কুরবানি অর্থ ত্যাগস্বীকার, আর একটি অর্থ নৈকট্যলাভ। পৃথিবীর ইতিহাস অজস্র ত্যাগ ও কুরবানিতে পূর্ণ। কুরবানি নিয়ে ধারাবাহিক লেখার ইচ্ছা রয়েছে। আমার প্রতি অনেকের পরামর্শ ছোট ছোট করে লেখার। তাঁদের যুক্তি, বড় লেখা এখন আর কেউ পড়তে চায় না। কিন্তু আমার যেন তা হয়ে উঠে না। প্রচুর লেখা জমেছে। চার শতাধিক। অনেকটা নেশা হয়ে গেছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেখার উপকরণ চলে আসে। পত্র-পত্রিকায় মাঝে-মধ্যে ছাপা হয়। সাধারণত টাকা-পয়সা পাওয়া যায় না। গতকাল হঠাৎ করে একজন ফোন দিয়ে জানালেন, ‘স্যার, আমরা আপনার একটি লেখা ছাপিয়েছি, ১০০০/- টাকা পাঠাব এবং বিকাশ নং দিন’। বললাম, যে নম্বরে ফোন দিয়েছেন সেটিই আমার বিকাশ নম্বর এবং তৎক্ষণাত টাকাটা চলে আসলো। খুব ভালো লাগলো।
বলে রাখি, আমার কোনো লেখা কোথাও প্রকাশ করতে (পত্র-পত্রিকা, ফেসবুক বা যে কোনো ক্ষেত্রে) অনুমতির প্রয়োজন নেই বা আমার নাম উল্লেখ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরও দরকার নেই। আল্লাহর অধিক বান্দার কাছে পৌঁছুক, এতেই আমি সন্তুষ্ট। আমার লেখার উপজীব্য ইসলাম। লেখালেখি আমার পক্ষে দাওয়াতের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমাদের এসব ছিটেফোটা আমল আল্লাহপাক যদি দয়া করে কবুল করেন, তাহলে সেটিই হবে বড় প্রাপ্তি। কেউ স্বেচ্ছায় কোনো টাকা-পয়সা দিলে সেটি আমার প্রাপ্য বা দাবী নয় বরং মনে করবো আমার প্রতি অনুগ্রহ।
কুরবানি নিয়ে লিখতে গেলে মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ)-এর আত্মত্যাগের কথা চলে আসে। আল্লাহর বন্ধু (খলিল), বড় প্রিয়ভাজন অথচ পরীক্ষার পর পরীক্ষা। আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। আল্লাহর বান্দাদের ওপর নানাভাবে পরীক্ষা এসেছে। তাগুতের পক্ষ থেকে অগণিত নবী-রসূলের ওপর পরীক্ষার কথা আমরা জানি। তন্মধ্যে হযরত ইব্রাহিম (আ) ও মুসা (আ)সহ স্বল্পসংখ্যক নবীর কাহিনী কুরআনে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত ইব্রাহিম (আ)-কে নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ এবং মুসা (আ)-এর আগমন ঠেকানোর জন্য তাঁর কওমের সকল পুত্রসন্তানকে জন্মের সাথে সাথে হত্যা ও মুসা (আ)-কে সাগরে ভাসিয়ে দেয়ার ঘটনা আমাদের সবারই জানা।
আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা কম নয়। হযরত আইউব (আ)-এর মত রোগ-ব্যাধি হয়ত দ্বিতীয় আর কেউ ভোগ করেননি। অথচ তিনি আল্লাহর নবী এবং খুবই প্রিয়ভাজন। হযরত ইব্রাহিম (আ)-এর পিতার মত নিষ্ঠুর পিতা হয়ত আর পাওয়া যাবে না। সন্তানকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপে সে ছিল নমরুদের সহযোগী। লুত (আ)-এর স্ত্রীর মত এত হতভাগা আর কেউ কি আছে? পয়গম্বরের স্ত্রী, লুত (আ)-কে জানার ক্ষেত্রে তার মত আর কেউ ছিল না। অথচ চরম মুহূর্তে স্বামীর সঙ্গী না হয়ে পেছনে পড়ে থাকা কওমের সাথী হয়ে ধ্বংস হয়ে গেল। আছিয়া (আ)-এর মত এত পাষাণ ও নিষ্ঠুর স্বামী (ফিরাউন) পৃথিবীতে হয়ত আর কেউ পাবে না। আর কেনান, নবী নূহ (আ)-এর পুত্র তার পিতাকে চিনলো না। ফলে নৌকার আরোহী না হয়ে সে ধ্বংস হয়ে গেল।
এসব ঘটনাবলী উদাহরণ হিসেবে আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের সম্মুখে পেশ করেছেন যাতে কোনো অবস্থাতেই তাঁর নেক বান্দারা হতাশ না পড়ে। সূরা তাগাবুনে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে কতিপয় শত্রু, তাদের প্রতি সতর্ক থাকবে। আর যদি ক্ষমা ও সহনশীলতার ব্যবহার করো এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দাও তাহলে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু। স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি সবসময় চোখজুড়ানো হবে ও দিল প্রশান্তকারী হবে, এমন সৌভাগ্য নাও আসতে পারে। তাই বলে তাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা বা সব সময় সেগুলো নিয়ে মনক্ষুণ্ণ হয়ে থাকাটা আল্লাহর পছন্দ নয়। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে উদার ও ক্ষমাশীল দেখতে চান এবং তার বিনিময়ে সেও আল্লাহকে ক্ষমাশীল পাবে।
পৃথিবীটা বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাগার। ধৈর্যাবলম্বনের মাধ্যমেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব। আল্লাহর দ্ব্যার্থহীন ঘোষণা, ‘নিশ্চয়ই তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’। কারো প্রতি দরদ ও ভালোবাসা এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষ যেন আমাদের পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। যাদের ভালোবাসায় আজ আমরা আখিরাতের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি সেদিন জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে বিনিময় হিসেবে দিতে আমরা প্রস্তুত হয়ে যাব। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে সুখে-দুখে সর্বাবস্থায় তোমার ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করো। আমিন। ০২.০৭. ২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment