বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর খুশির বার্তা
নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে ঈদুল ফিতর। আপনাদের সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক। করোনার কারণে
পরপর দুটি বছর আমরা ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে পারিনি এবং আজও বৃষ্টিজনিত কারণে সম্ভব
হলো না। তারপরও সুস্থ শরীরে রমজানের রোজা পালন এবং আল্লাহর ঘরে উপস্থিত হয়ে নামাজ আদায়
করতে পারায় আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আলহামদু লিল্লাহ।
রমজান এসেছিল আমাদেরকে পরিশুদ্ধ, পবিত্র
এবং গুনাহ থেকে মুক্ত করতে। জিবরাইল আ. রমজান প্রসঙ্গে একদিন বলেন, যে লোক রমজান মাস
পেল অথচ নিজের গুনাহ ক্ষমা করে নিতে পারলো না সে যেন ধ্বংস হয়। রসুলুল্লাহ সা. সমর্থন
করে বলেন, আমিন। অর্থাৎ সেই হতভাগার ধ্বংস হওয়ায় উচিত। মূলত এটি আল্লাহরই কথা। মানুষকে
শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহ ওঁত পেতে বসে নেই বা কোনো বাহানাও তালাশ করবেন না বা তাঁর
কোনো তাড়াহুড়োও নেই। তিনি তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে চান। শয়তানের প্ররোচনায় আমরা নানাবিধ
গুনাহে জড়িয়ে পড়ি এবং তার পরিমাণও পাহাড়সম। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাকে নিরাশ হতে নিষেধ
করেছেন। তিনি বান্দার গুনাহ ক্ষমা করবেন।
দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের
মাঝে তাকওয়ার গুণ (আল্লাহর ভয়) সৃষ্টি হয়। এই তাকওয়ার কারণেই আমাদের মধ্যে অনুশোচনা
জাগে। অতীতের গুণাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আর পুনরাবৃত্তি না করলেই ক্ষমা পাওয়া সম্ভব।
রমজানের রোজা সেভাবেই আমাদের তৈরী করে। তাই আমরা বলতে পারি, এই মুহূর্তে আমরা গুনাহ
থেকে মুক্ত। ঈদুল ফিতর অর্থ রোজা ভাঙ্গার আনন্দ। রোজা শেষে সন্ধ্যায় ইফতার করি। এক
মাসের রোজা পালন করে সকালে মিষ্টিমুখ করার মাধ্যমে রমজানের রোজা ভঙ্গ করা হয়। তাই এর
নাম ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর হলো রোজা ভাঙ্গার আনন্দ এবং পাপ মোচনের আনন্দ।
বিশেষ মাস, দিন, ক্ষণ বেশ গুরুত্বের দাবিদার
এবং আল্লাহপাক সেসময়ে অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন। রমজান মাস, লাইলাতুল কদর ও ঈদের রাতে
আল্লাহ ক্ষমা করেন। তাঁর এই সাধারণ ক্ষমার বাইরে থাকে তারা যারা শিরক করে ও হিংসা করে।
আপনারা মন থেকে হিংসা ঝেড়ে ফেলুন। হিংসার কারণেই মানুষ গিবত করে এবং গুম, খুনে লিপ্ত
হয়ে পড়ে। রসুলুল্লাহ সা. হিংসার ভয়াবহতা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা
কাঠকে যেমন জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল নিঃশেষ করে দেয়। হিংসা
শুধু শত্রুতাই বাড়ায় না, মনের শান্তিও বিনষ্ট করে। হিংসা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের
উদার হতে হবে এবং আল্লাহর বান্দাদের ক্ষমা করতে হবে। আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার সহজ উপায়
হলো তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করা। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তুমি তোমার ভাইকে ক্ষমা করো
তাহলে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাকে ক্ষমা করবেন। হিসাবটা খুব সহজ। এ দুনিয়ায় মানুষকে
ক্ষমা করতে পারলে আখেরাতে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতে যাওয়া যাবে। ক্ষমা করতে হলে হৃদয়ের
প্রশস্ততা লাগে। আল্লাহপাক আমাদেরকে সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করুন।
ঈদের জামাতে আমরা আজ পরস্পর কাঁধে কাঁধ
মিলিয়ে নামাজ আদায় ও কোলাকুলির মধ্য দিয়ে সৌভ্রাতৃত্ব প্রকাশ করছি। আমাদের মধ্যে ছোট-বড়
নেই, হিংসা-বিদ্বেষ নেই, আমরা পরস্পরের ভাই। এই ঈদ জামাত থেকে আলাদা হয়ে আমরা যদি প্রমাণ
করতে পারি যে আমরা একে অপরের কল্যাণকামী, আমাদের মধ্যে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ নেই তাহলে
আমাদের রোজা ও ঈদ পালন সার্থক হবে। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে হিংসা ও বিদ্বেষ মুক্ত
জীবন কামনা করি।
Comments
Post a Comment