Skip to main content

করোনা কি আমাদেরকেই খুঁজছে?

আল্লাহর সৃষ্ট এক অতি ক্ষুদ্র জীবাণু করোনার ধ্বংসলীলা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বে আক্রান্ত কোটি ছুঁই ছুঁই করছে এবং প্রতিদিন লক্ষাধিক আক্রান্ত হচ্ছে। নিহত প্রায় সাড়ে চার লাখ। থামার কোনো লক্ষণ নেই। মানবজাতির সকল গর্ব ও অহঙ্কার ধুলোয় মিশে গেছে। পারমানবিক বোমা সব নিষ্ক্রীয় রয়েছে। মানবকল্যাণে ঐ সব মারণাস্ত্রের কোনো ভূমিকা নেই। করোনা নিয়ে গবেষণার কোনো অন্ত নেই। আমাদের সোজা-সাপটা হিসাব, সবই আল্লাহর হুকুম। বিপদাপদ সবই আসে তাঁর পক্ষ থেকে (সূরা তাগাবুন) এবং আসে আমাদের কর্মফল হিসেবে। অতীতেও মানুষ যখন সীমালংঘন করেছিল এবং পৃথিবীতে জুলুম-নির্যাতনের প্রসার ঘটিয়ে মানুষের জীবনটাকে দূর্বিসহ করে তুলেছিল তখন আল্লাহপাক তাদেরকে সতর্ক করার জন্য নানাবিধ বিপদ-মুসিবতে নিমজ্জিত করেছিলেন। প্রিয় নবী (সা) বলেছেন, যমীনে অশ্লীলতার প্রসার ঘটলে সে জনপদে আল্লাহপাক বালা-মুসিবত নাযিল করেন। তাতে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং কিয়ামতের দিন ভিন্ন ভিন্ন আমল নিয়ে সবাই উত্থিত হবেন। বর্তমান বিশ্বে জুলুম-নির্যাতন এবং নগ্নতা-অশ্লীলতার সয়লাব বয়ে চলেছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কীকরণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। চীনের উহান শহরে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটলেও সমগ্র চীন বা আশে-পাশের দেশসমূহ উপেক্ষা করে করোনা প্রথমে একযোগে আঘাত হেনেছে বিশ্বের গর্বিত ও পরাশক্তি বলে খ্যাত আমেরিকা ও ইউরোপকে। আমেরিকায় আক্রান্ত ২২ লাখের উর্ধে (বিশ্বের মোট আক্রান্তের প্রায় ২৫%) এবং মৃত্যু ১ লাখ ২০ হাজার (মোট মৃত্যুর ২৬%), বৃটেনে আক্রান্ত প্রায় ৩ লাখ এবং মৃত্যু ৪২ হাজার (মোট মৃত্যুর ৯.৩৮%)। মৃত্যুহার আমেরিকায় ৫.৩৮, বৃটেনে ১৪, ইতালিতে ১৪.৪, ভারতে ৩.৪ এবং বাংলাদেশে ১.৩২। ভিয়েতনাম, ভূটান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড ও আফ্রিকার হত-দরিদ্র দেশসমূহে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার দুটোই কম। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র দেশ এবং শিক্ষা-দীক্ষা ও নাগরিক দায়িত্ববোধে খুবই অনগ্রসর। স্বাস্থ্যবিধি পালনে দুর্বলতা ও অসচেতন জনগোষ্ঠীর আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি উন্নত দেশসমূহের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ারই কথা। কিন্তু এবারে করোনা ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল যে ৮ কোটি লোক আক্রান্ত হবে এবং ২০ লক্ষাধিক লোক মারা যাবে। লকডাউন, স্বাস্থ্যবিধি পালন ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুর্বলতা সত্তে¡ও আল্লাহপাকের অশেষ দয়ায় করোনায় মৃত্যুহার অনেক কম। এটাকে আল্লাহপাকের মেহেরবানি মনে করে তাঁর দরবারে শুকরিয়া আদায় ও বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করা হলে তিনি আমাদেরকে হেফাজত করবেন। আল্লাহ তায়ালার নিয়ম হলো, কোনো জনপদের মানুষ যখন তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে তখন সেই জনপদে সাধারণত তিনি শাস্তি দেন না (সূরা আনফাল ৩৩)। শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার বড় উপায় আল্লাহর কাছে সামগ্রিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা। বাংলাদেশে রাস্ত-ঘাট, বাজার সর্বত্র মানুষের ভীড়। বাস, ট্রাক, রেল, লঞ্চে প্রচুর পরিমাণ লোকজন যাতায়াত করেছে। আমেরিকা ও ইউরোপে কত হালকা জনবসতি অথচ তার বিপরিতে বাংলাদেশের অবস্থা কল্পনাও করা যায় না। আমাদের দেশে স্বল্প মৃত্যুহারের কারণ হিসেবে আমি দু’টি বিষয়কে একই সাথে বিবেচনা করি। এক. কার্যকারণ সম্পর্ক, দুই. আল্লাহর হুকুম। আল্লাহপাক তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে একটি নিয়ম (ধর্ম) দিয়ে পাঠিয়েছেন। যেমন, করোনা একটি ছোঁয়াচে রোগ, যারা এর সংস্পর্শে আসবে তারা সংক্রমিত হবে। এটিই তার ধর্ম, ব্যতিক্রম (দুই) আল্লাহর হুকুম। বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংস্পর্শে যারা আসছে বিশেষ করে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও রোগীর আত্মীয়-পরিজন তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। করোনায় মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোকজন। এই শ্রেণির লোকজন সাধারণত ঘরে অবস্থান করেন। কিন্তু পরিবারের কাউকে না কাউকে ঘর থেকে বের হতে হয়। যেমন, আমার নিজের বিষয় বলতে পারি (শুধু আমি নই, আমার মত অধিকাংশই), মোটেই ঘর থেকে বের হই না বা কোনো প্রয়োজনে বের হলে ঘরে ফিরে তাৎক্ষণিক কাপড়-চোপড় ডিটার্জেন্ট পাউডার দিয়ে ভিজায়ে রেখে পরিষ্কার করে গোসল করে উঠি। সতর্কতার জন্য মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামায আদায় করি। পক্ষান্তরে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় রিক্সাওয়ালা, তরকারি বিক্রেতা, কুলি, মজুর বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষজন ২৪ ঘন্টার ৮/১০ ঘন্টা বাইরে অবস্থান করছে। এখন প্রশ্ন এরা কি করোনায় আক্রান্ত, না এদের প্রতি আল্লাহপাকের খাস রহমাত রয়েছে? দুটোই সত্য হতে পারে। আমাদের প্রচুর লোক বস্তিতে বসবাস করেন। ৪/৫টি পরিবারের একটি রান্নাঘর, একটি বাথরুম, একটি টিউবওয়েল এবং একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন বসবাস করেন। স্বাস্থ্যবিধি পালন বা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলা কোনোটাই তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বসতি নিয়ে কাজ করেন এমন একজন আমাকে বললেন, বসতিতে কোনো করোনা নেই। এসব নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। হতদরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষগুলো রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে এবং তাদের প্রচুর কায়িক শ্রম দিতে হয়। আমার ধারণা এই শ্রেণিটার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলের মতে দেশে ৪০% লোক ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে করোনা তাদেরকে কাবু করতে পারছে না। তাঁর মতে লুকিয়ে থেকে লাভ নেই, করোনা সবাইকে ধরবে। বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার ১.৩২। পৃথিবীর যে কোনো দেশের তুলনায় বলা যায় অনেকখানি স্বস্তির। কিন্তু আমার ধারণা, এই ক্ষুদ্র সংখ্যার মধ্যে তো আমাদের মত ভদ্রলোকের সংখ্যাই বেশি। যেমন, ডাক্তারের মৃত্যুহার আমাদের দেশে সর্বোচ্চ। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ডাক্তারের সংখ্যা ১০৩১ এবং মৃত্যু ৪০ জন (মৃত্যুহার ৩.৮৭)। এ চিত্রটি বড় ভয়াবহ। ১০৩১ শুধু ডাক্তারের হিসাব। নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর হিসাব এর মাঝে নেই। অথচ প্রতিবেশি ভারত বিশাল দেশ হওয়া সত্তে¡ও তাদের ডাক্তার, নার্স ও প্যরামেডিক আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০-এর কম। এতে কি এটিই প্রমাণ হয় যে, তাঁদেরকে আমরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দিতে ব্যর্থ হয়েছি বা তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা রোগীদের সচেতন করলেও নিজেরা স্বাস্থ্যসচেতন নন বা শারীরিক পরিশ্রম বিমুখ। একটি গরীব দেশে এভাবে ডাক্তারদের মৃত্যু বড় বেদনাদায়ক এবং এ ঘাটতি পূরণযোগ্য নয়। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা দরকার। অর্থনৈতিক কারণে খুব বেশি দিন লকডাউন দিয়ে রাখা বা পালিয়ে থাকা সম্ভব নয়। আবার করোনার সহসা প্রতিষেধক আবিষ্কারও সম্ভব বলে মনে হয় না। এখন প্রয়োজন আল্লাহপাকের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন (যতখানি সম্ভব ঘরে অবস্থান, স্বাস্থ্যবিধি পালন, দূরত্ব বজায় রেখে চলা, করোনা আক্রান্ত রোগীর সাথে মানবিক আচরণসহ তাকে আলাদা রাখা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের সাথে শারীরিক পরিশ্রম/ব্যায়াম) এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি তাঁর বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণ ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর দরবারে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা তাঁর ক্রোধ দূর করে এবং আল্লাহ তাওবাকারীকে খুব ভালোবাসেন। তাওবা অর্থ হাজার বার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ নয় বরং মুখে উচ্চারণের সাথে সাথে গুনাহ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনা। আল্লাহ আমাদেরকে করোনা থেকে হেফাজত করুন। ১৮.০৬.২০২০

Comments