হাদিসের পাঠ
০৩.০৭.২০২০
১. হযরত আবু বুরদাহ তাঁর দাদা আবু মুসা আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, ‘তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন করো, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না এবং মানুষকে শান্তি ও স্বস্তি দাও, মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িও না’- বুখারি শরিফ ৫৬৮৭।
২. হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রসূলুল্লাহ (সা)-কে যখনই দু’টি ব্যাপারে ইখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে, তখন তিনি দু’টির মধ্যে যেটি সহজতর ছিল, সেটি গ্রহণ করেছেন, তবে শর্ত হলো, তা যেন গুনাহের কাজ না হয়। তা গুনাহের কাজ হলে তিনি তা হতে সবচেয়ে বেশি দূরে অবস্থান করতেন। নবী করীম (সা) কোনো ব্যাপারে স্বীয় স্বার্থে কখনও প্রতিশোধ নেননি। তবে কোনো লোক যখন আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলতো, তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেই লোককে বিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করতেন’- বুখারি শরিফ ৫৬৮৯
ফজর বাদে আমাদের বাসায় নিয়মিত হাদিস পাঠ ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়। সেখানে আমরা সদস্য চারজন। সাথে সূরা মশকও হয়ে থাকে। উপরের হাদিস দু’টি আজ পাঠ করা হয়। আমার ছোট ছেলে আতিক মাঝে-মধ্যে শেয়ার করে। আজকের বিষয়টি আমি একটু আলোচনা করতে চাই।
ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জশীল আমাদের এই দ্বীন। অত্যন্ত উদার ও প্রশস্ত এ দ্বীন, সবার পক্ষে মেনে চলা অত্যন্ত সহজ। আল্লাহর বাণী, ‘দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি’-সূরা হাজ্জ ৭৮ (অংশবিশেষ)।
দ্বীনের মধ্যে ফরজ-ওয়াজিবের ব্যাপারে কোনো মত-পার্থক্য নেই এবং হারামও সুনির্দিষ্ট। এর বাইরে যা কিছু আছে (সুন্নাত-মুস্তাহাব) তা পালনের ক্ষেত্রে ফকিহ বা স্কলারদের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে। এ ভিন্নতা দলাদলি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়, বরং উম্মাহ যাতে সহজভাবে পালনের মাধ্যমে নেকি হাসিল করতে পারে তজ্জন্য স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সা) নিজেই ভিন্ন ভিন্ন আমল করে দেখিয়ে দিয়েছেন। রসূল (সা)-কে অনুসরণের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম (রা) ছিলেন আমাদের আদর্শ, যিনি যেভাবে দেখিয়েছেন তিনি সেভাবে বর্ণনা করেছেন এবং বর্ণনার ভিন্নতার কারণে ফিকাহশাস্ত্রে বিভিন্ন মতের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে, বিকল্প পন্থার মধ্যে যেটি সহজতর রসূল (সা) সেটিই গ্রহণ করতেন এবং অনুসরণের ক্ষেত্রে উম্মাহর জন্য এটি একটি উদাহরণ। মতপার্থক্যগত বিষয়ে যে কোনো একটি মত গ্রহণের সুযোগ স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সা) দিয়েছেন সেখানে একে অপরের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করার সুযোগ কোথায়?
যারা দ্বায়ী ইলাল্লাহ তাদের উচিৎ মানুষকে আশার বাণী শোনানো, হতাশ করা নয়। আল্লাহর রসূল (সা) কঠোরতা পরিহারের কথা বলেছেন। গুনাহের কাজ না হলে রসূল (সা) সহজটি গ্রহণ করতেন। অহেতুক সন্দেহ-সংশয় পোষণও মু’মিনের উচিৎ নয়, মু’মিন সব সময় সুধারণা পোষণ করবে। ব্যক্তিগত বিষয়ে আল্লাহর রসূল (সা) কখনই প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। ক্ষমার চেয়ে মহৎ গুণ আর নেই। ক্ষমা করলে দু’টি লাভ-এক. মানসিক প্রশান্তি, দুই. আখিরাতে আল্লাহর ক্ষমা। তবে আল্লাহর নাফরমানি কিছু ঘটলে রসূল (সা) প্রতিশোধ গ্রহণে তখন অবহেলা করতেন না।
দ্বীনের প্রচার ও তাজকিয়ার ক্ষেত্রে ডিজিটাল যুগে সামাজিক মাধ্যমসমূহ বড় ভূমিকা পালন করছে। ইউটিউব, ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো নানা মাধ্যমে খুব সহজেই দ্বীনকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা যায় এবং আল্লাহপাকের মেহেরবানিতে অনেকেই দ্বীনের বড় খেদমত করে যাচ্ছেন। রসূল (সা)-এর বাণী, ‘মানুষকে শান্তি ও স্বস্তি দাও, মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িও না’। দুর্ভাগ্য, খুব স্বল্প সংখ্যক দ্বীনের খাদেম এই নীতি পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন, যা উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ না করে আরো বিচ্ছিন্ন করছে।
হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ কোনো মু’মিনের কাজ নয়। এটি কবিরা গুনাহ। হিংসা সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ নিজেই হিংসুকের অনিষ্ট থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে বলেছেন (সূরা ফালাক)। তাতে বোঝা যায় হিংসা-বিদ্বেষ কত জঘন্য অপরাধ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে যারা দলাদলি করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহপাকের সতর্ক বাণী রয়েছে, ‘তাদের মতো হয়ো না যারা দ্বীনে মতভেদ সৃষ্টি, বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয় আর প্রত্যেক দল উল্লাস করে যে, তারাই সঠিক ও সত্যের পথে আছে’-সূরা রুম ৩২। দলাদলি করাকে মুশরিকদের কাজ এবং অতীত জাতিসমূহের ধ্বংসের কারণ বলেও কুরআন-হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহপাক আমাদেরকে উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট ও পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষমূলক সব ধরনের তৎপরতা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment