Skip to main content

গিবত রোজা নষ্ট করে

আল্লাহপাক রোজা ফরজ করেছেন মানুষকে পরিশুদ্ধ করার জন্য। একজন রোজাদার না ঝগড়াঝাটি করতে পারে, না অপরের দোষ চর্চা করতে পারে আর না পারে আল্লাহর কোনো নাফরমানি করতে। গিবত বা মানুষের দোষ অপরের কাছে প্রকাশ করা বাঙালি মুসলমানের কাছে ডালভাত। অথচ এ এক ভয়াবহ গুনাহ। হাদিসের ভাষ্য অনুসারে গিবতে অভ্যস্ত ব্যক্তি কখনোই জান্নাতে যাবে না।


রসুলল্লাহ সা. একদা সফর করছিলেন। সফরকারীদের একজন রোজা অবস্থায় বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আল্লাহর রসুল সা.-এর কাছে তার রোজা ভাঙ্গার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, সে তো অনেক আগেই রোজা ভেঙে ফেলেছে। সবাই বিস্মিত হন। তখন তিনি বলেন, সে যখন তার ভাইয়ের নিন্দা করছিল তখনই তার রোজা ভেঙে যায়। তাকে ডাকা হলে রসুল সা. তাকে থুথু ফেলতে বলেন। থুথু ফেললে তার মুখ থেকে এক টুকরো গোস্ত বের হয়।

কুরআন মজিদে গিবতকে মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে গিবত জেনা অপেক্ষাও জঘন্য। কারণ জেনা তওবা করলে মাফ পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে গিবত তওবা করার সাথে যার গিবত করা হয়েছে তার কাছ থেকেও মাফ নিতে হয়।

গিবতের পরিণতি সম্পর্কে রসুলল্লাহ সা.-কে মিরাজের রাতে অবহিত করা হয়। তিনি দেখেন, তামার আংটার মতো নখ দিয়ে কিছু লোক তাদের চেহারা ও শরীরকে খামছায়ে ক্ষতবিক্ষত করছে। জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরাইল আ. বলেন দুনিয়ায় যারা গিবত করতো এরা তারা।

কোনো মানুষের দোষ তার অসাক্ষাতে বলাটাই গিবত। দোষ না থাকলে তো সেটা হয় আরো ভয়াবহ গুনাহ যাকে বলে অপবাদ। গিবতে বেশ মজা লাগে। কাউকে পছন্দ না হলে তার দোষ চর্চা করতে ভালো লাগারই কথা। গিবতকারী মূলত নিজেরই ক্ষতি করে। গিবত আসলে জুলুম। আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন মজলুমের পাওনা পরিশোধে জালেমের নেক আমল তাকে দিয়ে দিবেন।

মানুষের জীবন ও ধনসম্পদের মতো তার সম্মানও পবিত্র। কোনভাবেই ক্ষুণ্ণ হোক আল্লাহ তায়ালা তা চান না। তাঁর বাণী, নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনাসামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে। মানুষকে অপমান করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, হেও করা, চড়থাপ্পড় মারা সবই কবিরা গুনাহ। এদের পরিণতি হুতামা এবং তা হলো আল্লাহর আগুন। সাধারণত গর্ব ও অহংকারের কারণে মানুষ এমন আচরণ করে থাকে।

দোষ প্রচার থেকে বিরত থাকা বা গোপন করার মধ্যে রয়েছে সওয়াব। যারা গিবত করে তারা মানুষের কল্যাণ চায় না। অথচ কল্যাণ কামনার নামই ধর্ম। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ যেমন নিজের কল্যাণ চায় তেমনি সে সব মানুষের কল্যাণ কামনা করে। অকল্যাণ কামনা থেকেই তো গিবত। এরা হয় হিংসুটে। হিংসা- বিদ্বেষ থেকেই হয় গিবত। আমরা জানি কদরের রাতে ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে কোনো হিংসুক থাকবে না।

গিবতের গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হলো তওবার পাশাপাশি যার গিবত করা হয়েছে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেয়া এবং আল্লাহর কাছে উভয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

আমাদের রোজাগুলো কবুল করার জন্য আল্লাহপাক আমাদেরকে গিবতের মতো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Comments