Skip to main content

চলতে ফিরতে দেখা

আজ ধানমন্ডিতে মেয়ে-জামাইয়ের বাসা থেকে তাকওয়া মসজিদে যেতে প্রথমেই চোখে পড়লো স্কুলের সম্মুখে ফুটপাতে এক লোক কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। মনে হলো খুব তৃপ্তির ঘুম। তাকওয়া মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামায আদায় করা হয়। ফজরের নামায আদায় করলাম দ্বিতীয় ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুর রশিদের ইমামতিতে। উনি ধারাবাহিক তেলাওয়াত করেন। আজ তেলাওয়াত করলেন সূরা ফাতাহ থেকে। সাধারণত তিনি নামায শেষে তেলাওয়াতকৃত আয়াতের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। আজকে সেটি হলো না। বের হওয়ার সময় নোটিশ বোর্ডে লক্ষ্য করলাম গত জুমু'আয় বাক্সে আদায় হয়েছে ৯৪,৮০১.০০ টাকা। তাকওয়া মসজিদে প্রত্যেক ওয়াক্তে প্রচুর ফকির হাজির থাকে। মসজিদের সম্মুখে সারিবদ্ধ বসা ও দাঁড়ানো, গণনা করে দেখলাম ৪৪ জন (আরো বেশি হবে)। মসজিদ থেকে ফেরার পথে এক রিক্সাচালককে দেখলাম তার রিক্সার ওপর ঘুমাতে। এই যে যাদের সম্পর্কে উল্লেখ করলাম এরা কি সুখী না অসুখী? আসলে সুখ/দুঃখ আপেক্ষিক। বাংলাদেশের সেরা ধনী ব্যক্তিটি চায় পৃথিবীর সেরা ধনী হতে। সূরা তাকাসূরে আল্লাহ বলেছেন কবরে পৌঁছা পর্যন্ত সে সম্পদের পেছনে ছুটে। আর আল্লাহর রসূল (সা) বলেছেন, মাটি ছাড়া কোনো কিছু তাকে পরিতৃপ্ত করতে পারে না। সম্পদের নেশা মানুষকে পাগলপ্রাণ করে দেয়। এ-সব পাগলের জীবনে স্বস্তি নেই, আনন্দ নেই, পরিতৃপ্তি নেই। অর্থের প্রলোভন তাদেরকে উন্মাদ করেছে। অর্থের লোভে ওরা মানুষ খুন করতে পারে, ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারে, দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাতকে ধ্বংস করতে পারে। এরা মানুষ নয় পশু, আল্লাহর ভাষায় পশুরও অধম। আল্লাহর রসূল (সা)-এর ভাষায়, 'মনের ঐশ্বর্যই প্রকৃত ঐশ্বর্য '। ফুটপাতে ও রিক্সায় ঘুমন্ত ব্যক্তিদ্বয় মসজিদের সম্মুখে জড়ো হওয়া ফকির অপেক্ষা অনেক সুখী আবার ফকিরগুলো ভাবতে পারে অসুস্থ ও রোগযন্ত্রণায় কাতর লোকগুলো অপেক্ষা তারা সুখী। মানুষ যদি তার নীচের অবস্থানের দিকে তাকায় তাহলে সহজেই সুখ অনুভব করতে পারে। মানুষের মাঝে রুজি-রোজগারে পার্থক্য প্রাকৃতিক (আল্লাহর সৃষ্ট)। আল্লাহর নিজের কথা, কাউকে বেশি দিয়েছেন আবার কাউকে সংকীর্ণ করেছেন এবং তিনি উভয়কেই দেখছেন। এই বিশ্ব জাহান পরিচলনায় এটি তাঁর কৌশল। ধনীর সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে সমাধানের দায়িত্ব তাঁর খলিফাদের। দুনিয়া ও আখিরাত নিয়ে আল্লাহর সাম্রাজ্য। দুনিয়া একটি পরীক্ষাগার। দুনিয়ার সাফল্য বড় কথা নয়। সত্যিকার সাফল্য আখিরাতে। যারা দুনিয়াকে পাওয়ার জন্য আখিরাত জলাঞ্জলী দিলো তারাই হতভাগা, কপালপোড়া। অবৈধ উপার্জনের মধ্য দিয়ে যারা দুনিয়ায় সম্পদশালী হয়েছে তারা হতভাগাদের দলভুক্ত। আল্লাহপাক আমাদেরকে হেফাজত করুন। ০৯.১১.২০২০।

Comments