Skip to main content

করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই তার রবের কাছে পৌঁছবে

করোনা আল্লাহর সৃষ্ট এক অতি ক্ষুদ্র রোগজীবাণু। সে আল্লাহর দেয়া নিয়মই অনুসরণ করে। আবার করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর দেয়া নিয়মই আমাদের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহপাক তাঁর সীমালঙ্ঘনকারী বান্দাদেরকে ফিরে আসার জন্য সুদূর অতীত থেকে নানাভাবে বালা-মুসিবত দিয়ে আসছেন। আমাদের জন্য জ্ঞানের নির্ভুল উৎস হলো আল্লাহর সর্বশেষ ও অবিকৃত কিতাব আল কুরআন। অতীত যুগের মানুষের বিভিন্ন ধরনের পাপাচার যেমন লুত (আ)-এর জাতির সমকামিতা, শোয়াইব (আ)-এর জাতির মাপে-ওজনে কম-বেশি করার অপরাধে শাস্তি দানের কথা আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন। আবার শাসকগোষ্ঠীর সতর্কতার জন্য স্বৈরশাসক নমরুদ ও ফিরাউনের চরম জুলুম-নির্যাতনের পরিণতিও অবহিত করেছেন। এছাড়াও শিল্প-সাহিত্য ও নানাভাবে উন্নত ও গর্বিত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অহমিকা ও আল্লাহর নাফরমানির ফলশ্রুতিতে তাদেরকে (আদ ও সামুদ) সমূলে ধ্বংস করার কথা উল্লেখ করে মানবসমাজকে সতর্ক করেছেন। এবারে করোনার আক্রমণ সমগ্র বিশ্বজুড়ে। বলা যায় কেউ মুক্ত নয়। ধনী-দরিদ্র নয়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নয়,সবাই সমভাবে বিপর্যস্ত। পারমানবিক শক্তিধর এবং যাদের ইশারায় যখন-তখন দেশে দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় সেসব গর্বিত ও অহংকারী রাষ্ট্রসমূহের ওপর করোনা প্রথম আঘাত হেনেছে। আল্লাহ তায়ালার ভাষায় সবই আমাদের হাতের কামাই। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যখন কোনো জনপদের মানুষ অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় তখন সেই জনপদে আল্লাহর গজব নেমে আসে এবং সেই গজবে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাই সমভাবে পতিত হয়। নগ্নতা, বেহায়াপনা, পর্দাহীনতা, পরকিয়া সমাজে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে, এমনকি সমকামিতাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনসিদ্ধ করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ও মুক্তবিশ্ব বলে পরিচিত রাষ্ট্রসমূহ নারীদেরকে মাথায় স্কার্প পরার অধিকারটুকু দিতেও রাজি ছিল না। কী আশ্চর্য! করোনা আজ নারী-পুরুষ সবাইকে নেকাব পরিয়ে ঘরে অবস্থান করতে বাধ্য করেছে। আমেরিকান এক ডাক্তারের ভিডিও আলোচনায় দেখেছিলাম, নেকাবপরিহিতা মহিলারা করোনার সংক্রমণ থেকে অনেখানি নিরাপদ। আমরা এমন এক আল্লাহতে বিশ্বাসী যিনি স্রষ্টা হওয়ার সাথে সাথে সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। করোনা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। করোনার যে ধ্বংক্ষমতা সেটি তাঁরই দেয়া। মানুষ আল্লাহপাকের প্রতিনিধি এবং করোনা থেকে আত্মরক্ষার উপায় নির্ধারণে এ যাবৎ যে কর্মপন্থা গৃহিত হয়েছে ও ভবিষ্যতে হবে তাও আল্লাহরই দান। এজন্য মানুষ চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করবে এবং এ কাজে যারা যত অগ্রসর হবে সাফল্য তারাই লাভ করবে। এটি আল্লাহর সৃষ্টির নিয়ম। মানুষ তার জ্ঞান-বুদ্ধি ও সুযোগ-সুবিধাকে পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে আত্মরক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে এবং সেই সাথে তার রবের কাছে তাঁরই সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দুআ করবে (সূরা ফালাক)। করোনা ভয়ানক ছোঁয়াচে রোগ এবং পারস্পরিক মেলামেশার ভিত্তিতে এই রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটে। রসুলুল্লাহ (সা) মহামারি আক্রান্ত এলাকায় না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন; সাথে সাথে আক্রান্ত এলাকা থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন। ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে মানুষ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে চায়। এজন্য করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হওয়ার দরকার। করোনা একটি রোগজীবাণু এবং এর দ্বারা বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী বা ভালো-মন্দ সবাই আক্রান্ত হয়। এটি গোপন করার বিষয় নয়। অন্যান্য রোগ-ব্যাধির মতই একটি রোগ এবং বান্দার জন্য একটি পরীক্ষা। আল্লাহর রসুল (সা)-এর পক্ষ থেকে সুসংবাদ রয়েছে, মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে ঈমানদার ব্যক্তি মারা গেলে আল্লাহর কাছে সে শহীদ হিসেবে মর্যাদা পাবে। আর শহীদ মানেই ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। একজন শহীদ যে মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ করেন; দুর্ভাগ্য, করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তি সেটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃত ব্যক্তিকে যারা যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদানে ব্যর্থ হবে নিঃসন্দেহে তারা গুনাহের অংশীদার হবে। সামাজিক বৈষম্যের কারণে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে সেই ব্যক্তি নিজেকে প্রকাশ না করে গোপন করছে। এই গোপন করাও গুনাহের কাজ। কোনো ব্যক্তির তার নিজের ও অপরের সামান্যতম ক্ষতি করার কোনো অধিকার নেই। তাই করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তার কর্তব্য (ফরজ) নিজেকে আলাদা করে ঘরেই চিকিৎসা গ্রহণ করা। একজন করোনা রোগীকে আলাদা কক্ষ ও বাথরুম দিতে পারলে ঘরে চিকিৎসায় কোনো সমস্যা নেই। কাশি-জ্বর ও খাওয়ায় অরুচি দেখা গেলে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিক নিজেকে আলাদা করে নিতে হবে এবং এই সচেতনা যত বাড়বে করোনার ভয়াবহ থাবা থেকে তত দ্রুত আমরা রেহাই পাব। করোনায় আক্রান্ত মৃতদেহ সম্পর্কেও অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। আশার কথা, বর্তমানে তা অনেকখানি দূর হয়েছে। মনে রাখতে হবে, মৃতদেহ থেকে রোগজীবাণু ছড়ানোর কোনো প্রমাণ নেই। তাই মারা যাওয়ার ৩/৪ ঘন্টার পর স্বাভাবিক নিয়মে গোসল, কাফন পরানো ও গোরস্থানে একজন শহীদ হিসেবে মরদেহ সম্মানের সাথে সমাহিত করা তার উত্তরাধিকার, স্বজন ও এলাকাবাসীর কর্তব্য (ফরজে কিফায়া)। আল্লাহর রসুল (সা) যাকে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাঁর প্রতি সুধারণা ও সম্মান প্রদর্শন নিঃসন্দেহে নেকির কাজ এবং উত্তরাধিকাররা ধৈর্য অবলম্বনের বিনিময় হিসেবে আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবেন ইনশা-আল্লাহ। আমরা দুআ করি, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত আমাদের সকল ভাই-বোনকে আল্লাহপাক ক্ষমা করুন এবং শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন। ২২.০৬.২০২০

Comments