Skip to main content

করোনা পরবর্তী পৃথিবী

জলে, স্থলে ও আকাশে পৃথিবীর উন্নতি বিস্ময়কর। সাথে জ্ঞানের সকল শাখায় মানুষের পদচারণাও ঈর্ষণীয়। কোথায় নেই তার উন্নতি, চিকিৎসা জগতেও কী কম? কত জটিল সব অস্ত্রোপচার! আবার এই মানুষকে ধ্বংস করার আয়োজনই বা কম কী? কিন্তু মানুষ অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে মানবিক মূল্যবোধ। ফলে আমরা যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। আমরা ভুলে গিয়েছি, আমাদেরই এক কবির গাওয়া- ‘জগত জুড়িয়া এক জাতি আছে সে জাতির নাম মানুষ জাতি;--- কালো আর ধলো সে বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা’। বৈচিত্র্যপূর্ণ আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি মানুষকে নানা ভাষা ও বর্ণে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন স্রেফ পরিচিতির জন্য; সবাই আদমের সন্তান এবং আদম মাটির তৈরী। নারী-পুরুষ বা নানা বর্ণ ও ভাষায় মানুষের মাঝে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্ব কেবল নীতি-নৈতিকতায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মানুষ নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। আমেরিকার নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ বনি আদম হতাহতের পরও যুদ্ধের উন্মাদনা একটুও হ্রাস পায়নি। সমগ্র বিশ্ব যেন আর একটি ভয়াবহ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল, তখনই আল্লাহপাকের সৃষ্ট এক অতি ক্ষুদ্র জীবাণু সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। আকাশে আর বিমান ওড়ে না এবং পানিপথ ও সড়কপথ সবক্ষেত্রেই নেমে এসেছে সুনশান নীরবতা। করোনায় ইতোমধ্যেই চার লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পৌনে এক কোটি। এর বিস্তৃতি অব্যাহত রয়েছে। মানুষের সকল গর্ব-অহঙ্কার মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে গেছে। নানাভাবে এর বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। কেউ বলছে মানবজাতির জন্য আল্লাহর গজব। আবার কেউ বলছেন, প্রকৃতির প্রতিশোধ। বনখেকো, নদীখেকো হাজারো খেকোর অত্যাচার-অবিচারে এই পৃথিবী আর পেরে উঠছিলো না। প্রকৃতির ওপর অত্যাচারের পাশাপাশি মানবসন্তানের ওপর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন- কাঁটাতারে আটকে থাকা ফেলানি, সমুদ্রের তীরে পড়ে থাকা শিশু, বোমায় ক্ষত-বিক্ষত শিশুরা না কি ঈশ্বরকে তাদের কষ্টের কথা বলে দিয়েছে। হ্যাঁ, এ সব কল্পনা, ভাবনা হলেও এটি ঠিক, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি জুলুম সহ্য করেন না, শাস্তি দেয়ার জন্য সব সময় কিয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষাও করেন না। একজন বিশ্বাসী হিসেবে জ্ঞানের সর্বোত্তম উৎস হিসেবে কুরআনের প্রতি রয়েছে আমাদের শতভাগ আস্থা। কুরআন বলছে, বিপদ-মুসিবত যা আসে তা আল্লাহর অনুমতিক্রমেই আসে (সূরা তাগাবুন)। আমরা এমন এক আল্লাহতে বিশ্বাসী যিনি স্রষ্টা হওয়ার সাথে সাথে সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। তাই আমরা বিশ্বাস করি, করোনা নামে যে ভাইরাসটি এতো শক্তিমত্তা নিয়ে আক্রমণ করছে তা মূলত আল্লাহরই দেয়া শক্তি। যেমন, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আবরাহার বিশাল বাহিনীকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল; নমরুদের মত স্বৈরশাসক এক দুর্বল মশার আক্রমণে অস্থির হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল এবং মুসা (আ) নিরাপদে নদী পার হয়ে গেলেও ফিরাউন সদলবলে সেই নদীতেই ডুবে মরেছিল। এসব ঘটনার কোনো কার্যকরণ সম্পর্ক নেই। মূলত সবই আল্লাহর হুকুম। অতীতের জাতিসমূহের নাফরমানিমূলক কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে কোনো কোনো জাতির ধ্বংসের কথা কুরআন আমাদের সম্মুখে পেশ করেছে। মূলত সতর্কতার উদ্দেশ্যে এসব ইতিহাস বর্ণনা যাতে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে এবং নিজেকে শোধরায়ে নিতে পারে। হযরত শোয়াঈব (আ)-এর জাতি মাপে-ওজনে কম দিয়ে মানুষকে ঠকাতো এবং এর পরিণতিতে সেই জাতিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানেও মাপে-ওজনে ঠকানোর পাশাপাশি হাজারো প্রক্রিয়ায় মানুষের (ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ) কাছ থেকে সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে অসাধু মানুষগুলো সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। আবার হযরত লুত (আ)-এর জাতির মাঝে নৈতিক অধপতন চরম আকার ধারণ করে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে সেই জাতিকে সমূলে ধ্বংস করা হয়েছিল। আল্লাহর রসুল (সা) স্পষ্ট করে বলেছেন, যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা ব্যাপকতা লাভ করে তখন আল্লাহপাক সেই জাতির ওপর বালা-মুসিবত নাযিল করেন। এদিক দিয়ে বর্তমান বিশ্ব শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় সমকামিতা এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। আদ ও সামুদ জাতি পৃথিবীতে ছিল খুবই শক্তিমান। উন্নতমানের বাড়িঘর নির্মাণসহ প্রযুক্তিতে তারা ছিল অনেক অগ্রসর। কিন্তু আল্লাহপাক যখন ধরেন তখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোনো কাজে আসে না। আমরা লক্ষ্য করলাম, করোনার আক্রমণের সূচনা হলো চীনের উহান শহরে কিন্তু নিকটবর্তী ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশসমূহ বাদ দিয়ে অনেক দূরবর্তী এবং পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে গর্বিত আমেরিকাসহ সমগ্র ইউরোপকে একযোগে আক্রমণ করে বিশ্ববাসীর কাছে তাদের অসহায়ত্ব প্রমাণ করে দিল। নানা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হবে এবং হওয়াটাই স্বাভাবিক ও তাতে দোষের কিছু নেই; আমার কাছে মনে হয়েছে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করার জন্য যে শক্তি আবরাহার বিশাল বাহিনীকে ছোট্ট পাখি দিয়ে এবং নমরুদকে মশা দিয়ে শায়েস্তা করেছিলেন সেই শক্তিই প্রেরণ করেছেন এই অতি ক্ষুদ্র জীবাণু করোনাকে। তাই করোনা দেবীকে পূজো নয়, ফিরে আসতে হবে করোনার স্রষ্টা মহান আল্লাহর বিধানের কাছে অর্থাৎ পাপাচার ও জুলুম-পীড়ন থেকে সরে আসতে হবে। করোনার আক্রমণ বিশ্বব্যাপী। বিপদ-মুসিবত কি শুধু জালেমের ওপরই, না সব শ্রেণির মানুষের ওপর। রসুলুল্লাহ (সা)-এর বর্ণনানুসারে মহামারী বা বিপদাপদ সবার ওপর সমভাবে আসে। ঝড়-জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প বা করোনা যাই বলি না কেন-এর সাথে আল্লাহর হুকুমের পাশাপাশি কার্যকরণ সম্পর্কও রয়েছে। সতর্ক হওয়া ও ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ দায়িত্ব পালন করলে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস পায়। যেমন, সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ ও জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারলে সেক্ষেত্রে মানুষ ও সম্পদের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। একজন বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যে পার্থক্য হলো, অবিশ্বাসী কার্যকরণ সম্পর্ক তালাশ করে এবং সে মতে ব্যবস্থা নেয়। পক্ষান্তরে একজন বিশ্বাসী কার্যকরণ সম্পর্ক অস্বীকার না করে তার পক্ষ থেকে সর্বোত্তম চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানোর পর আল্লাহর ওপর (তকদির) নির্ভর করে। রসুলুল্লাহ (সা) মহামারী আক্রান্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করেছেন এবং মহামারী আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করলে সেখান থেকে বের হতেও নিষেধ করেছেন। মহামারী যেহেতু সংক্রামক সেহেতু আক্রান্ত লোকের সংস্পর্শ থেকে দূরে অবস্থান করার জন্য তিনি সতর্ক করেছেন। সতর্ক হয়ে চলা বান্দার দায়িত্ব। আক্রান্ত এলাকায় গেলে বা আক্রান্ত লোকের সংস্পর্শে আসলে করোনা হবেই এটি চূড়ান্ত নয়, নির্ভর করবে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর। মহামারিতে মৃত্যু কোনো অগৌরবের নয় বা দোষের নয় এবং মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার দাবীদার। আল্লাহর রসুল (সা) বলেছেন, মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী তার বিশ্বাস ও আমল নিয়ে আল্লাহর দরবারে উত্থিত হবে। প্রিয়তম নবী (সা) মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শহীদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং আমরা জানি ইসলামে শহীদ সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। এবারে করোনায় বিপুল প্রাণহানি ও অর্থনীতির ক্ষতি সাধিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হবে। ইউরোপ-আমেরিকার পরে করোনা ধেয়ে আসছে এশিয়া ও আফ্রিকার দিকে। বিশ্বসেরা দেশসমূহকে যেভাবে আঘাত হেনেছে দুর্বল ও ঘনবসতিপূর্ণ এশিয়া-আফ্রিকাকে সেভাবে আঘাত হানবে বলে আমার মনে হয় না। ইতোমধ্যে মৃত্যুহার সেটিই বলছে। এতে বোঝা যায় শুধু কার্যকরণ সম্পর্ক নয় (যেমন, বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছিল ৮ কোটি মানুষ আক্রান্ত হবে এবং ২০ লক্ষাধিক মৃত্যুবরণ করবে), বরং এ বিশ্বজাহান যিনি পরিচালনা করছেন এবং তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য যিনি করোনার মত মহামারি পাঠিয়েছেন সেই শক্তিমানের ইচ্ছাটাই বড় কথা। বিশ্ববাসী অনেক যুদ্ধ-বিগ্রহসহ দু’টি বিশ্বযুদ্ধের সাথে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্যে পরাশক্তিদের যুদ্ধোন্মাদনা চরম রূপ লাভ করেছিল। এ যেন তাদের খেলা। যুদ্ধাস্ত্রসমূহ তাদের গুদামে অকার্যকরভাবে বছরের পর বছর পড়ে আছে এবং অনেক শক্তিশালী পারমানবিক বোমার কার্যকারিতা পরীক্ষা সম্ভব না হওয়ায় সব যুদ্ধবাজরা যেন চরম অস্থিরতায় ভুগছিল। বলা যায় আমেরিকা, বৃটেন, ভারত, সৌদী আরবসহ অধিকাংশ দেশে মানবিক নেতৃত্ব নয় যুদ্ধবাজরা সব ক্ষমতাসীন। এই করোনা সবাইকে চুপসে দিয়েছে। করোনার নিট লাভ, সহসা একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে বিশ্বাসী রেহাই পেয়েছে, তাতে চার লক্ষাধিক নয় বা চার কোটি নয়, বিশ্বই ধ্বংস হয়ে যেতে পারতো। শুধু প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতি নয়, তেমন একটি যুদ্ধ সংঘটিত হলে প্রকৃতির ওপর যে প্রভাব পড়তো তা কাটিয়ে ওঠা হয়তো আদৌ সম্ভব হত না। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় এবারের করোনা মানবজাতির জন্য গজব নয়, আশীর্বাদই বলা যায়। আসলে আল্লাহই ভালো জানেন। এই করোনা বিশ্ব নেতৃত্ব ও দেশে দেশে নেতৃত্বের পরিবর্তন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। তার আলামত স্পষ্ট হচ্ছে। আমেরিকা ও ইউরোপসহ দেশে দেশে বর্ণবাদ ও শ্রেণিবৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। আমেরিকান পুলিশ কর্তৃক কালো নিগৃহিত হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার। অথচ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্ব ফুঁসে উঠেছে। আমেরিকা ছাড়াও ইউরোপে তার ঢেউ প্রচন্ডতা পেয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করেছেন। আমার বিশ্বাসী, এই ইস্যু আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আমাদের দেশেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কত গুম, খুন তার হিসাব মেলানো দুঃসাধ্য। কখন কোন ঘটনায় মানুষ ফুঁসে ওঠে তা বলা ভারি কঠিন। জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনা অনেক দেশের সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেশের নাগরিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন থেকে দূরে সরিয়ে থাকতে সাহায্য করবে আশা করা যায়। দুই দু’টি বিশ্বযুদ্ধের পর চিন্তাশীল ও বিবেকবান মানুষের লেখনি, মতামত, পরামর্শ ও বিশ্বের ধ্বংসলীলা বিবেচনা করে বিশ্বের নেতৃবৃন্দ যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ/জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করেছিলেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক সবার লেখনী, মতামত ও পরামর্শে এমনটিই আসবে- যুদ্ধাস্ত্র নয় প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, নিরাপদ বসবাসের গ্যারান্টি এবং ঘৃণা উগড়ে পড়বে যুদ্ধবাজদের প্রতি। ঘৃণা ও বিদ্বেষ নয়, সহমর্মিতা ও মানবিক আচরণে যারা এগিয়ে যাবে আশা করা যায় আগামী নেতৃত্ব তাদেরই হাতে আসবে। আর এমনটি সম্ভব হলে মানবজাতি কিছুদিনের জন্য হলেও একটি নিরাপদ ও দুষণমুক্ত পৃথিবী পেতে পারে। এই পৃথিবী মানুষের জন্য কোনো স্থায়ী আবাস নয়। মৃত্যু অবধারিত, এড়িয়ে চলার কোনো সুযোগ নেই। দুর্ঘটনা, হার্টএ্যাটাক ও নানাবিধ রোগব্যাধিতে মানুষ মৃত্যুবরণ করে। করোনার চেয়ে দুর্ঘটনা ও এসব রোগব্যাধিতে মৃত্যুহার অনেক বেশি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ভয়ে মানুষ রাস্তায় বের হওয়া বন্ধ করেনি। কিন্তু করোনাভীতি মানুষকে বেশ পেয়ে বসেছে। মৃত্যুভয় নানাবিধ পাপাচার ও জুলুম-নির্যাতন থেকে মানুষকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। জনগণের অর্থ-সম্পদ লুট করে যারা দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে বা প্রাসাদ তৈরী করেছে করোনাকালে সেসব তাদের কোনো উপকারে আসছে না, বরং পরকালে এ সব সম্পদ ভয়ঙ্কর বিপদ হিসেবে দেখা দিবে। এ বোধ-উপলব্ধি অনেকের মধ্যে জাগ্রত হবে বলে আমার বিশ্বাস এবং তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার একটি পথ তারা পেয়ে যাবে। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছেন। মানুষ আল্লাহপাকের অত্যন্ত প্রিয় সৃষ্টি। তাঁর এই আদরের সৃষ্টির চিরস্থায়ী সুখের স্থান হিসেবে তিনি প্রস্তুত রেখেছেন জান্নাত। আমার বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা বলে করোনাকালে আল্লাহর অনেক বান্দাহ তাদের বিশ্বাসকে শানিত করতে ও আমলের পাল্লাকে ভারি করতে সক্ষম হয়েছে। একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমি মনে করি, এটি একটি বড় প্রাপ্তি। এই করোনাকালে নানাবিধ পাপাচার বিশেষ করে অশ্লীলতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। মানুষ তার সাহায্য-সামগ্রী নিয়ে দুস্থদের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে, এ সবই ইতিবাচক দিক। আবার এরই মাঝে এক শ্রেণির মানুষের মাঝে চুরির ঘটনাও ঘটছে। আসলে এরা মানুষ নয় অমানুষ, জাহান্নামের কীট। এদের নছিবে হেদায়াত নেই। এদের সংখ্যা খুবই সীমিত। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়, একটি বিরাট সংখ্যক বনি আদমের প্রাণহানির পর যারা থাকবে তারা এক নিরাপদ, বাসযোগ্য ও হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত এক মানবিক পৃথিবী লাভ করবে ইনশা-আল্লাহ। আবাবিল কর্তৃক আবরাহার বিশাল বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর মক্কাবাসী অনেকখানি আল্লাহমুখী হয়ে পড়েছিল। আর এটিই প্রকৃতির নিয়ম। শুধু শাস্তিই নয়, কাছে ডেকে নেয়ার জন্যও আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতি বিপদাপদ দিয়ে থাকেন। করোনা পরবর্তী পৃথিবী যুদ্ধ-বিগ্রহমুক্ত সব মানুষের জন্য শান্তি ও নিরাপদ হোক-পরম করুণাময়ের কাছে এই আমাদের প্রত্যাশা। ১১.০৬.২০২০।

Comments