও কঠোর দন্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। হত্যার বদৌলে হত্যা, চুরির অপরাধে হাত কেটে দেয়া এবং ডাকাতি, রাহাজানি, লুটতরাজ ইত্যাদি অপরাধে এক হাত ও বিপরিত এক পা (ডান হাত ও বাম পা) কর্তনের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহপাক মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মানকে পবিত্র ও নিরাপদ করেছেন। যে কোনোভাবে ক্ষতিসাধন করা কবিরা গুনাহ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হতে পারে কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করে, গালি দিয়ে, ওজনে কম দিয়ে, ভেজাল দিয়ে বা যে কোনো পন্থায় ক্ষতিসাধন করা অপরাধ।
চুরি প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘পুরুষ কিংবা নারী চুরি করলে তাদের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর নির্দেশিত আদর্শ দন্ড। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’-সূরা মায়েদা ৩৮। সমাজের মানুষ যাতে চুরির অপরাধে শাস্তির বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে সেজন্য চোরের কর্তিত হাত (কব্জি পর্যন্ত কাটা হাত) ঘাড়ের সাথে ঝুলিয়ে রাখার কথাও হাদিসে বলা হয়েছে। যে কোনো ধরনের চুরিতে হাত কাটা নয়। সে সব বিস্তারিত বিষয় এবং এখানে আমরা আলোচনায় যাব না। আমরা বুঝি, চুরি অর্থ মানুষের অগোচরে কারো সম্পদ হস্তগত করা।
ডাকাতি, রাহাজানি সন্ত্রাস ও বিদ্রোহের শাস্তি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় বিপর্যয়কর ও ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে। অথবা বিপরিত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে। অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। দুনিয়ায় এটাই তাদের লাঞ্ছনা এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি’- সূরা মায়েদা ৩৩। আসলে আল্লাহর সাথে যুদ্ধ সম্ভব নয়, তাঁর বান্দাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে (ডাকাতি, রাহাজানি-সন্ত্রাস) তাঁর নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তেমনি আল্লাহর ক্ষুধার্ত বান্দাদের খাওয়ানোকে তাঁকে খাওয়ানো বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমি নিজে ফকিহ নই বা সঠিক জানিও না। সমাজের অবক্ষয় দেখে আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছি। আমি চাই, সমাজে দুর্নীতিবাজদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হোক এবং মানুষ দুর্নীতি থেকে ফিরে আসুক। অফিস-আদালতে খেয়ানত ও ঘুষ ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। মালামাল ক্রয়ে খেয়ানতের কথা প্রায়ই শোনা যায় এবং পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়। একাজগুলো গোপনে ও অনেকের যোগসাজসেই হয়ে থাকে এবং গুনাহের ব্যাপারে সবাই সমান। যেহেতু চুপিসারে হয়ে থাকে তাই সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে খেয়ানতকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্টদের চুরির অপরাধে হাত কর্তনই মনে হয় যুক্তিযুক্ত। আর যদি তাওবা করে খেয়ানতকৃত সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরৎ দিয়ে পরিশুদ্ধ হতে চায় তাহলে তাদেরকে ক্ষমা করা যায়।
ঘুষের বিষয়টি কোন্ পর্যায়ে পড়ে সেটি ফকিহদের বিষয়। চুরি না ডাকাতি সেটি গবেষণা করে দেখতে হবে। চুরি নয়, এটি বোঝা যায় ঘুষগ্রহীতা লুকিয়ে গ্রহণ করে না বরং ঘুষদাতা জ্ঞাতসারেই দিয়ে থাকে। আমার ধারণা ঘুষদাতা তার অবৈধ স্বার্থ হাসিলের জন্য যদি ঘুষ দিয়ে থাকে তাহলে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই ন্যূনতম চুরির অপরাধে শাস্তি পেতে পারে। আর বৈধ ও ন্যায্য কাজ করার ক্ষেত্রে যদি কেউ ঘুষ দিতে বাধ্য হয় তাহলে ঘুষদাতা রেহাই পেতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে ঘুষগ্রহীতাকে ডাকাতির শাস্তি দেয়া যেতে পারে। তাওবা করে সংশোধিত হলে ভিন্ন কথা, কিন্তু হত্যা, চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধে কারো বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রুজু হলে এবং তা প্রমাণিত হলে দন্ড কার্যকর করা আল্লাহর হক।
সমাজে যেভাবে দুর্নীতি প্রসার লাভ করেছে তা দূর করার জন্য মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই। আখিরাতে জবাবদিহির অনুভূতি মানুষের মধ্যে দারুণভাবে লোপ পেয়েছে। ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মতপার্থক্যে লিপ্ত। মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগানোর জন্য যে কর্মপ্রচেষ্টা দরকার তার বড় অভাব। মসজিদগুলো সুন্দর ও চাক্যচিক্যময় হলেও মানুষের ব্যবহারিক জীবনে ইসলামের উপস্থিতি লক্ষণীয় নয়। বরং ঘুষের টাকা মসজিদে দান করে জান্নাতে ঘর বানানো স্বপ্নে সবাই বিভোর। অথচ হালাল রুজি ইবাদতের পূর্বশর্ত। আল্লাহপাক আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন এবং সব ধরনের দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১৪.০৮.২০২০।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment