Skip to main content

কিয়ামত নিকটবর্তী

 জুমা আলোচনা (বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদ, আফতাবনগর)


১৩.০৫.২০২২

বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদ, আফতাবনগর-এর সম্মানিত ইমাম মাওলানা সাইফুল ইসলাম শামিম আজকের খুতবায় আল্লাহপাকের হামদ ও রসুলুল্লাহ সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর কিয়ামত সংঘটন এবং সেদিনের ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা দেন। তিনি কুরআন ও হাদিস থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি পেশ করেন।

রসুলুল্লাহ সা. একদিন বক্তৃতার মাঝে দুটি আঙ্গুল একত্র করে সাহাবিদের রা. উদ্দেশ্যে বলেন, আমার ও কিয়ামত এতো নিকটবর্তী। অর্থাৎ আমার ও কিয়ামত সংঘটনের মাঝে আর কোনো নবি নেই। অতএব, তোমরা সতর্ক হয়ে যাও এবং এমন সময় আসবে যখন মানুষ সকালে ঈমানদার থাকবে আবার বিকালে কাফের হয়ে যাবে। আবার বিকালে ঈমান আনবে তো সকালে কাফের হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কাফের ও মুশরিক এক নয়। মুশরিক সেই যে আল্লাহর জাত ও সিফাতের সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, পক্ষান্তরে কাফের সেই যে আল্লাহর বিধানকে অমান্য করে। একজন মুশরিক সাথে সাথে কাফেরও। কারণ সে আল্লাহর সাথে শরীক করার পাশাপাশি আল্লাহর বিধানকেও অমান্য করে। যেমন, তৎকালে আরবের কাফেররা দেবদেবিকে আল্লাহর সাথে শরীক করার সাথে সাথে তাঁকে অমান্য করতো। বর্তমানে পীর আউলিয়া ও বিভিন্ন মাজারে মানুষ ধর্ণা দেয় এই মনে করে যে এরা তাদেরকে সন্তান দিবে বা বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবে। এরা মুশরিক ও কাফের।

আমাদের সমাজে এমন অনেকে আছেন যারা ব্যক্তিগত জীবনে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত পালনে নিষ্ঠাবান কিন্তু ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মানতে নারাজ। যদি তাদেরকে পর্দা মানার কথা বা সুদ পরিহার করার কথা বলা হয় তারা তাৎক্ষণিক বলে উঠবে মেয়েরা চাকরি-বাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, পর্দা মেনে কি এসব সম্ভব বা সুদ ছাড়া কি ব্যবসা-বাণিজ্য চলে? এরাও মূলত কাফের। এদের প্রসঙ্গেই রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, এরা সকালে ঈমানদার তো বিকালে কাফের। একজন মুসলিমকে সার্বক্ষণিক আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে হবে। আল্লাহর হুকুমের দুটি দিক। এক. আল্লাহ যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন সেসব পালন করা এবং যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন সেসব কাজ থেকে বিরত থাকা। যারা পারে তারাই মুসলিম অর্থাৎ আল্লাহর অনুগত।

ইমাম সাহেব বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মৃত্যুকে এড়িয়ে চলার ক্ষমতা কারো নেই। কিয়ামত সংঘটনের জন্য অপেক্ষা না করে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য আমাদের পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য অত্যন্ত দয়ার্দ্র। দুনিয়ার জীবনে বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। বান্দা দিনে যা অপরাধ করে রাতে তা ক্ষমা চেয়ে নেয় কি না তজ্জন্য তিনি অপেক্ষা করেন, আবার রাতে যা অপরাধ করে তা দিনের আলোয় ক্ষমা চাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। তওবা বান্দার পূর্বের অপরাধ ধুয়েমুছে পবিত্র করে দেয়। অপরাধের বোঝা নিয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে গেলে সেটি হবে তার জন্য চরম ভয়াবহ পরিণতি।

ইমাম সাহেব কুরআন ও হাদিস থেকে কিয়ামত সংঘটন, পুনরুজ্জীবন, বিচার অনুষ্ঠান, আমলনামা ডান হাত ও বাম হাতে প্রদান, জান্নাত ও জাহান্নামিদের পরিণতি এবং সেদিনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা যে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার ওপর চলছে ইসরাফিলের সিংগায় প্রথম ফুৎকারে এক প্রচণ্ড ভূমিকম্পের সৃষ্টি হবে এবং মুহূর্তেই সব ধ্বংস হয়ে যাবে। সেদিন সমুদ্রে আগুন জ্বলতে থাকবে এবং পাহাড়গুলো ধুনো পশমের মতো উড়তে থাকবে। মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে ফেলে দিবে, পিতা সন্তানকে, বন্ধু বন্ধুকে কেউ কারো খোঁজ নেবে না বরং একে অপর থেকে পালাবে। মানুষ জ্ঞানশূন্য হয়ে দিকবিদিক ছুটতে থাকবে এবং সবকিছু মরে পড়ে থাকবে। জমিন এক সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। দ্বিতীয় ফুৎকারে সবাই জেগে উঠবে এবং বিচারের ময়দানে সবাই এগিয়ে যাবে। আমলনামা প্রত্যেকের গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, পড়ো তোমার আমলনামা, হিসাব গ্রহণের জন্য তুমিই যথেষ্ট। আল্লাহপাক ন্যায়বিচারক; তিনি বান্দার অবস্থা সব জানেন। কিন্তু জানার ভিত্তিতে তিনি কাউকে শাস্তি দিবেন না। অপরাধী তার অপরাধের মাত্রা এবং প্রাপ্য শাস্তি উপলব্ধি করবে। ফেরেশতা কর্তৃক সংরক্ষিত আমলনামা যেখানে সুরা যিলজালে বলা হয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালো ও মন্দ আমল সবই লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং নেক ও বদ লোক সবাই তা দেখতে পাবে।

কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা দেন। জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহ গর্জন এবং বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দর্শনে কাফেরের মধ্যে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। ঈমানদার জনগোষ্ঠী পূর্ব থেকেই জানতো এবং সে থাকবে নিরুদ্বিগ্ন। পক্ষান্তরে কাফের পরকালকে অবিশ্বাস করতো। জাহান্নামকে যখন তার সম্মুখে হাজির করা হবে তখন সে শুধুই আফসোস করতে থাকবে এবং বলতে থাকবে আজ যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম। সে বাঁচার জন্য তার স্ত্রী-পুত্র সন্তান-সন্ততি সবাইকে বিনিময় হিসেবে দিতে চাইবে এবং তার এই পরিণতির জন্য সে পরিবার- পরিবজন, নেতা-নেত্রী ও বন্ধু-বান্ধবদের দোষারোপ করবে। কিন্তু কোনো কিছুতেই লাভ হবে না বা কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং সেদিনের শাস্তি থেকে বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না।

ইমাম সাহেব তাঁর মুসল্লিদের সতর্ক করে বলেন, ঈমানের সাথে নেক আমলই পারবে সেদিনের ভয়াবহ আজাব থেকে বাঁচাতে। তিনি বলেন, শির্কমুক্ত নির্ভিজাল ঈমান এবং বিদয়াতমুক্ত ইবাদত নাজাতের শর্ত। আল্লাহর নাফরমানির পর্যায়ে পড়ে এমন কর্ম একজন মুসলিম কখনই করতে পারে না। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে তাঁর নাফরমানি থেকে দূরে অবস্থান এবং আল্লাহর হুকুম পুরোপুরি পালনের জন্য তিনি মহান রবের তৌফিক কামনা করেন। সংক্ষিপ্ত

শ্রুতিলিখন : প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী।

Comments