গত শুক্রবার মনিরের গাড়িতে আমরা সবাই মিলে জিয়ারত উদ্দেশ্যে গোরস্থানে যাই। তাসিফার নানী, খুশি, কালু, মনির, তাহেরা, তাসিফা এবং মোটর সাইকেলে লুলু, আবিদ ও আহমাদ। প্রথমে বিলালের কবর জিয়ারত (দর্শন) করা হয় এবং তারপর আব্বার কবর ঘুরে এসে দোয়া করা হয়।
দাদি, আব্বা ও বিলালসহ আমাদের অনেক প্রিয়জন সেখানে শায়িত আছেন। আমরা সবাই স্বাভাবিক ছিলাম। কিন্তু খুশি পারেনি। তার চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ঝরছিল এবং সে গোপন করার চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল। আমাদের অনুভূতি ও খুশির অনুভূতি এক ছিল না। হারানোর বেদনা খুশির ছিল তীব্র। হ্যাঁ, এটিই স্বাভাবিক।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। এটি একটি চুক্তি। এই চুক্তির মধ্য দিয়া দু'জন নর ও নারীর মধ্যের সম্পর্ক সবকিছু ছাড়িয়ে যায়। একজন মেয়ে তার পরিচিত পরিবেশ, বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে ছেড়ে একজনের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে পরম নির্ভরতা অনুভব করে। স্বামীও স্ত্রীর মধ্যে পরম প্রশান্তি খুঁজে ও দু'জন হয়ে পড়ে পরস্পরের অবলম্বন। একজন অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ এবং তারা চলতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর কতখানি প্রয়োজন সেটি বোঝাবার জন্য ফেসবুকে একটি চমৎকার উদাহরণ দেখেছিলাম। শিক্ষক তার ছাত্রীকে ব্লাকবোর্ডে তার প্রিয়জনদের নাম লিখতে বলেন। ছাত্রী তার স্বামী, সন্তান, বাবা-মা, ভাই- বোনসহ লম্বা তালিকা করেন। শিক্ষক বলেন, চারজন রেখে বাকিসব মুছে দাও। ছাত্রী স্বামী, সন্তান ও বাবা- মাকে রেখে বাকিদের মুছে দেয়। এবারে শিক্ষক বলেন, দু'জন রেখে বাকি দুটো মুছে দাও। ছাত্রী স্বামী ও সন্তান রেখে বুড়ো বাবা-মার নাম মুছে দেয়। শেষে শিক্ষক বলেন, একটি রেখে দাও। এবারে ছাত্রীর হাত কাঁপছে। একদিকে সন্তান (মাতৃত্ব), অপরদিকে স্বামী। শিক্ষক বলেন, ভয় পাচ্ছো কেন? এটি তো বাস্তব নয়। ছাত্রী ভাবলো, বড় হয়ে ছেলে হয়তো তাকে ত্যাগ করতে পারে কিন্তু স্বামী তার অবলম্বন। সে আমাকে কখনোই ত্যাগ করবে না। তাই ছেলের নাম মুছে দিয়ে স্বামীর নাম রেখে দিল। এই উদাহরণ দিয়ে মূলত স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর প্রয়োজনটাই বোঝানো হয়েছে।
আমি আমার বেয়াইয়ের (মাহেরের নানা) মধ্যে স্ত্রীর প্রতি গভীর প্রেম ভালোবাসা লক্ষ করেছি। মৃত্যুর পর তিনি আমার বেয়াইনকে খুব করে অনুভব করতেন। তিনি বলতেন, আপনার বেয়াইনের সাথে ঐ কবরে যদি আমাকেও দেয়া হতো কতই না ভালো হতো। উনি যখন ঘুমাতেন এবং ডাইলাইসিস করতে যেতেন তখন বেয়াইনের বোরকাটা জড়িয়ে রাখতেন। তাঁর অসিয়ত অনুসারে বেয়াইনের কবরে তাঁকে সমাহিত করা হয়। আমার বিশ্বাস, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রেম-ভালোবাসার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা দু'জনকেই ক্ষমা করে জান্নাতে একত্রে স্থান দান করবেন।
বিলালের জন্য আব্বার খুব পেরেশানি ছিল। সে নামাজ এমনভাবে ধরেছিল যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতো। সকল আড্ডা ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ইসলামের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছিল। স্বামীর জন্য স্ত্রীর অশ্রুতে ইনশা-আল্লাহ বিলালের সকল পাপরাশী আল্লাহ তায়ালা ধুয়েমুছে দিবেন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের দু'জনকে জান্নাতে একত্রে স্থান দান করেন এবং সন্তানদেরকে দোয়াকারী নেক সন্তান হিসেবে কবুল করেন।
স্বামী/স্ত্রী কোনো একজনের ইন্তেকালে অপরজন বড় অসহায় হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় তাদের সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়স্বজন সবারই উচিত তাদের প্রতি সদয় হওয়া ও ঘনঘন খোঁজ-খবর নেয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবার প্রতি রহম করুন।
Comments
Post a Comment