মানুষ সামাজিক জীব। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান- সন্ততি, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে আমাদের জীবন। আত্মীয়তা দুদিক দিয়ে। এক. রক্ত সম্পর্কীয় দুই. বৈবাহিক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বৈবাহিক এবং সেখান থেকে শ্বশুর-শাশুড়ি ও অন্যান্যরা। আত্মীয়তার হক আদায় সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে নানাভাবে বলা হয়েছে। আর এটা প্রকৃতিরও দাবি। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাঁর ইবাদতের সাথে সাথে পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তার অধিকার আদায়ের কথা বলেছেন।
আত্মীয়তার হক সম্পর্কে রসুলল্লাহ সা. ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই-ই বলেছেন। তিনি বলেছেন, কেউ যদি রুজির প্রশস্ততা ও হায়াত বাড়াতে চায় সে যেন গরীব আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করে। আখেরাতে নেকির পাল্লায় ওজনে সবচেয়ে ভারি হবে উত্তম আচরণ। একটু মিষ্টি ব্যবহার মানুষকে আপন করে নেয় এবং সে তখন হয়ে উঠে আল্লাহর একান্ত প্রিয়।
রসুলল্লাহ সা.-এর নেতিবাচক উক্তি হলো- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না। তিনি আরো বলেন, কেউ ভালো ব্যবহার করলে আমিও করবো, এর নাম আত্মীয়তার হক নয়। বরং কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তার সাথে উত্তম ব্যবহার করার নামই আত্মীয়তার হক।
স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করা জঘন্যতম অপরাধ। যারা করে তাদেরকে হিংসুক বলা হয়। কদরের রাতে বাড়তি কোনো আমল ছাড়াই আল্লাহ তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন। ক্ষমা থেকে বাদ পড়ে কেবল মুশরিক ও হিংসুক। আল্লাহ তায়ালা সুরা ফালাকে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য বলেছেন। রসুলল্লাহ সা. বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠ জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়।
মিথ্যা জঘন্য অপরাধ, কবিরা গুনাহ। হাদিসে বলা হয়েছে, মিথ্যা সকল পাপের মা। অথচ সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে মিথ্যা বলাটা আর পাপ থাকে না, হয়ে যায় সওয়াবের। মনে করুন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। আপনি গিয়ে ভাইকে বললেন, ভাবির সাথে কথা হলো- তিনি তো আপনার চিন্তায় পাগল হতে বাকি। ভাই হয়তো তখন বলবে, হয়রে ভুলটা আমারই। আবার ভাবিকে গিয়ে বললেন, ভাইকে তো দেখলাম আপনার চিন্তায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আর ক'টা দিন গেলে তাঁকে আর খুঁজে পাবেন না। ভাবি তখন বলবে, হয়রে আমি তো ঘুমাতেই পারি না। আমি কালই চলে যাবো। দেখুন, আপনার এই মিথ্যা বলাটাই কতোটা কাজ হলো। এতে আপনি যে সওয়াব পাবেন তা কোনভাবেই পরিমাপযোগ্য নয়।
আমরা এখন রমজানের শেষ দশকে অবস্থান করছি। আমরা চাই গুনাহ থেকে মুক্তি। মানুষের দ্বারা গুনাহ হবে না এমনটি আল্লাহ বলেন না। আল্লাহ চান, গুনাহ হলে বান্দা তাঁরই কাছে ফিরে আসুক। তওবা করলে বান্দা এমন হয়ে যায় যেন সে অতীতে কোনো গুনাহই করেনি। আল্লাহপাক আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment