কেউ জুলুম করে মজা লুটছে ও নিজের বড়াই প্রকাশ করছে আর কেউ জুলুমের শিকার হয়ে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার আশায় পরম ধৈর্য ধারণের মধ্যে তৃপ্তি খুঁজছে। আসলে দুনিয়া শেষ নয়, এর পরে রয়েছে আখেরাতের চিরন্তন জীবন। দুনিয়াটা কর্মক্ষেত্র এবং আখেরাত ফলভোগের জায়গা।
জালেম ও মজলুম উভয়কেই আল্লাহ প্রতিদান দেবেন। কারো আমলই প্রতিদান ছাড়া নয়। আল্লাহপাক ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সকলের আমলই রেকর্ডভুক্ত হচ্ছে। আল্লাহপাক দয়াময় মেহেরবান এবং সেটি সবার প্রতি। বান্দার ফিরে আসার জন্য তিনি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। মৃত্যু তার জীবনের সমাপ্তি টেনে দেয়।
দুনিয়া পরীক্ষাগার- জালেম ও মজলুম উভয়ের জন্য। জালেমের পরীক্ষা সে কতখানি সীমালঙ্ঘন করতে পারে আর মজলুমের পরীক্ষা তার ধৈর্য-সহনশীলতার। জুলুমের বদলা গ্রহণের অধিকার থাকলেও আল্লাহ চান বান্দা প্রতিশোধ গ্রহণের ভারটা তার মহান রবের উপর ছেড়ে দিয়ে সে প্রশান্ত হয়ে যাক। আল্লাহর বাণী, অন্যায়ের প্রতিবিধান সমপরিমাণ অন্যায়, কিন্তু কেউ যদি ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়। আল্লাহ তায়ালা যখন নিজে পুরস্কারের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন তখন ক্ষমা করতে সমস্যা কোথায়? ক্ষমা করাকে কখনো বলেছেন সাহসী কাজ। একজন মুসলমান সহজেই ক্ষমা করতে পারে।
পৃথিবীকে সুন্দরভাবে পরিচালনায় জন্য ক্ষমার কোনো বিকল্প নেই। নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনটা জেলখানায় অতিবাহিত হয়। জেলখানা থেকে মুক্তি লাভের পর তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রতিশোধ নয় ক্ষমার মধ্য দিয়ে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন এবং নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। এরাই তো মহামানব। মানুষ তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। আল্লাহ কারো আমলই বিনষ্ট করেন না। কাউকে দুনিয়ায় দেন আবার কাউকে দুনিয়া ও আখেরাতে দিবেন।
আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও নানা জনের সাথে নানা ঝামেলা থাকে। মনে রাখলেই কষ্ট আর ক্ষমা করে দিলে নিজের মধ্যে আসে প্রশান্তি ও সর্বোপরি আল্লাহর কাছে রয়েছে পুরস্কার।
রমজানের শেষ দশকে আমরা ক্ষমা পাওয়ার আশায় লাইলাতুল কদর তালাশ করছি। হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। ক্ষমা পাওয়ার সহজতম উপায় হলো নিজেকে হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করা ও আল্লাহর বান্দাদের ক্ষমা করা। তাতে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভুল নেই। রসুলল্লাহ সা. স্বয়ং সুসংবাদ শুনিয়েছেন। যে তার ভাইকে ক্ষমা করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে ক্ষমা করবেন।
আসুন, রমজানের এই শেষ দশকে সকল হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই (তওবা করি) ও নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেই। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে চান। ক্ষমা করার মধ্যেই তাঁর যতো আনন্দ। কেন আমরা এই সুযোগ গ্রহণ করবো না। মৃত্যুর সাথে সাথে ক্ষমা (তওবা করার) চাওয়ার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। পরোয়ারদেগার! আমাদের সকল ত্রুটি -বিচ্যুতি ক্ষমা করে দাও এবং মুসলমান অবস্থায় মৃত্যু দান করো। আমিন।
Comments
Post a Comment