Skip to main content

তাফসিরুল কুরআন -


মুফতি সাইফুল ইসলাম, খতিব, মসজিদ উত তাকওয়া

মসজিদ উত তাকওয়ায় প্রতি মঙ্গলবার বাদ এশা খতিব মহোদয় ধারাবাহিক তাফসির করেন। রমজানের কারণে সাময়িক বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে আবার শুরু হয়েছে। তিনি সুরা হুদ ৯৬-১০১ তেলাওয়াত ও তাফসির করেন। এখানে অনেক নবির কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত নুহ আ. থেকে শুরু করে হুদ আ.(আদ জাতি) সালেহ আ. (সামুুদ জাতি), ইব্রাহিম আ. ও তাঁর ভাইপো লুত আ., শোয়াইব আ.(মাদয়ানবাসী)-এর জাতির নাফরমানি ও তার পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে। আজকে শুরু হয়েছে হজরত মুসা আ.-এর ঘটনাবলির উল্লেখ। বিভিন্ন জনপদ ও সময়ে নবিদের আগমন ঘটলেও সকলের মিশন ও ভিশন ছিল এক। তাঁরা মানুষকে তাওহিদের দিকে আহবান জানিয়েছেন। সবারই একই কথা- তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো।

সকল নবি-রসুল তাঁদের সময়কালে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। কিন্তু যখনই নবুয়ত লাভ করেছেন এবং মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান জানিয়েছেন তখনই তাঁরা শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। নবি মুহাম্মদ সা.-এর সাথেও একই আচরণ করা হয়েছে। এই সুরা দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে - এক. কাফের- মুশরিক যারা রসুলল্লাহ সা.-এর বিরোধিতা করছে তাদেরকে অতীত জাতিসমূহের ঘটনা উল্লেখ করে সতর্ক করা হয়েছে। অপরদিকে মুমিনদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে অতীতকালে যেভাবে কাফের জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে ঈমানদারদের রক্ষা করা হয়েছে, এখনো তাই করা হবে।

তেলাওয়াতকৃত আয়াতের সরল অর্থ

'আর মুসাকে আমি নিদর্শনাবলী ও স্পষ্ট নিয়োগপত্রসহ ফেরাউন ও তার রাজ্যের প্রধান কর্মকর্তাদের কাছে পাঠালাম। কিন্তু তারা ফেরাউনের নির্দেশ মেনে চললো।অথচ ফেরাউনের নির্দেশ সত্যাশ্রয়ী ছিল না। কিয়ামতের দিন সে নিজের কওমের অগ্রবর্তী হবে এবং নিজের নেতৃত্বে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। অবস্থানের জন্য কেমন নিকৃষ্ট স্থান সেটা! আর তাদের ওপর এ দুনিয়ায় লানত পড়েছে এবং কিয়ামতের দিনও পড়বে। কতো নিকৃষ্ট প্রতিদান সেটা, যা কেউ লাভ করবে!

এগুলো কতক জনপদের খবর, যা আমি তোমাকে শোনাচ্ছি। এদের কোনোটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে আবার কোনোটার ফসল কাটা হয়ে গেছে। আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি, তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছে। আর যখন আল্লাহর হুকুম এসে গেলো তখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা নিজেদের যে-সব মাবুদকে ডাকতো তারা তাদের কোনো কাজে লাগলো না এবং তারা ধ্বংস ছাড়া তাদের আর কোনো উপকার করতে পারলো না'- সুরা হুদ ৯৬-১০১।

ব্যাখ্যা :

আল্লাহপাক মুসা আ.-কে নবুয়ত ও বিভিন্ন মাজেজাসহ ফেরাউনের কাছে পাঠান। ফেরাউন ছিল জালেম ও চরম সীমালঙ্ঘনকারী। ফেরাউন ও তার সভাসদের কাছে দাওয়াত পেশ করা হলে সরাসরি তারা কবুল করতে অস্বীকার করে। ফেরাউনের অনুসারীরা মুসা আ.-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে ফেরাউনের নির্দেশ মেনে নিল যদিও সেটা সঠিক ছিল না। মুসা আ.-এর লাঠি ছিল বড় মাজেজা এবং ফেরাউনের যাদুর সকল সাপ লাঠি গিলে ফেলেছিল। এছাড়াও আল্লাহ তাদের সতর্ক করার জন্য কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ, ব্যাঙের উপদ্রব, রক্ত ইত্যাদি দ্বারা নানাভাবে কষ্ট দিয়েছেন। সেসময়ে মুসা আ.-এর স্মরণাপন্ন হলে তাঁর দোয়ার বরকতে সাময়িকভাবে তাদের বিপদ দূর হয়েছে। আবার পরক্ষণেই তারা ভুলে গেছে।

আল্লাহপাক করোনা দিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছেন এবং বাংলাদেশ এর বাইরে ছিল না। মানুষ কতখানি অসহায় হয়ে পড়েছিল। টাকাপয়সা ও লোকবল কোনো কিছু তাদের কাজে আসেনি। মানুষ যখন সীমালঙ্ঘন করে তখনই আল্লাহপাক সেই জনগোষ্ঠীর ওপর গজব দান করেন। অতীতকালের মতো বর্তমানেও স্বৈরশাসক ও তাদের অনুসারীরা আল্লাহর নাফরমানি অব্যাহতি রেখেছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নাফরমান বান্দাদের অবকাশ দিলেও ছেড়ে দেন না। অনেক সময় বড় শক্ত করে ধরেন। আকস্মিকভাবে ফেরাউন ও তার সাথিদের তিনি ধরেছিলেন এবং সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আর আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই। সে থাকবে সবার পুরোভাগে এবং তার অনুসারীদের সাথে করে সে জাহান্নামে এগিয়ে যাবে। ফেরাউন শুধু একা নয় যুগে যুগে যারাই ফেরাউনের মতো সীমালঙ্ঘন করেছে বা করছে তারাও তার অনুসারী হয়ে জাহান্নামে যাবে।

মানুষ বর্তমানে যেমন দুটি ভাগে বিভক্ত- আস্তিক ও নাস্তিক বা সীমালঙ্ঘনারী ও অনুগত আখেরাতেও দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একদিকে থাকবে নবি-রসুল ও ঈমানদার জনগোষ্ঠী এবং বিপরীতে থাকবে নমরুদ- ফেরাউন-আবু জেহেল ও তার অনুসারীরা। সেদিন সৎ নেতার পেছনে একদল যাবে মহানন্দে জান্নাতের দিকে এবং বিপরীতে অসৎ নেতার পেছনে গালি দিতে দিতে যাবে জাহান্নামের দিকে।

অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতীসমূহের কাহিনী আল্লাহপাক নিজেই শোনাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকের ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়েছে আবার অনেকের নিশানা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি জুলুম করেননি। তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে এবং যখন আল্লাহর হুকুম চলে এসেছে তখন প্রতিরোধ করা তাদের উপাস্যদের আর ক্ষমতা ছিল বা কোনো সুহৃদও এগিয়ে আসেনি।

এসব ঘটনা থেকে আমাদের উপলব্ধি করা দরকার যে, আল্লাহর নাফরমানি করে তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই। দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ রয়েছে তাঁর আনুগত্যের মধ্যে। আল্লাহপাক আমাদেরকে যথাযথভাবে তাঁর আনুগত্য করার তৌফিক দান করুন।

Comments