Skip to main content

বান্দাকে ক্ষমা করার আল্লাহর কতো কৌশল !

মানুষ আল্লাহপাকের বড় আদরের সৃষ্টি। আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে তিনি তাঁকে বেহেশতেই রেখেছিলেন। একান্ত অবাধ্য ও নাফরমান না হলে মৃত্যুর পরে আবার জান্নাতেই তাদের স্থান দেবেন। বান্দাকে শাস্তি দানের জন্য আল্লাহ কোনো বাহানা তালাশ করবেন না, বরং ক্ষমা করার উপায় খুঁজবেন। বান্দাহর গুনাহ ঝেড়ে ফেলে নেকির পাল্লা ভারি করে দেয়ার জন্য আল্লাহপাক নানাভাবে সুযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া তাওবা করে ফিরে আসার সুযোগ অবারিত। বিশেষ দিনক্ষণ, মাস ফজিলতের দিক দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, রমযান মাস বিশেষ করে শেষ দশক যার মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল কদর। রসূল (সা) দশক ধরে ইতেকাফ করতেন। এমনি ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ দশক হলো জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। কুরআনে সূরা ফজরে আল্লাহপাক কসম করেছেন এই বলে-‘শপথ ফজরের ও দশ রাতের’। অনেক সাহাবী এবং তফসিরকারক দশ রাত বলতে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন বুঝিয়েছেন। অবশ্য রসূলুল্লাহ (সা) থেকে স্পষ্ট করে এমন কোনো কথা উল্লেখ নেই। এই মাসের ফজিলত সম্পর্কীয় হাদিস রয়েছে। নিম্নে উল্লেখ করা হলো- ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের মধ্যে কৃত নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আর কোনো আমল নেই। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল (সা)! আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? রসূলুল্লাহ (সা) বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল এবং এরপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই সঙ্গে নিয়ে আর ফিরে এলো না। বুখারি ৯৬৯, তিরমিযী ৭৫৭। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা) বলেছেন : এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তামীদ (আল হামদু লিল্লাহ) বেশি করে পাঠ করো। আহমদ ১৩২। আল্লাহর বাণী, ‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নামসমূহ স্মরণ করতে পারে। সূরা হজ্জ ২৮। নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলতে ইমাম বুখারি (রহ) ইবনে আব্বাস (রা) থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে। জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে রয়েছে আরাফা ও কুরবানির দিন। এ দুটো দিনের রয়েছে অনেক বড় মর্যাদা। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের এতো অধিক সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দার নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, তোমরা কি বলতে পারো আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কী চায়?’ সহীহ মুসলিম ১৩৪৮। আরাফার (জিলহজ্জ মাসের নবম তারিখ) দিন ক্ষমা ও মুক্তির দিন। এ দিনে সওম পালনে দু’বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গণ্য হয়। আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করেন।’ সহীহ মুসলিম ১৬৬২। জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে যে সব আমল করা যায় : উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা। জিলহজ্জ মাস শুরু হলেই সাহাবায়ে কেরাম উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতেন। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) ও আবু হুরাইরা (রা) জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাঁদের অনুসরণ করে তাকবীর পাঠ করতেন। বুখারি, ঈদ অধ্যায়। এই তাকবীর দিনে রাতে ঈদের সালাত পর্যন্ত অনির্দিষ্টভাবে পাঠ করতে হয়। আমাদের সমাজে এই আমলটি চালু নেই। ওয়াজিব/সুন্নাতে মুয়াক্কাদা তাকবীরে তাশরীফ পাঠ করতে হবে ৯ জিলহজ্জ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্জ আসর পর্যন্ত ফরজ সালাতের পর একাকী উচ্চস্বরে। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণা করা হয়। তাকবীর পাঠসহ বেশি বেশি করে নেক আমল, বিশেষ করে কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযগার, দান-সদাকা করা এবং নিয়মিত ফরজ-ওয়াজিব পালনে আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত। এই দশকে রোযা পালন বিশেষ করে ৯ জিলহজ্জ আরাফার দিনে রোযা অনেক ফজিলতপূর্ণ। আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘আরাফার দিনের সওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গ্রহণ করেন।’ সহীহ মুসলিম ১৬৬২। জিলহজ্জ মাসের এই দশকে আল্লাহর রসূল (সা) তাঁর উম্মতদেরকে বেশি বেশি নেক আমলের তাগিদ প্রদান করেছেন। এই সময়ের অন্যতম আমল হবে তাওবা করা। তাওবা করা অর্থ কেবল মুখে আস্তাগফিরুল্লাহ উচ্চারণ নয় বরং গুনাহ থেকে ফিরে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা। এই দশকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো হজ্জ এবং ঈদের নামায ও কুরবানি করা। আল্লাহর নির্দেশ : ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কুরবানি করো।’ সূরা কাওছার। আল্লাহপাক আমাদেরকে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের গুরুত্ব উপলব্ধি করে তাওবা-এস্তেগফার ও বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। ২৩.০৭.২০২০

Comments