Skip to main content

শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত হতে পারলে আল্লাহর ক্ষমা লাভ সম্ভব।

 জুমা আলোচনা


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম


আজ জুমাতুল বিদা। রহমতের মাস রমজানুল মুবারক বিদায়ের পথে। এই রমজান মাস এসেছিল আমাদেরকে গুনাহ থেকে মুক্ত করতে। সেটি কি সম্ভব হয়েছে? না হলে সেটি হবে বড়ই দুর্ভাগ্যের। জিবরাইল আ. একদিন রসুলুল্লাহ সা.-কে বলছিলেন, ‘যে লোক রমজান মাস পেল অথচ নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারলো না সে যেন ধ্বংস হয়’। জবাবে রসুলুল্লাহ সা. বলেছিলেন, আমিন। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্য। তদুপরি রমজান মাসে তাঁর দয়া অনুগ্রহের কোনো সীমা পরিসীমা থাকে না। তিনি শুধু দিতেই চান। আল্লাহর বান্দা যখন ভালো কাজের নিয়ত করে তখনই তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়। আর যখন কাজটি করা হয় তখন তার আমলনামায় দশ থেকে সাতশ গুণ সওয়াব লেখা হয়। আপনারা সবাই হজের নিয়ত করে ফেলুন। আল্লাহপাক সওয়াব ও সামর্থ্য দুইই দিবেন। পক্ষান্তরে বান্দা যখন অন্যায় করার ইচ্ছা করে তখন কোনো গুনাহ লেখা হয় না। অন্যায় করার পরে অপেক্ষা করেন বান্দা তওবা করে কি না? তওবা না করলে ঠিক সমপরিমাণ গুনাহ তার আমলনামায় লেখা হয়।

শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহর কোনো তাড়াহুড়ো নেই বা কোনো বাহানাও তালাশ করবেন না। বরং বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য নানা উপায় তালাশ করবেন। আমি আপনাদেরকে সহজ ক্ষমা লাভের উপায় বলতে চাই। আপনারা ঘুমের আগে সুরা ফালাক, সুরা নাস ও নানা দোয়া-দরুদ পড়ে থাকেন। সাথে মহান আল্লাহপাককে বলুন, হে পরোয়ারদেগার! আমি আমার পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব সকলের উপর থেকে হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ থেকে তওবা করছি এবং সবাইকে ক্ষমা করে দিচ্ছি, তুমিও দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দাও। বিশ্বাস করুন, আল্লাহর কাছে আপনার আর্জি পেশ করতে সময় লাগবে কিন্তু আপনাকে ক্ষমা করতে আল্লাহর সময় লাগবে না। না না, আমি একথা বানিয়ে বলছি না। প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা.-এরই কথা। আর মনে রাখবেন তাঁর সকল কথাই মহান আল্লাহর। তাঁর সম্মতির বাইরে নবি সা. কোনো কথাই বলেন না। নবি সা. কী বলেছেন, এবারে জেনে নেই। তাঁর স্পষ্ট উক্তি, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অপরাধ ক্ষমা করবে আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন তার অপরাধ ক্ষমা করবেন’। এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। আপনি যদি ক্ষমা করেন আখেরাতে তো ক্ষমা পাবেনই, এ দুনিয়াতেও আপনি পেরেশানি থেকে মুক্ত হবেন এবং পরিবার ও সমাজ পাবে শান্তি ও নিরাপত্তা।

আমি আপনাদেরকে আর একটি ঘটনা শোনাতে চাই। মসজিদে নববিতে রসুলুল্লাহ সা. তাঁর এক সাহাবির মসজিদে প্রবেশের সময়ে সাহাবিদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যে ব্যক্তি এইমাত্র মসজিদে প্রবেশ করছে সে জান্নাতি। একই ব্যক্তি সম্পর্কে একই কথা তিনি পরপর তিনদিন বললেন। রসুলুল্লাহ সা.-এর এমন উক্তির প্রেক্ষিতে সেই সাহাবির আমল সম্পর্কে জানতে একজন সাহাবি আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং তিনি সেই সাহাবির বাড়িতে তিন দিনের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর স্বাভাবিক জীবন লক্ষ করেন অর্থাৎ এশার জামায়াতে শরীক হন এবং ফজর আদায় করেন ও ঘুমান, কোনো বাড়তি ইবাদত-বন্দেগি লক্ষ করেন না। শেষে বলেন, রসুলুল্লাহ সা. পরপর তিনদিন আপনার সম্পর্কে এমন উক্তি করলেন; আমি জানতে চাই, আপনার বিশেষ কী আমল রয়েছে যার জন্য রসুল সা. এমন সুসংবাদ দিলেন। তিনি জবাবে বলেন, ভাই এমন তো কিছু নয় তবে আমি ঘুমানোর সময় কারো প্রতি কোনো বিদ্বেষ না রেখে সবাইকে ক্ষমা করে দেই। একথা শুনে সেই সাহাবি বলেন, হ্যাঁ, এতোবড় সুসংবাদ পাওয়ার এটিই কারণ।

হিংসা-বিদ্বেষ জঘন্যতম অপরাধ। সমাজে মারামারি হানাহানি, গুম-খুন, গিবত সবকিছুর মূলে রয়েছে হিংসা ও বিদ্বেষ। গতরাতে আমরা লাইলাতুল কদরে অনেক ইবাদত-বন্দেগি করেছি। আপনি যদি হিংসা থেকে মুক্ত না হতে পারেন তাহলে সবই মূল্যহীন। আর যে ব্যক্তি শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত জীবন যাপন করেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাধারণ ক্ষমায় সেই বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে নেন। অগণিত বান্দাকে তিনি এই পবিত্র রাতে ক্ষমা করেন যদি শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত থাকে। আপনারা নিজেদের অন্তর থেকে হিংসা ঝেড়ে ফেলুন। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় ঠিক তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। আজকে হিংসা স্বামী- স্ত্রীতে, পিতা-পুত্রে, ভাইয়ে-ভাইয়ে, পাড়া-প্রতিবেশিদের সাথে, হিংসা নেই কোথায়? নেতা-নেত্রীদের মাঝেও হিংসা। উদারতা ও ক্ষমাশীলতার বড় অভাব। আল্লাহ হিংসুককে ভয়ানক অপছন্দ করেন। সুরা ফালাকে হিংসুকের অনিষ্ঠ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে বলেছেন। আসুন, আমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে তওবা করে আল্লাহর ক্ষমা লাভে সমর্থ হই।

আমাদের রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে। রোজার ত্রুটি- বিচ্যুতি দূর করা ও গরীবদের ঈদের আনন্দে শরীক করার জন্য ইসলামে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে। ফিতরা অবশ্যই ঈদের আগে আদায় করতে হবে। অন্যথায় এটি সাধারণ দান হবে। ঈদের দিন জন্মগ্রহণকারী শিশুসহ ছোটবড়, ধনী-দরিদ্র সকলের জন্য ফিতরা আদায় বাধ্যতামূলক। ঈদের দিন প্রয়োজন পূরণের পর ফিতরা দানের মতো সামর্থ যার রয়েছে তাকেই ফিতরা দিতে হবে। ফিতরা কতো দিতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের ফতোয়া বোর্ড সর্বনিম্ন ৭৫/- টাকা নির্ধারণ করেছেন। এটি দিলে আমাদের ফিতরা আদায় হবে। রসুলুল্লাহ সা. বিভিন্ন দ্রব্যের কথা বলেছেন (খেজুর, যব, গম, কিসমিস ইত্যাদি) এবং সেটি এক ছা পরিমাণ। রসুলুল্লাহ সা. এবং পরবর্তী চার খলিফার সময় এই নিয়মই চালু ছিল। আমির মুয়াবিয়া রা.-এর সময়ে গমের দাম বেড়ে গেলে তিনি মসজিদের মিম্বর থেকে বলেন, গম অর্ধ ছা দিলেও হবে। আমাদের দেশে গমের দাম কম। গম দিলে অর্ধ ছা এবং চাল বা খেজুর দিলে এক ছা। এটা একটু কেমন লাগে। তাই বলি যাদের সামর্থ আছে তারা চাল দিয়ে দিন। আমি নিজে ২০০/- করে দিয়েছি এবং অন্যদেরকেও বলি।

জাকাত যাদের উপর ফরজ তারা হিসাব করে জাকাত আদায় করুন। জাকাত আদায় না করা মুশরিকদের কাজ। আল্লাহপাক নামাজ ও জাকাতকে একই সাথে ফরজ করেছেন। তাই নামাজ পড়বেন অথচ জাকাত দিবেন না তা হয় না। যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে অর্থাৎ স্বর্ণ সাড়ে সাত ভরি বা যাদের সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য পৃথকভাবে আছে তাদের সোনা রূপায় জাকাত দিতে হবে। নগদ টাকা ও ব্যবসায়ে পণ্যের দাম হিসাব করে কারো যদি সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয় তাহলে তাদের জাকাত দিতে হবে। ফসলেরও জাকাত দিতে হয়। একে বলে ওশর। ফসলের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে প্রত্যেকটি শস্যের পরিমাণ ১৮ মণ হলে তাদেরকে বিশভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে।

আল্লাহপাক হিসাব করে জাকাত প্রদানসহ তাঁর দ্বীন পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার তৌফিক আমাদের দান করুন।

২৯.০৪.২০২২ কুচিয়ামোড়া বাজার জামে মসজিদে প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালীর জুমা আলোচনা।

Comments