Skip to main content

জু’মা আলোচনা

পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণই কুরবানির শিক্ষা ৩১ জুলাই ২০২০ কুচিয়ামোড়া জামে মসজিদে ঈদের প্রক্কালে সমবেত মুছল্লিদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলার সুযোগ হয়। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর মাঝে উৎসব রয়েছে এবং সবগুলোই তাদের ধর্মীয় নেতার সাথে সম্পর্কিত। যেমন, যীশু খ্রীষ্টের (ইসা আ) জন্মদিনে ‘বড়দিন’, গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনে ‘বৌদ্ধ পূর্ণিমা’, শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনে জন্মাষ্টমী ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সাথে আমাদের প্রিয়তম নবীর (সা) কোনো সম্পর্ক নেই, না তাঁর জন্ম, না হিজরত। ঈদুল ফিতর অর্থাৎ রোযা ভাঙ্গার আনন্দ, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে গুনাহ মুক্তির বহিপ্রকাশ ঈদুল ফিতর এবং দ্বিতীয়ত, মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ)-এর চরম আত্মত্যাগের স্মরণই হলো ঈদুল আযহা। মুসলমানদের জীবনে তৃতীয় কোনো ঈদ নেই। ব্যক্তিপূজা ও সৃষ্টিপূজা ইসলামে নেই। শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব, মহানত্ব যা সবই আল্লাহর এবং প্রশংসাও কেবল তাঁরই। হযরত ইব্রাহিম (আ)-এর জীবনে পরীক্ষার পর পরীক্ষা। নিজ হাতে মূর্তি ভেঙ্গে মূর্তির অসারতা প্রমাণ করে তিনি নমরুদের রোষানলে পড়েন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মূর্তিপূজার কারণে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হন এবং জনগণের মাঝে ভীতি সঞ্চারের লক্ষ্যে তাঁকে প্রকাশ্যে আগুনে পুড়ে মারার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি ছিলেন আল্লাহর উপর নির্ভরশীল এবং তিনি তাঁকে হেফাজত করেন। এতে বোঝা যায়, আল্লাহপাকের হেফাজতই বড় এবং তিনি হেফাজত করলে কোনো কিছুই বান্দাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। আমরা এবার করোনার ক্ষেত্রে দেখছি, বস্তিবাসী ও শ্রমজীবী মানুষ যারা করোনার ভীতি উপেক্ষা করে চলাফেরা করছেন তারা করোনায় আক্রান্ত না হয়ে অত্যন্ত সতর্ক জীবনযাপনকারী ব্যক্তিবর্গের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা যেমন আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হব সাথে সাথে বান্দা হিসেবে সতর্ক জীবন-যাপনও করবো। নমরুদের আগুন থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করে অজানা উদ্দেশ্যে রওনা হন। দেশ-বিদেশ ঘুরতে ঘুরতে তিনি বার্ধক্যে উপনীত হন। এ সময়ে আল্লাহর কাছে এক ধৈর্যশীল সন্তান চান। ইসমাইল (আ) জন্ম হলে তাঁকে নির্দেশ দেয়া হয় পরিবারকে মরুভূমিতে রেখে আসার। এমতাবস্থায় মা হাজেরা (আ) শুধু জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাদের রেখে যাওয়া কি আল্লাহর হুকুম’? জবাব দেন, হ্যাঁ। একটি পর্যায়ে পানি ফুরিয়ে যায় এবং পানির সন্ধানে তিনি সাফা ও মারওয়া দৌড়াদৌড়ি করেন। এমন সময়ে শিশু ইসমাইল (আ)-এর পায়ের আঘাতে জমজমের সৃষ্টি হয়। মানুষের হেদায়াতের জন্য এই জমজমই যথেষ্ট হতে পারে। ইসমাইল (আ) দৌড়াদৌড়ি করার বয়সে উপনীত হলে ইব্রাহিম (আ) স্বপ্ন দেখেন যে তাকে তিনি যবেহ করছেন। সন্তানকে স্বপ্নের কথা বলা হলে তিনি জবাব দেন, ‘আপনি তাই করুন যা করতে আদিষ্ট হয়েছেন। ইনশা-আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের একজন পাবেন’। সন্তানকে নিয়ে যবেহ স্থানে অগ্রসর হলে শয়তান মা হাজেরাকে (আ) প্ররোচনা দেয় এবং তিনি কঙ্কর নিক্ষেপ করে শয়তানকে তাড়িয়ে দেন। এরপর যখন পিতা-পুত্র আল্লাহর হুকুমের কাছে নিজেদেরকে সঁপে দেন তখন আল্লাহ একটি পশুর বিনিময়ে ইসমাইল (আ)-কে বাঁচিয়ে দেন এবং পরবর্তীকালের লোকদের জন্য স্মরণ হিসেবে পশু কুরবানি জারি করে দেন। হজ্জের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে হযরত ইব্রাহিম (আ) ও তাঁর পরিবারের চরম আত্মত্যাগের স্মরণই মূলত মুখ্য। হযরত ইব্রাহিম (আ) ছিলেন একজন মুসলিম (অনুগত)। আল্লাহ তায়ালার বিধান পালনের ক্ষেত্রে তাঁর নীতি ছিল ‘শুনলাম ও মেনে নিলাম’। তিনি কোনো প্রশ্ন তুলেননি। এভাবে পরিপূর্ণ আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার মাধ্যমে তিনি হয়ে পড়েন ‘খলিলুল্লাহ’। কুরবানি আমাদেরকে সেই শিক্ষাই দিচ্ছে যে বিনা বাক্যে আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে হবে। মুসলমান হওয়ার জন্য ন্যূনতম শর্ত নামাযের ব্যাপারে আমাদের আন্তরিক হওয়ার দরকার। মূলত জান্নাতে প্রবেশের এটিই চাবি। আসুন, আল্লাহর হারাম সবকিছু বর্জন করে তাঁর হুকুম পালনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি লাভের জন্য আমরা সবাই সচেষ্ট হই। সংক্ষেপিত।

Comments