আজ পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগী ৬০ হাজার ৩৯১ জন। আর মোট মারা গেছেন ৮১১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ৮০৪ জন। সুস্থ হওয়ার হার ২১.২ শতাংশ এবং মৃত্যু হার ১.৩৪ শতাংশ। বিশ্বে মৃত্যু হার ৫.৮৭ শতাংশ। আমেরিকা ৫.৭৩, ব্রিটেন ১৪.১৯, ইতালি ১৪.৩৬, ভারত ২.৭৯। করোনায় আমাদের দেশে মৃত্যু হার তুলনামূলকভাবে বেশ কম। অবশ্য করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এখানে ধরা হয়নি।
সকল শ্রেণি, পেশা, লিঙ্গ ও বয়সের মানুষ এই মৃত্যুর মিছিলে শামিল রয়েছেন। এখানে আমরা ডাক্তারদের বিষয়টি একটু পর্যালোচনা করবো। এরই মধ্যে সহস্রাধিক ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ জন। তন্মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ০২ জন। মোট মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হয়ে ১৭ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে ০৪ জনসহ মোট ২১ জন। ডাক্তারদের মৃত্যু হার ২ শতাংশ।
আমাদের সমাজে প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার অনেক কম। একটি দেশের জন্য সকল পেশাই অত্যাবশ্যক। তার মধ্যে মনে হয় স্বাস্থ্যখাত ও এর সাথে সংশ্লিষ্টরা অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। সর্বাগ্যে প্রয়োজন আমার সুস্থতা। করোনা পরিস্থিতিতে সম্মুখযোদ্ধা হচ্ছেন ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং যারাই করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসছেন তারাই সাধারণত আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য যে সুরক্ষা সামগ্রী প্রয়োজন তা (গুণগত মান ও পরিমাণের দিক দিয়ে) অপ্রতুল হওয়ার কারণে চিকিৎসার সাথে জড়িতরা দ্রুত ও ব্যাপকহারে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ এবং তাদের প্রয়োজন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেটানো হলে তাঁরা দায়িত্বের প্রতি আন্তরিক হবেন ও উৎসাহ বোধ করবেন।
আমার দৃষ্টিতে আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যু দুটো এক করে দেখা ঠিক নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন ও ডাক্তাদের ভিডিও আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, বৃদ্ধ এবং শারীরিকভাবে অসুস্থরাই বেশি মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন। ইউরোপ-আমেরিকায় বৃদ্ধদের আধিক্যের কারণেই মৃত্যু হার অনেক উচ্চে। ডাক্তার সাহেবদের মাঝে যারা মারা গেছেন তাঁদের মধ্যে অনেকের বয়স পঞ্চাশের নীচে। যেমন, চট্টগ্রামে দু’জনের বয়স ৪১ ও ৪২। শারীরিকভাবে সক্ষম এবং কর্মরত অবস্থাতেই তাঁরা ইন্তেকাল করেছেন। আমরা যদি বয়স্ক বিবেচনা করি তাহলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বিবেচনা করতে হয়। আল্লাহপাকের মেহেরবানিতে তিনি এখনো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন এবং আমরা দুআ করি আল্লাহতায়ালা যেন এই গুণী ডাক্তারকে দ্রুত সুস্থ করে দিন। Immune system বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সকল অভিজ্ঞ জন পরামর্শ প্রদান করছেন।
আমাদের দেশে যেখানে মৃত্যুহার মাত্র ১.৩৪ শতাংশ সেখানে ডাক্তারদের এই হারটা (২%) গড় হারের চেয়ে কম হওয়ার কথা। আমার মনে হয় তাঁরা নিজেদের প্রতি জুরুম করছেন। রোগীদেরকে সচেতন করলেও নিজেরা নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নশীল হতে পারেননি। মেডিকেল কলেজ ও সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে (সেখানে রোগীর আধিক্য ও অসম্ভব প্রেসার) বিভিন্ন ক্লিনিকে দেখা যায় বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা বিরতিহীন রোগী দেখছেন। আবার বাসায় এসি, কর্মস্থলে এসি, গাড়িতে এসি, চ্যাম্বারে এসি; কোনো হাঁটাচলা বা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম নেই, নেই রৌদ্রতাপ লাগানোর কোনো ব্যবস্থা। ঢাকায় এই হলো অধিকাংশ ডাক্তারের জীবন এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুহার ঢাকাতেই বেশি। অথচ এই সমস্ত স্বাস্থ্যবিধির কথা রোগী হিসেবে আমরা তাঁদের কাছ থেকেই শুনে থাকি।
আবার অনেক ডাক্তার আছেন যারা তাঁদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যেমন, আমি আমাদের ডাক্তার মঈনকে জানি, তিনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং ব্যায়ামের ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। (প্রায় শতবর্ষী ডা. মঈনের পিতার (আমার স্যার) সাথে গত মার্চ মাসে কুষ্টিয়া শহরে রাস্তায় একা প্রাতভ্রমণ করা অবস্থায় আমার সাক্ষাত ও কুশলাদি বিনিময় হয়।) আর ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবিরের কথা নাই বা বললাম। আমার বিশ্বাস, করোনা তাঁদেরকে আক্রমণ করে সুবিধা করতে পারবে না। বড় জোর একটু গা গরম ও মাথাব্যথা হতে পারে। আল্লাহ বড় হেফাজতকারী।
আজকে সামান্য সময়ের জন্য বাজারে গিয়েছিলাম। একটু বয়স হওয়ায় আমি বেশ সতর্ক থাকি। নামায পড়তে মসজিদের যাওয়া হয় না। কোনো প্রয়োজনে একটু ঘর থেকে বের হলে দ্রুত ফিরে এসে কাপড়-চোপড় ডিটারজেন্ট পাউডারে ভিজায়ে পরিষ্কার করার সাথে সাথে গোসল করে উঠি। আমার মনে হয়, আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি আর করোনা আমাদেরকেই খুঁজে ফিরছে। অথচ বাজারে ফলবিক্রেতা, সব্জি বিক্রেতা, রিক্সাওয়ালা, কুলি-মুটে-মজুর রৌদ্রে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে এবং দীর্ঘ সময় ঘরের বাইরে অবস্থান করার পরও তারা করোনা আক্রান্ত হয়েছে কি না নিজেরাই জানে না।
এসব হত-দরিদ্র মানুষগুলো বস্তিতে বাস করে, হয়তো পাঁচটি পরিবারের জন্য একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর। অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে নিয়ে তারা পুষ্টিহীনতা ও রোগব্যাধিতে ভুগছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ঘনঘনত্ব, দুর্বল চিকিৎসা অবকাঠামো, দারিদ্র ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে ২০ লক্ষ লোকের প্রাণহানির আশংকা করেছিল। মনে হয় আল্লাহপাক তাঁর এ সব অসহায় বান্দাদের ছাড় দেয়ার জন্য করোনাকে বলে দিয়েছেন। ফেরিতে, লঞ্চে, ট্রেনে, বাসে, ট্রাকে মানুষ যেভাবে ঢাকা থেকে বাড়ি গেছে ও বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরেছে তাতে ধারণা হয় আল্লাহপাকের খাস রহমতেই হতদরিদ্র মানুষগুলো টিকে রয়েছে।
এখানে যা পেশ করা হলো তা কোনো গবেষণালব্ধ জ্ঞান নয়, আমার উপলব্ধি মাত্র। বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলের মতে দেশের ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে সাধারণ মানুষ কোনো লক্ষণ ছাড়াই করোনা ভাইরাস বহন করে চলছে এবং এরাই দ্রুত বিস্তার ঘটাচ্ছে। ঘরে অবস্থান, একান্ত বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে করোনার বিস্তৃতি ধীর গতিসম্পন্ন করা যেতে পারে। তাতে করোনার ধ্বংস ক্ষমতা হয়তো হ্রাস পাবে। সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, ব্যায়াম/শারীরিক শ্রম, রৌদ্রতাপ লাগানো ও নিরুদ্বিগ্ন জীবন-যাপন প্রয়োজন। আল্লাহপাক আমাদেরকে করোনার ভয়াবহ থাবা থেকে হেফাজত করুন। ০৫.০৬.২০২০।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment