Skip to main content

পরিবারে সময় দেয়া ইবাদত

মানবসভ্যতায় পরিবার একটি ক্ষুদ্র ইউনিট। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহপাক মানুষকে নির্দেশ প্রদান করেছেন নিজেকে ও পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে। পরিবার প্রধানের কাছে অন্যান্যরা আমানত এবং তাদের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাবাদ করা হবে। স্বামীকে কর্তৃত্বশীল করা হলেও কুরআনের বর্ণনানুসারে দু’জনের মর্যাদা পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। হাদিসে বলা হয়েছে স্ত্রী স্বামীর সংসারে দায়িত্বশীল এবং দায়িত্বের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আমি এভাবে উপস্থাপন করতে চাই- ‘সংসারে স্বামী যদি হন রাষ্ট্রপতি তাহলে স্ত্রী হবে তার অধীন প্রধানমন্ত্রী; যেখানে উভয়ে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সকল কাজ সম্পন্ন করবে। সংসারে বাবা-মা থাকলে এবং সন্তান বড় হলে তাদেরকেও পরামর্শে শরীক করতে হবে’। একটি আদর্শ পরিবারের রূপরেখা এমনই হওয়া দরকার। বিভিন্ন ক্যাটাগরির সদস্যের সমন্বয়ে পরিবার। সেখানে সকলের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে হবে। বৃদ্ধ বাবা-মা যেমন ভক্তি-শ্রদ্ধা পাওয়ার দাবীদার তেমনি সর্বকনিষ্ঠ সদস্যটি স্নেহ-আদর-ভালোবাসা পাওয়ার হকদার। কারো অধিকার উপেক্ষা করার মতো নয়। রসূলুল্লাহ (সা) সতর্ক করেছেন-‘যারা বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে না তারা আমাদের সমাজভুক্ত নয়’। সমাজভুক্ত নয় অর্থাৎ মুসলমানই না; তার আবার নামায-রোযা কোন্ কাজে আসবে? পরিবার ও পরিবারের বাইরে আল্লাহর বান্দাদের সাথে সদাচরণ করতে হবে। নম্র আচরণের দ্বারা আল্লাহ যা দান করেন, কর্ষক ব্যবহার ও অসদাচরণে কারণে বান্দাকে দেয়া থেকে বঞ্চিত করেন। এ সম্পর্কে অজস্র হাদিস রয়েছে। পরিবারের প্রতি উদাসীন থাকা গুনাহের কাজ। সন্তান আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। আল্লাহপাক যাকে সন্তান দেননি সেই কষ্টটা অনুভব করে। নেয়ামতের শুকরিয়া হিসেবে সন্তানের জন্য কেবল টাকা-পয়সা ও ব্যাংক-ব্যালেন্স রেখে যাওয়া নয়; বরং তাকে যথার্থ দ্বীন ও দুনিয়ার উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা বাবা-মার মৌলিক কর্তব্য। অনেক বাবা-মাকে দেখেছি, স্রেফ সন্তানকে শিক্ষাদানের লক্ষ্যে শহরে বাসা ভাড়া করে মা সন্তানের সাথে সেখানে অবস্থান করেন। আবার চাকুরীজীবী বাবা সন্তানের লেখাপড়ার স্বার্থে সারাটা জীবন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কষ্টকর জীবন যাপন করে। সবই করেন সন্তানের কল্যাণচিন্তায়। সন্তানের চরিত্র গঠনের লক্ষ্যে বাবা-মাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আরাম-আয়েশ ও টাকা-পয়সা ত্যাগ করার পাশাপাশি সন্তানের সম্মুখে নিজেদেরকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়। হাদিসের ভাষায়, সন্তানকে নৈতিক চরিত্র শিক্ষা দেয়ার চেয়ে পিতা-মাতার বড় কিছু দেয়ার নেই। মানুষের জীবনে নিরবচ্ছিন্ন সুখ ও দুঃখ বলে যেমন কিছু নেই, ঠিক তেমনি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সর্বদা সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা বজায় থাকাও সম্ভব নয়। এমন অবস্থা রসূল (সা)-এর জীবনেও ঘটেছে। দুনিয়ার জীবনে তারাই সুখী যারা একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। কারো মধ্যে আপনার অপছন্দনীয় কিছু থাকলে লক্ষ্য করবেন অসংখ্য গুণ তার মাঝে রয়েছে। তাই মানুষের ত্রুটি উপেক্ষা করুন এবং গুণের প্রশংসা করুন। দেখবেন, খুব দ্রুত আপনার সংসারটি শান্তির নীড়ে পরিণত হয়ে গেছে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সময় দিন এবং ছেলে-মেয়েকে সাহচর্য দিন। ছেলে-মেয়েকে বঞ্চিত করলে আপনার অজ্ঞাতেই ছেলে-মেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে; তখন আর আপনার দুঃখের সীমা-পরিসীমা থাকবে না। আল্লাহর দেয়া নেয়ামত আপনার জন্য গজব হয়ে দেখা দিবে। যে মা-বাবা সন্তানের কল্যাণ চিন্তায় ছিলেন বড় ব্যস্ত, নিজের জীবনের বিনিময়ে মুমূর্ষ সন্তানকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাতরভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন, সেই মা-বাবা বখে যাওয়া সন্তানের মৃত্যু কামনা করবে। তাই ছোট অবস্থাতেই সন্তানকে প্রচুর সময় দিন; ধমক নয়, আদর-সোহাগ করুন। তাদের সাথে কখনই কঠোর ব্যবহার করবেন না। তাদের ভুলগুলো উপেক্ষা করুন এবং উপযুক্ত সময়ে শোধরায়ে দিন। সকল ব্যস্ততা উপেক্ষা করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একত্রে খাবার খান। বর্তমান সময়টা মোটেই উপযোগী নয়। ধ্বংস হওয়ার জন্য হাজারো পথ উন্মুক্ত। কোনো শ্রম ছাড়াই সে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে, যেমন জমিনে পরিচর্চা ছাড়া আগাছা জন্মে। স্বামী-স্ত্রী মিলেই সন্তানের চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ছাড়া নৈতিকতা গড়ে উঠতে পারে না। তাই তাকে কুরআনের জ্ঞানের পাশাপাশি নামাযে অভ্যস্ত করুন। নামাযই আপনার সন্তানকে নৈতিক গুণসম্পন্ন যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ত করবে। আল্লাহপাক সকল মা-বাবাকে তাদের সন্তানের মাধ্যমে চোখকে শীতল করে দিন। আমিন। ১৫.০৭.২০২০

Comments