চতুর্দিকে শুধুই মৃত্যু। আমরা যারা ফেসবুকে একটু একটিভ, তারা প্রতিনিয়তই দেখছি। ফেসবুক খুললেই আমরা পড়ছি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজেউন’ (আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব)। পরিচিত-অপরিচিত সবারই মাগফিরাত কামনা করছি। করোনায় মৃত্যু, লঞ্চডুবিতে মৃত্যু, নানাভাবে মৃত্যু এ যেন মৃত্যুর মিছিল। এ মিছিলে আমরাও যাত্রী। কিন্তু আমরা কি তা স্মরণে আনতে পারছি? আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব, কিন্তু সঙ্গে কি কিছু নিতে পারছি? আমরা সম্পদ উপার্জন করছি, শুধু কি আমাদের জন্য? না, আমরা উপার্জন করছি আমাদের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও আরো কত জনের জন্য। সব ঠিক আছে এবং সবই ছওয়াবের। এই উপার্জনের মধ্যে যদি হারাম কিছু থাকে, যাদের জন্য করছি তাদের কেউ কি দায়িত্ব নেবে? না, আল্লাহর সম্মুখে আমাকেই জবাবদিহি করতে হবে। করোনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, নিজে ঝুঁকি নিয়ে কেউ কারো জন্য এগিয়ে আসছে না। মারা গেলে ঠিকমত গোসল, জানাযা ও দাফন-কাফনও হচ্ছে না। এমন কী নিজ এলাকায় দাফন করতেও নানা বিড়ম্বনা।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য অত্যন্ত দয়ার্দ। তাঁর দয়া-অনুগ্রহ অপরিসীম। এই করোনা আল্লাহর সৃষ্ট। অতীতকালেও মহামারিসহ নানা দুর্যোগ তিনি দিয়েছেন হয়তো ভিন্ন নামে। তিনি চান, তাঁর বান্দারা বেয়াড়া হয়ে গেছে ও তাঁর না-ফরমানি করছে, মৃত্যুর ভয়ে হলেও ফিরে আসুক। শয়তান বাধা দেয়। জীবনে কখনো নামায পড়েননি, রোযা রাখেননি বা আল্লাহর কোনো বিধানই পালন করেননি। হয়তো ভাবছেন, আমার তাওবা কি কবুল হবে? কেন হবে না, তিনি তো আর শুধু শুধু নিজে গফুর, রহমান, রহীম, সাত্তার নাম ধারণ করেননি? বিশ্বাস করুন, আপনার অপরাধ ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। শুধু বলবেন, পরোয়ারদেগার! জীবনে অনেক ভুল করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ভুল করার পর সন্তান তার বাবা-মার কাছে এসে বলে, আব্বা/আম্মা ভুল হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিক বাবা-মার সকল অভিমান ও রাগ ঠান্ডা হয়ে যায়। আমার আল্লাহ তো বাবা-মার চেয়েও বেশি দরদী, বেশি আপন।
ভাবছেন, বয়স কেবল ২৫/৩০। সময় আসুক, তাওবা করে নেব। মৃত্যুর মিছিলে সব বয়সী মানুষ রয়েছে। আপনার তো জানা নেই কখন ও কিভাবে আপনার মৃত্যু আসবে? তাই কোনো বিলম্ব না করে এখনই সিদ্ধান্ত নেন, নিজে নামায পড়বো ও পরিবারকে পড়াবো, আল্লাহর হুকুম মেনে চলার চেষ্টা করবো এবং সর্বপর্যায়ে হারাম উপার্জন পরিহার করে চলবো। আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হন। বিশ্বাস করুন, তাওবা করার পর নামায পড়ার সুযোগ আসার আগেই যদি আপনার মৃত্যু হয়, তাহলেও আপনার জান্নাতে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়ে থাকলো। তাই আর নয় অবহেলা, এখনই আমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। ওগো পরোয়ারদেগার! তুমি আমাদের করোনাসহ সব ধরনের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করো এবং তাওবা করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে দাও। আমিন। ০১.০৭.২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment