বাসায় জামাতের সাথে ফজর পড়ে সাধারণত আধা ঘন্টা হাঁটি। এতক্ষণ নামায পড়লাম, কয়েকটি হাদিস পড়া হলো, কুরআনের মশক হলো, তারপর হাঁটাহাঁটি। আধাঘন্টা সময় ব্যয় হলো। এই সময়টাতে কুরআন তেলাওয়াত বা ইসলামী সাহিত্য পাঠ করা যেত। তাতে প্রচুর নেকির কথা আমাদের জানা আছে। কিন্তু সকালে হাঁটায় ছওয়াব আছে তাতো জানা নেই। হাঁটতে হাঁটতে চিন্তা করলাম। কেন ছওয়াব হবে না। মুসলমানের কোনো কাজ তো আর ইবাদতের বাইরে নয়, যে ইবাদতের জন্য আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
স্বাস্থ্য আল্লাহপাকের দেয়া এক বড় নেয়ামত। আমাদের ইবাদত-বন্দেগী সবকিছু নির্ভর করে সুস্থতার ওপর। বান্দাকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব কি একান্তই আল্লাহর, না বান্দাহ হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে। সুস্থ থাকার জন্য শারীরিক শ্রম অবশ্যম্ভাবী। ওযুসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায সুস্থতার বড় নেয়ামক। আল্লাহপাক ইহসানকারীকে ভালোবাসেন। আল্লাহর বান্দাদের সাথে ইহসান করার আগে নিজের প্রতি করাটাই তো ইসলামের দাবী। সকালে হাঁটা যেহেতু সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি তাই আমার বিশ্বাস, সকালে হাঁটা/শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে রয়েছে প্রভূত ছওয়াব।
বাসায় আমরা কয়েকজন থাকি। রান্নাবান্না সাধারণত মেয়েরাই করে থাকেন। সেখানে সন্তানরা যদি এগিয়ে এসে প্লেটগুলো রেডি করে আনে ও খাবার পরিবেশন করে, নিঃসন্দেহে এটা হবে তাদের মা’র প্রতি ইহসান করা। একান্নভুক্ত পরিবার। দেখা যাচ্ছে একজন ক্রমাগত নামায পড়ে যাচ্ছে ও কুরআন তেলাওয়াত করে যাচ্ছে; অন্যদিকে একজন রান্নাবানা ও সংসারের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এখানে কার কাজের মূল্য/ছওয়াব বেশি, এ কথা বলা ভারি মুশকিল। এই মর্মে একটি হাদিস পড়েছিলাম। সম্ভবত সফরে সাথীদের মাঝে কেউ পরিশ্রম করছিল, আবার কেউ ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত ছিল। পরিশ্রমকারীদের সম্পর্কে রসুল (সা) বলেছিলেন, ওরা তো সব ছওয়াব লুটে নিল।
ব্যবহারিক জীবনে ইসলামরিক্ত আজকের মুসলিম সমাজ। বাবা-মা’র প্রতি খুশি মনে তাকালে যদি কবুল হজ্জের ছওয়াব হয় তাহলে বৃদ্ধ বাবা-মা’র সেবাযত্ন ও তাদের প্রয়োজনে যে সন্তান নিবেদিত তার ছওয়াব কত হতে পারে? স্বামী-স্ত্রী পরস্পর হাসি-মুখে কথা বলা, দৃষ্টি আদান-প্রদান সবই ছওয়াবের। সন্তানের প্রতি আদর-সোহাগ, পাড়া-প্রতিবেশির প্রতি সদ্ভাব, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া, কোনো কাজই নেকির বাইরে নয়।
করানোকালে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব কেউ অসুস্থ হলে সাক্ষাত না করে ফোন দিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া ও সাহস যোগানোর মাধ্যমে রোগীর সাথে সাক্ষাতের ছওয়াব পাওয়া যাবে। মানুষকে বিপদকালে সহযোগিতা করা, সম্ভব না হলে একটু মিষ্ট কথা বলা, তাতেও রয়েছে নেকি। রাস্তা থেকে কোনো কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা, নতুন লোক পথ চিনতে পারছে না, পথ দেখিয়ে দেয়ার মধ্যেও রয়েছে ছওয়াব। হাদিসের কিতাব পাঠ করলে দেখা যাবে যত ছওয়াব সব ব্যবহারিক জীবনে, মানুষের সাথে পারস্পরিক আচার-আচরণ, লেন-দেন সকল ক্ষেত্রে বিনয়-নম্রতা ও ভদ্রতায় রয়েছে অশেষ ছওয়াব। এ ছওয়াব পরিমাপযোগ্য নয়। বরং এর বিপরিত আচরণে রয়েছে কবিরা গুনাহ।
মুসলমানদের কোনো কাজই ইবাদতের বাইরে নয়। দুনিয়াদারী বলে কিছু নেই। আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল সকল কাজই দুনিয়ারী অর্থাৎ দুনিয়ার ছওয়াবের (কল্যাণের) আশায় যে কাজ করা হয় সেটিই হলো দুনিয়ারী। এটি নির্ভর করে নিয়তের ওপর। মানুষকে দেখানো উদ্দেশ্যে নামায আর ইবাদত থাকে না, হয় দুনিয়াদারী।
মুসলমান এক কর্মপাগল জাতি। আলস্য তাকে স্পর্শ করতে পারে না। আল্লাহর বাণী, ফরজ নামাযান্তে জমিনে বেরিয়ে পড়ো আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো। অর্থাৎ ব্যাবসা-বাণিজ্য, চাকুরি সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া সীমা রক্ষা করে চলার নামই ইবাদত। ওমর (রা) মসজিদে বসে অলস সময় ব্যয় করা যুবকদের পিটায়ে বের করে দিতেন। তিনি বলতেন, যে কাজ করে না তার খাওয়া অন্যায়। অপরের সেবা গ্রহণ করে একজন মুসলিম তৃপ্ত নয় বরং অপরকে সেবা প্রদান করেই সে তৃপ্ত হয়। মুসলমানদের মধ্যে এই উপলব্ধি আসলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে একটি স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করতো। আল্লাহ আমাদের মাঝে এই উপলব্ধি দান করুন। ২১.০৬.২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment