Skip to main content

দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও সংঘবদ্ধ জীবনের অপরিহার্যতা

ইসলাম আল্লাহপ্রদত্ত এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সৃষ্টির প্রথম মানুষ ও নবী আদম (আ) থেকে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা) সকলেই একই দ্বীন (ইসলাম) প্রচার ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আল্লাহপাক তাঁর প্রদত্ত দ্বীন (ইসলাম) পূর্ণভাবে মেনে চলার জন্য তাঁর বান্দাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাঁর বাণী, ‘হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা পুরোপুরিই ইসলামে দাখিল হয়ে যাও এবং কোনো অবস্থাতেই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন’- সূরা বাকারা ২০৮। একজন ব্যিক্তর ধর্মে মুসলিম, রাজনীতিতে ধর্ম নিরপেক্ষ/গণতন্ত্রী, অর্থনীতিতে পুঁজিবাদী/সমাজবাদী, সংস্কৃতিতে প্রবৃত্তিপুজারি/ভোগবাদী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চেতনা লাভের পর থেকে মৃত্যু এবং সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় একজন ব্যক্তি সর্বক্ষণ আল্লাহর গোলাম এবং গোলামীর বাইরে যে জীবন সেটি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণের জীবন। আল্লাহর বাণী, ‘যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না, পরকালে সে হবে চরমভাবে ব্যর্থ’- আলে ইমরান ৮৫। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত না থাকলে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল (মুসলিম বা অনুগত) হওয়া কি সম্ভব? এককথায় জবাব, না। এজন্য আল্লাহপাক সকল নবী-রসূলকে সমাজে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েই পাঠিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাঁর বিশিষ্ট কয়েকজন নবীর নাম উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য দ্বীনের সেই নিয়ম-বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যার আদেশ তিনি নুহকে দিয়েছিলেন, যা আমি তোমার (মুহাম্মদ সা.) প্রতি আদেশ করেছি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহিম, মুসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না’- সূরা শূরা ১৩। আল্লাহপাক তাঁর সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা)-কে পাঠিয়েছেন তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। এ কথাটি তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কুরআন মজিদে তিন জায়গায় সূরা তাওবা (৩৩ নং), সূরা ফাতাহ্ (২৮ নং) ও সূরা সফে (৯ নং) উল্লেখ করেছেন। তাঁর বাণী, ‘তিনি আপন রসূলকে হেদায়াত ও সঠিক জীবনব্যবস্থা (দ্বীনে হক) দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে সকল জীবনব্যবস্থার ওপর একে বিজয়ী করে দিতে পারেন, মুশরিকদের কাছে তা যতই অসহনীয় হোক’- সূরা সফ ৯। রাষ্ট্র বা সমাজে দ্বীন কায়েম থাকলে দ্বীন মানা সহজ হয়ে যায়। এজন্য আল্লাহপাক তাঁর বিধান (শরীয়ত) ক্রমান্বয়ে নাজিল করেছেন এবং অধিকাংশ বিধি-বিধান মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরই নাজিল হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে প্রত্যেকটি আদর্শই তার অনুসারীদের কাছে দাবী করে যে, সেই আদর্শ সমাজ/রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাবে। একজন সমাজতন্ত্রী তখনই সমাজতন্ত্রী যখন সে সমাজতন্ত্র নামক একটি আদর্শ বিশ্বাস করে, সে অনুসারে নিজেকে গড়ে তুলে ও তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। অন্য কোনো জীবনাদর্শের অধীনে সে কখনো সন্তুষ্ট থাকে না। তেমনিভাবে একজন মুসলিম তাকেই বলে, যে ইসলামকে নিজের জীবনাদর্শ হিসেবে বিশ্বাস করে, জীবনে ইসলাম মেনে চলে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালায়। আল্লাহর ঘোষণা মোতাবেক ইসলাম ছাড়া আর যা কিছু সবই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ। আল্লাহ বলেছেন, ‘পুরোপুরি ইসলামে দাখিল হও’। আংশিক মানা আল্লাহ গ্রহণ করেন না। আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো’- সূরা আন নহল ৩৬। কিছু মানা ও কিছু অমান্য করার পরিণতি ভয়াবহ বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, ‘তোমরা কি দ্বীনের কিছু অংশ মানবে এবং কিছু অংশ অমান্য করবে, তাহলে দুনিয়ার জীবনে রয়েছে জিল্লতি ও আখিরাতে রয়েছে ভয়াবহ আজাব’- সূরা বাকারা ৮৫। ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে আল্লাহ তায়ালা সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে জান্নাতের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন (সূরা সফ)। আল্লাহপাক ঈমান ও নেক আমলে সমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেও একটি অনৈসলামিক সমাজে নেক আমল করে জান্নাতে যাওয়া দুরূহ কাজ। জান্নাতে যাওয়ার সহজ পথ হলো তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানো। কুরআন মজিদে নানাভাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ পথে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কখনো বলেছেন, আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মু’মিনদের জান-মাল খরিদ করে নিয়েছেন, তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মারে ও মরে- সূরা তাওবা ১১১। হাজীদের পানি পান করানো ও মসজিদে হারামের আবাদ করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেছেন, আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাবান তারাই যারা পরকালের প্রতি ঈমান এনেছে ও জিহাদ করেছে- সূরা তাওবা ১৯ (অর্থাৎ কোনো আমলই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর সাথে তুলনীয় নয়)। আমরা স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি যে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ মু’মিনের জন্য অত্যাবশ্যক। আল্লাহর রসূল (সা) নামাযকে দ্বীনের ভিত্তি এবং জিহাদকে বলেছেন দ্বীনের চূড়া। মানুষ ভিত্তি গড়ে চূড়ায় পৌঁছার লক্ষ্যে। ঈমান, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত দ্বীনের খুঁটি এবং এর ছাদ হলো ইসলামী হুকুমাত বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। ছাদ বা চালা ছাড়া স্রেফ চার কোনে চারটি খুঁটি থেকে ঘরের কল্যাণকারিতা হতে মানুষ বঞ্চিত হয় (অর্থাৎ রোদ-বৃষ্টি, ঝড় থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না)। তেমনি আল্লাহর দ্বীন সমাজে প্রতিষ্ঠিত না থাকায় মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য বা কল্যাণকারিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইসলামের আগমন ঘটেছে মূলত সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। খন্ডিতভাবে ইসলাম মানার ফলশ্রুতিতে আজ মুসলিমরা বিশ্বব্যাপী লাঞ্ছিত, অপমানিত এবং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি হিসেবে পরিচিত। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, জিহাদ অর্থ প্রাণান্ত প্রচেষ্টা; ব্যক্তি বা দলীয়ভাবে রাষ্ট্র/সরকার বা কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জিহাদ নয়। যুদ্ধ কেবল সরকার বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করার অনুমোদন রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা) দীর্ঘ তেরোটা বছর একতরফা মার খেয়েছেন; কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি বা গুপ্ত হত্যা চালাননি। আর তিনিই মদীনায় একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর দশটি বছর ক্রমাগত যুদ্ধ করেছেন। ছদ্মবেশী ইসলামের শত্রুরা জিহাদের অপব্যাখ্যা করে অনেক সময় অজ্ঞ লোকদেরকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উস্কানি দিয়ে শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম ইসলামকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমাদের যুবসমাজকে এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দ্বীনের সঠিক জ্ঞান এবং ইসলামী আন্দোলনকে রসূল (সা)-এর জীবন থেকে উপলব্ধি করা। উপরের আলোচনায় আমরা উপলব্ধি করেছি যে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করা সকল মু’মিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। সাথে সাথে আমাদের বুঝতে হবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই নবী-রসূলগণ মানুষকে আল্লাহর আনুগত্যের সাথে সাথে তাঁদেরকে অনুসরণের জন্য দাওয়াত প্রদান করেছেন। ফলে শুরু থেকেই একটি মজবুত সংগঠনে তা রূপ লাভ করেছে। আল্লাহপাকের নির্দেশ, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’- সূরা আলে ইমরান ১০৩। তিনি আরো বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে, ন্যায়ের আদেশ দেবে, আর অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে, এরাই হচ্ছে সফলকাম’- সূরা আলে ইমরান ১০৪। মু’মিনদের জামায়াতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত বলতে গিয়ে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই ভালোবাসেন যারা আল্লাহর রাস্তায় শীসাঢালা প্রাচীরের মতো জামায়াতবদ্ধভাবে লড়াই করে’- সূরা সফ ৪। জামায়াতবদ্ধ জীবযাপনের জন্য আল্লাহর রসূল (সা) তাঁর উম্মতদেরকে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছেন। হারেস আল-আশআরী (রা) বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ প্রদান করছি, আল্লাহ এগুলো আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এক. জামায়াত বা দলবদ্ধ হবে, দুই. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে, তিন. তার আদেশ মেনে চলবে, চার. হিজরত করবে অথবা আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে এবং পাঁচ. আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। যে ব্যক্তি জামায়াত বা সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল সে যেন নিজের কাঁধ থেকে ইসলামের রশি বা বাঁধন খুলে ফেললো, যতক্ষণ না সে সংগঠনে ফিরে আসবে। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম-নীতির দিকে লোকদেরকে ডাকবে সে জাহান্নামের জ্বালানী হবে, যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করে। আহমাদ, তিরমিযী। জামাতবদ্ধ জিন্দেগী প্রসঙ্গে ওমর (রা) বলেন, ‘জামায়াত বা সংগঠন ছাড়া ইসলাম নেই, নেতৃত্ব ছাড়া সংগঠন নেই এবং আনুগত্য ছাড়া নেতৃত্ব নেই’। আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেছেন, ‘সফরে একসঙ্গে তিনজন থাকলে তাদের মধ্য থেকে একজনকে যেন অবশ্যই আমীর বা নেতা বানিয়ে নেয়’- আবু দাউদ। আল্লাহপাক তাঁর ঈমানদার বান্দাদেরকে সুশৃঙ্খল ও আনুগত্যশীল জীবন যাপনের তাগিদ দিয়েছেন। তাঁর বাণী, ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রসূলের (সা) আনুগত্য করো এবং তোমাদের দায়িত্বশীলদের’- সূরা আন নিসা ৫৯। রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহর আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমাকে অমান্য করলো সে আল্লাহকে অমান্য করলো’- বুখারি। রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমীর বা নেতার আনুগত্য করলো সে যেন আমারই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমীর বা নেতাকে অমান্য করলো সে যেন আমাকেই অমান্য করলো’- বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ। জামাতবদ্ধ জীবন ও নেতার (ইমামের) আনুগত্যের সীমা আমরা উপলব্ধি করতে পারি নামাযের মাধ্যমে। একাকী ও নিভৃতে ইবাদত-বন্দেগীতে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। যেমন, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামায ও দান-সদকা। কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায আদায়ের জন্য একটি ঘর থাকতে হবে (মসজিদ বা আল্লাহর ঘর হিসেবে পরিচিত) এবং আযানের সাথে সাথে সেখানে ছুটে আসতে হবে। বিনা ওজরে মসজিদে না এসে কোনো উপায় নেই। একজন অন্ধ সাহাবীকেও আল্লাহর রসূল (সা) জামায়াত থেকে অনুপস্থিত থাকার অনুমতি দেননি। জামায়াতে নামায একজন নেতার (ইমাম) অধীনে আদায় করতে হয় এবং সপ্তাহে জু’মার দিনে ইমামের বক্তৃতা (খুতবা) শ্রবণ ফরজ করে দেয়া হয়েছে। এতো মনোযোগের সাথে শুনতে হয় যে পাশে কেউ কথা বললে, ‘ভাই চুপ করো’- তাও বলা যায় না। আবার খতিব মহোদয়ের মিম্বরে দাঁড়ানোর পূর্বেই মসজিদে উপস্থিত হতে হয়। অন্যথায় ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে, কারণ ফেরেশতারা মুসল্লিদের আগমনের ভিত্তিতে ছওয়াব লিখতে থাকেন এবং খুতবা শুরু হওয়ার সাথে ছওয়াব লেখার কাজ বন্ধ করে তাঁরা খুতবা শোনায় মনোযোগী হন। ইমামের (নেতার) আনুগত্যের সীমাও আমরা জানতে পারি। ইমাম সাহেব নামাযে ফরজ ভুল করলে নামায পুনরায় আদায় করতে হয় এবং ওয়াজিব ভুল করলে সহু সেজদা নিয়ে সংশোধন করে নিতে হয়। নামাযে সুন্নাত ও মুস্তাহাব ভুল করলে সেটি ধর্তব্যের মধ্যে নয়। অথচ মুসলিম উম্মাহর মাঝে ঝগড়া-বিবাদ ও বিভেদ সবই সুন্নাত-মুস্তাহাব নিয়ে। সুন্নাত-মুস্তাহাব বিবেচনা ছাড়াই নামাযের মতো ইবাদত সম্পন্ন হচ্ছে; অথচ উম্মাহর ঐক্যের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্নাত-মুস্তাহাব পালনে ভিন্নতার কারণে। এসবই পরিপূরক ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী বিষয়। আমাদের আলোচনায় স্পষ্ট করা হয়েছে যে ইকামতে দ্বীন মু’মিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য এবং এ লক্ষ্যে জামায়াতবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে জামায়াত একটি হবে না একাধিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা)-এর নেতৃত্বে যে জামায়াত সেটি ছিল আল জামায়াত। এর বাইরে অবস্থান করলে সে মুরতাদ হয়ে যেত। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে অর্থাৎ তাঁর পরবর্তী ও বর্তমানে দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে একাধিক জামায়াত বা সংগঠন থাকতে পারে বা গড়ে উঠতে পারে। উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি হলে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকতে পারে না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ-ঘৃণা মু’মিনের জন্য কাম্য নয়। হিংসা শুধু কবীরা গুনাহ নয়, ব্যক্তির নেক আমল ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন শুকনা কাঠ ভস্ম করে দেয় (হাদিস)। হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলেছেন (সূরা ফালাক)। উম্মাহর ঐক্য সময়ের দাবী। দ্বীন প্রতিষ্ঠার একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে ভিন্ন ভিন্ন নামে জামায়াত গঠিত হতে পারে; তাতে কোনো সমস্যা নেই। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ চায়, পরস্পর সৌহার্দ-সম্প্রীতি বজায় রেখে দ্বীনের খাদেমরা দাওয়াতে দ্বীন ও একামতে দ্বীনের কাজে নিয়োজিত থাকুক। আল্লাহপাক আমাদেরকে দ্বায়ী ইলাল্লাহ হিসেবে ভূমিকা পালনের তাওফিক দান করুন। ৩০.০৮.২০২০।

Comments