Skip to main content

ধর্মনিরপেক্ষতা

ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের অন্যতম রাষ্ট্রীয় মূলনীতি। তেমনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি। এখানে আমি কোনো তাত্ত্বিক আলোচনা বা বিতর্কে যাচ্ছি না। এ সম্পর্কে সমাজের মানুষের সাধারণ বিশ্বাস ও ধারণা উল্লেখ করতে চাই। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এর অর্থ এমন নয় যে, রাষ্ট্র পরিচালিত হবে ইসলামের ভিত্তিতে। শতকরা নব্বই ভাগ মানুষের ধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে মাত্র। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে যারা এর সমর্থক তারা জোর দিয়েই বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থ ধর্মহীনতা নয়; বরং রাষ্ট্র বিশেষ কোনো ধর্ম বা ধর্মের অনুসারীকে আনুকল্য দেবে না, চাকুরি বা বিচারের ক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে। তাদের শ্লোগান ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসীরা এখন আর কার্ল মার্কস প্রদত্ত ব্যাখ্যা ‘ধর্ম আফিম’ বিশ্বাস করে না এবং সমাজতন্ত্র বলতে সম্পদ উৎপাদন ও বন্টন ক্ষেত্রে সামাজিক সুবিচারনীতির কথা বলে থাকেন। বাংলাদেশে শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ মুসলিম হলেও ইসলামের সৌন্দর্য থেকে আমরা বঞ্চিত। ইসলামের সৌন্দর্য বলতে, ইসলাম যে নৈতিক চরিত্রের কথা বলে আমি সেটিকেই বুঝাচ্ছি। আমাদের রাজনীতি ও ধর্মীয় অঙ্গনে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। ফলে পরস্পরের প্রতি সুধারণা ও শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানিতে আমরা লিপ্ত। উদারতা-প্রশস্ততা-ক্ষমাশীলতা আমাদের অভিধান থেকে বিদায় নিয়েছে। সুনাগরিক বা দেশপ্রেমিক নাগরিক বা ভালো মুসলিম বলতে যা বোঝায় তা থেকে আমরা বঞ্চিত। দুর্নীতি আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্পদের মোহ আমাদের পাগলপ্রাণ করে তুলেছে। যেন-তেন প্রকারে বড় হওয়ার জন্য আমরা অস্থির হয়ে পড়েছি। হারাম-হালাল বাছ-বিছার ভুলে গেছি। পরকাল অবিশ্বাসের ফলশ্রুতিতেই আজকে আমাদের এই দুরবস্থা। মানুষকে ক্ষমা করলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়া যাবে শয়তান আমাদের হৃদয় থেকে তা ভুলিয়ে দিয়েছে। প্রতিশোধস্পৃহা আমাদের মাঝে চরমভাবে পেয়ে বসেছে। আইয়ামে জাহিলিয়াতের মতো বংশপরম্পরা প্রতিশোধ গ্রহণে আমরা ব্যস্ত। কেউ ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। ক্ষমা করাকে উদারতা নয়, দুর্বলতা বিবেচনা করা হয়। সমগ্র বিশ্ব করোনায় বিপর্যস্ত। আমরা তা থেকে দূরে নয়। এ বিষয়ে আমাদের মাঝে জাতিগত কোনো সমঝোতা বা ঐক্য নেই। মৃত্যু প্রতিনিয়ত দেখছি, যে কোনো মুহূর্তে আমরাও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারি সেই উপলব্ধি আমাদের মধ্যে নেই। ইসলামের আলোকে আমাদের চরিত্রকে সমুজ্জল করা এবং মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর সুযোগ আমাদের রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, করোনা পরিস্থিতির কারণে এই সুযোগ আরো প্রশস্ত হয়েছে, কারণ বর্তমানে মানুষের মন অনেকখানি আখিরাতমুখী। এ সময়ে আমাদের জন্য সূরা আসর বড় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের বিশ্বাস ভোঁতা হয়ে গেছে। বিশ্বাসকে শানিত করতে পারলে পরবর্তী কার্যক্রম সহজেই সাধিত হতে পারে। কালিমা তাইয়্যেবাহ্ বিশ্বাস করে আমরা ইসলামে প্রবেশ করি যার অর্থ, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে না মানা ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁকে মেনে চলা এবং মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ (সা)-এর আদর্শ অনুসরণের ঘোষণা দেয়া’। এই বোধ-উপলব্ধি মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। রাজনীতিক অঙ্গনে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা)-কে বিসর্জন দিয়ে অনেকে নিজেকে পরিচয় দেয় ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে এবং জীবন থেকে সকল নীতি-নৈতিকতা পরিহার করে লুটপাটের রাজত্ব কয়েম করেছে। তার ধর্ম (ধর্ম যার যার) এই লুটপাটে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সে মনে করেছে মাঝে-মধ্যে দুআর অনুষ্ঠান, তাহাজ্জুদ নামায, হজ্জ ও কুরবানি তাকে আখিরাতে মুক্তির ব্যবস্থা করবে। মানুষ যদি সত্যিই আল্লাহ, তাঁর রসূল ও আখিরাতকে বিশ্বাস করতো তাহলে তাদের জীবনে বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটতো। মানুষের জীবনে যতো অনৈতিক কার্যক্রম : সুদ-ঘুষ, যিনা-ব্যাভিচার, নগ্নতা-অশ্লীলতা, ওজনে কম-বেশি করা, ভেজাল দেয়া, মদ-জুয়া, মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচার, খেয়ানত, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, গুম-খুন সবই সুস্পষ্ট হারাম ও কবিরা গুনাহ এবং তাওবা করে ফিরে আসা ছাড়া এর পরিণতি জাহান্নাম। শুধু আইন ও শাস্তি দিয়ে অন্যায় দূর করা সম্ভব নয়। মানুষের নৈতিক সংশোধনের জন্য রসূল (সা)-এর নবুয়তী জিন্দেগীর শুরুতে আল্লাহপাক আখিরাতে বিশ্বাসের কথা বারংবার বলেছেন। দুর্ভাগ্য, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সরকারি উদ্যোগে আখিরাতের বিশ্বাসের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নাগরিকদের সম্মুখে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি; যার কারণে শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিম জনঅধ্যুষিত দেশে নৈতিকতার ছিটেফোঁটাও নেই। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা, সরকারি অফিস-আদালত সর্বত্রই দুর্নীতির সয়লাব; এমন কী ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষব্যক্তির নামে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। সমাজের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালনরত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে অনেকে নামায পড়ে, রোযা রাখে, যাকাত আদায় করে, হজ্জ পালন করে এবং পোশাক-পরিচ্ছদেও ধার্মিকতা প্রকাশ করে। ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে এরা আবার বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত, প্রিয়তম নবী (সা)-এর সুক্ষ্ণ সুক্ষ্ণ সুন্নাত পালনে খুবই পারঙ্গম। নামাযে হাতবাঁধা, আমিন জোরে না আস্তে, ইফতারি দ্রুত না বিলম্ব নানা বিষয়ে ঝগড়া ও ইসলামের জন্য সময়দানেও পাওয়া যায়। কিন্তু আচার-আচরণ, লেন-দেন ও ব্যবহারিক জীবনটা বড়ই কদর্যপূর্ণ। ইসলাম সম্পর্কে একটি ভুল ধারণাই তাদের এই অধপতনের মূল কারণ। রসূল (সা) জীবনে কখনই মিথ্যা বলেননি, আমানতদারিতায় তিনি অতুলনীয় (হিজরতের প্রাক্কালে লোকদের মালামাল পৌঁছে দেয়ার জন্য তাঁর বিছানায় আলী (রা) রেখে গিয়েছিলেন), প্রতিশ্রুতি পালনে অদ্বিতীয়, একজন সদাচারী, গরীব-দুখী ও অসহায়দের আশ্রয়-সবই যে তাঁর চরিত্রের ভূষণ, উম্মাহর জন্য অবশ্য পালনীয় ও দ্বীনের সৌন্দর্য এবং যা দেখে অতীতে মানুষ দ্বীনের পথে এগিয়ে এসেছে, এ সবই আমরা ভুলে গেছি। নামায-রোযাসহ আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহপাক এজন্যই ফরজ করেছেন, যাতে মানুষ আল্লাহকে সর্বক্ষণ স্মরণ ও ভয় করতে পারে এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। দ্বীন পালনে সহজতা বিধানের লক্ষ্যে এসব ইবাদত-বন্দেগী পালনে ভিন্নতা ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্য, এগুলোকে সেভাবে গ্রহণ না করে উম্মাহর মধ্যে দলাদলি ও হানাহানি সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করছে। শয়তান তার কৌশলে সফলকাম। অথচ আল্লাহপাক কতো কঠিনভাবে সতর্ক করেছেন, ‘তোমরা যেন তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হেদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে’-আলে ইমরান ১০৫। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের শ্লোগান, ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’। ধর্মকে তারা ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে, অর্থাৎ ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কাউকে বাধ্য করতে পারবে না। ইসলামের সাথে এখানে তার ভিন্নতা রয়েছে। ইসলামী সরকার তার মুসলিম নাগরিকদের ওপর নামায-রোযা-যাকাতের মতো বিধান পালন ও দন্ডবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। আবার কিছুটা মিলও রয়েছে এবং মিলটা হলো, ব্যক্তি তার কাজের জন্য নিজেই দায়ী এবং সে অপরের পাপের বোঝা বহন করবে না, আবার তার পাপের বোঝা অপরের ওপর চাপাতে পারবে না। জবাবদিহি সম্পূর্ণ ব্যক্তির। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, লিঙ্গ ভেদাভেদ না করে সবার প্রতি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। এব্যাপারে ইসলামের সাথে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের কোনো সংঘর্ষ নেই। সমঅধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রসূল (সা) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল আমাদের সম্মুখে উদাহরণ হয়ে আছে। রসূলুল্লাহ (সা) ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করে তাহলে আমি তার হাত কেটে দিব’। খলিফা ওমর (রা) বলেছিলেন, ‘মানুষ কেন ফোরাত কূলে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় তাহলে এই ওমরকেই জবাবদিহি করতে হবে’। এক ইহুদী খলিফা আলী (রা)-এর বর্ম চুরি করলে সাক্ষী হিসেবে ছেলে ও চাকরের সাক্ষী গ্রহণ না করে কাজী ইহুদীর পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। এ সবই ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। দুর্বল হলেও আমাদের দেশে গণতন্ত্র রয়েছে। স্বাধীনভাবে ইসলাম মানা ও অন্যদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ এখনো রয়েছে। বাধা-বিপত্তি ও আল্লাহর পথে বিপদাপদ খুবই স্বাভাবিক এবং সকল নবী-রসূলদের জীবনে ঘটেছে ও তাঁর পথে যারা চলতে চায় ঘটবে। যারা সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হয় আল্লাহপাক তাদের অন্তরে হেদায়াত ও ধৈর্য দান করেন। যারা আল্লাহর রাস্তায় চেষ্টা-প্রচেষ্টা (জিহাদ) চালায় তাদের মর্যাদা অতি উচ্ছে। কোনো কিছুই তাদের সাথে তুলনীয় নয় (সূরা তাওবা ১৯-২০)। জান্নাতে অনেক শ্রেণিভাগ আছে। ঈমান ও নেক আমলে সমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গকে আল্লাহপাক জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়েছেন। রসূল (সা)-এর জীবন থেকেও আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি। এক বেদুইন রসূল (সা)-এর কাছে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তাকে ঈমান আনার পর নামায, রোযা, যাকাত-হজ্জ (সম্ভব হলে) পালনের কথা বলেন। জবাবে বেদুইন বলেন, আল্লাহর কসম! আমি এর বেশিও করবো না আবার কমও করবো না। বেদুইন চলে যাবার পর রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, জান্নাতি কেউ দেখতে চাইলে এই বেদুইনকে লক্ষ্য করো। বেদুইনের জান্নাতি ঘোষণার ফলে উপলব্ধি করা যায়, ইসলামের পক্ষে অবস্থানকারী লোকদের মৌলিক ইবাদতসমূহ পালনের মাধ্যমে জান্নাতের যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। কোনো জনপদে দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দু’টি শর্ত প্রয়োজন। এক. যোগ্য নেতৃত্ব ও আনুগত্যশীল কর্মীবাহিনী, দুই. জনপদের লোকদের দ্বীনের প্রতি সমর্থন। মদীনায় দু’টি শর্তই পূরণ হওয়ায় আল্লাহপাক রসূলুল্লাহ (সা)-এর নেতৃত্বে বিজয় দান করেন। সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামের সহজ উপস্থাপনের (আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের সুসংবাদ) মাধ্যমে সমর্থক সৃষ্টি করাটাই জরুরি। এজন্য বড় পুঁজি জনশক্তির জ্ঞানগত সমৃদ্ধি ও চারিত্রিক উৎকর্ষতা। সততা, আমানতদারিতা, প্রতিশ্রুতি পালন, লেন-দেনে স্বচ্ছতা, নম্র ব্যবহার, সুখে-দুখে পাশে দাঁড়ানো-এসব গুণে সমৃদ্ধ হলে আশা করা যায় মানুষ দ্রুত ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়বে। আল্লাহপাক তাঁর বান্দার সাথে দয়ার ব্যবহারটাই করতে চান। কুরআন ও হাদিস তাই বলে। অপরাধের শাস্তি বলার সাথে সাথে আল্লাহ বলেন, তবে কেউ যদি তাওবা করে, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়। ঈমানদারদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন কঠিন অপরাধ। সূরা বুরুজে জালেমদের ভয়াবহ শাস্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয় অতঃপর তাওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব, আছে ভষ্ম হওয়ার শাস্তি’। ‘অতঃপর তাওবা করে না’-খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বান্দাকে ক্ষমা করার পথটি আল্লাহ সব সময় উন্মুক্ত রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসের বর্ণনাগুলো উৎসাহজনক। ভালো কাজের নিয়ত করলেই ছওয়াব এবং বাস্তবায়ন করলে দশ থেকে সাতশ গুণ ছওয়াব। বান্দার প্রতি দয়াময় আল্লাহর কতো অনুগ্রহ। মন্দ কাজে নিয়ত করার মধ্যে কোনো পাপ নেই এবং কাজ অনুপাতে পাপ লেখা হয়, বৃদ্ধি করে লেখা হয় না। আবার তাওবা করলেই ক্ষমা। এটাও বলা হয়েছে মন্দ কাজের পর ভালো কাজ করলে এবং আমাদের সাথে নামায আদায় ও অজু করলে ছোট ছোট গুনাহসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝরে যায়। বান্দাকে শাস্তিদানের জন্য আল্লাহ বাহানা তালাশ করবেন না বরং ক্ষমা করার উপায় খুঁজবেন। বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করে শেষ করা যাবে না। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ না হয়ে উপায় কী? আমরাও আল্লাহর বান্দাদের প্রতি উদার হই। আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহের কথা বারবার বলি। এতে আল্লাহর বান্দারা পাপ-পঙ্কিল পথ থেকে সরে আসার একটি পথ খুঁজে পাবে। কুরআন-হাদিস পড়ে আমার উপলব্ধি, আল্লাহর কাছে বড় বিবেচ্য বিষয় হলো বান্দাহ তাঁর পক্ষে না তাগুতের পক্ষে। একজন মুসলিম সেই যে ইসলামে বিশ্বাস করে ও ইসলামকে শ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ হিসেবে জানে ও মানে এবং সেটি প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় (সম্ভব না হলে অন্তত কামনা করে)। ইসলামের বিজয় কামনাকারী জনতাই নীরব সমর্থক। পক্ষান্তরে পোশাক-পরিচ্ছদ ও আনুষ্ঠানিক ইবাদত-বন্দেগীতে পারদর্শী হয়েও কোনো হতভাগার সম্পর্ক যদি থাকে তাগুতের সাথে ও ইসলামের বিজয় কামনা না করে অকল্যাণ কামনা করে তার অবস্থান জাহান্নাম বৈ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই (তাওবা করলে ভিন্ন)। প্রকৃষ্ট উদাহরণ আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধাচরণের ফলে তার সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে। আমরা আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক হই। সমাজে অধিকাংশ লোক দুর্নীতি করে, অন্যায় করে, মানুষের প্রতি জুলুম করে এবং মানুষ তাদের ঘৃণা করে। আমরা হব তার বিপরিত, মানুষ আমাদের কাছ থেকে শুধু কল্যাণটাই পাবে। কারণ আমরা তো পরকালে বিশ্বাস করি ও আল্লাহকে ভয় করি। আমরা তো প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা)-এর আদর্শ মেনে নিয়েছি, তাঁর আমল-আখলাক-চরিত্র আমাদের সম্মুখে দীপ্তিমান। কুরআন ও হাদিসে একজন মু’মিনকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে আমাদের আচরণ ও কর্ম দিয়ে আল্লাহর বান্দাদের সম্মুখে তারই উদাহরণ হব। মু’মিনরা সাফল্য লাভ করেছে------, রহমানের বান্দারা---- বলে (কুরআনে নানাভাবে মু’মিনের গুণ ব্যক্ত করা হয়েছে) তাদের চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহপাক আমাদেরকে কুরআনের রঙে রঙিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। ৩০.০৬.২০২০

Comments