জর্জ ওয়াশিংটন ও আব্রাহিম লিংকনের আমেরিকা আজও বর্ণবাদ মুক্ত হতে পারেনি। আর প্রকৃত সত্য হলো, পৃথিবী কখনই বৈষম্যমুক্ত ছিল না বা হয়নি। কেবল নবী মুহাম্মদ (সা)-ই ভাষা, বর্ণ, লিঙ্গ, পেশা ও ধনী-দরিদ্র সব ধরনের বৈষম্য দূর করে এক সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেখানে শাসক ও শাসিত এবং দাস ও মনিব সব একাকার হয়ে পড়েছিল। তাঁর গঠিত সমাজই পৃথিবীতে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে যুগে যুগে মানুষকে প্রেরণা যুগিয়েছে।
সমাজের মানুষকে নানা কায়দায় বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। নারী-পুরুষের বিভক্তি, শাসক-শাসিতের বিভক্তি, ধনী-দরিদ্রের বিভক্তি তো রয়েছেই। হাজারো বিভক্তির মধ্যে রাজনৈতিক বিভক্তিও অনেক বড় যা মানুষের সৎবৃত্তি ধ্বংস করে পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানির চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।
সম্প্রতি শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্তৃক এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে সমগ্র আমেরিকা উত্তাল হয়ে পড়েছে। উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গ যা করেছে তা সকল আমেরিকানকে প্রকাশ করে না। সেখানেও মানবতাবাদী লোকের আধিক্য আমরা লক্ষ্য করেছি। দেশের প্রেসিডেন্টকে একটি রাজ্যের পুলিশ প্রধানকে বলতে শুনেছি ‘ভালো কথা বলুন নয়তো চুপ থাকুন’ এবং ‘দমন নয় এখন হৃদয় জয় করার সময়’। এ সবই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কোনো স্বৈরশাসকের অধীন কোনো পুলিশ বা সরকারি কর্মকর্তার বলা নয়, কল্পনাও করতে পারে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যতই বেয়াড়া হোক দেশে গণতন্ত্রের কারণে যা খুশি তাই তিনি করতে পারেন না। জয় হোক গণতন্ত্রের।
বিক্ষোভ দমনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেনা মোতায়েন করতে চান। তাঁর এই সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে বিরোধীতা করেছেন তাঁরই প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। শুধু কি তাই? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি মার্কিন নাগরিকদের বিভাজনের চেষ্টা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন। ফ্লয়েডের মৃত্যুকে তিনি বর্ণবাদী অন্যায় ও অবিচার বলেছেন। মার্ক এসপার দেশের নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারকে সমর্থন করে বলেন, ‘এই অধিকার এবং স্বাধীনতাই আমাদের দেশের বিশেষত্ব। আমেরিকার সেনাসদস্যরা এই অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে মরতেও ইচ্ছুক’। তারা কেউ জো হুজুর নন। নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে যেটি ভালো মনে করেন সেটি অকপটে বলেন। আমেরিকার টিকে থাকার পেছনে গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধ বড় কার্যকর শক্তি বলে আমি অনুভব করি।
কারো মধ্যে ভালো কিছু দেখলে আমি সেটি অকৃপণভাবে তুলে ধরতে চাই। আবার মন্দটিও মার্জিতভাবে তুলে ধরি। আল্লাহপাক আমাদেরকে সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে সবকিছু উদারভাবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। ০৫.০৬.২০২০।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment