জুমু’আর খুতবা
২৭.১১.২০২০
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ আজকের খুতবায় কুরআন ও হাদিসের প্রচুর উদ্ধৃতিসহ সালাম নিয়ে আলোচনা করেন। আল্লাহপাক আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতেই সালাম শিখিয়েছেন। তিনি আদম (আ) বলেন: যাও, ফেরেশতাদের সালাম দাও। আদম (আ) ফেরেশতাদের ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিলে জবাবে ফেরেশতারা বলেন, ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ’।
আল্লাহপাক নিজে নবীদের সালাম দিয়েছেন, তাঁর এক নাম সালাম এবং ফেরেশতারা মু’মিনদেরকে সালামের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সালামের অর্থ শান্তি নিরাপত্তা এবং রসূল (সা) বেশি বেশি করে সালামের প্রচলনের জন্য তাঁর উম্মতের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না তোমরা মু’মিন না হও এবং ততক্ষণ মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে মুহাব্বত না করো। পরস্পরের মধ্যে মুহাব্বাত ও ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি করে সালামের প্রচলন করো’।
সাহাবীদের মধ্য থেকে একজন এসে রসূল (সা)-কে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিলে জবাব দেয়ার পর তিনি বলেন, তোমার জন্য ১০ নেকি। আর একজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম দিলে জবাব দেয়ার পরে তিনি বলেন তোমার ২০ নেকি এবং তৃতীয় জন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতু’ বলে সালাম দিলে জবাব দেয়ার পরে তিনি বলেন তোমার ৩০ নেকি। সালাম মূলত দুআ অর্থাৎ অপরের জন্য শান্তি, রহমত ও বরকত কামনা করা। যে যতো শব্দ যোগ করবে তার নেকি ততো বেশি। কেউ সালাম দিলে তার চেয়েও উত্তম পন্থায় জবাব দেয়া উত্তম। সালাম দেয়া সুন্নাত এবং জবাব দেয়া ওয়াজিব।
সালাম দেয়ার ব্যাপারে তিনি রসূল (সা)-এর কিছু উক্তি উল্লেখ করেন। শিশুরা বড়দের আগে সালাম দিবে, দন্ডায়মান ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে আগে, অল্প ব্যক্তি বেশি জনকে আগে, যানবাহনে উপবিষ্ট ব্যক্তি বসা বা দন্ডায়মান ব্যক্তিকে আগে সালাম দিবে। সালামের ক্ষেত্রে পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইকে সালাম দিতে হবে। সালাম সঠিক উচ্চারণে প্রদান করতে হবে এবং এ কথা বলে তিনি কয়েকবার তাঁর মুছল্লিদেরকে মশক করান। ইহুদীরা রসূল (সা)-কে আসসামু আলাইকুম বললে রসূল (সা) জবাবে বলেন ওয়া আলাইকুম। আয়েশা (রা) শুনে রসূল (সা)-কে বলেন, ওরা তো আপনার মৃত্যু কামনা করলো। জবাবে রসূল বললেন, আমি তো ওয়া আলাইকুম বললাম।
খতিব মহোদয় কুরআন ও হাদিস থেকে অনেক উদ্ধৃতি পেশ করেন। কারো ঘরে প্রবেশ করার সময় তাদের অনুমতি গ্রহণের সাথে সাথে সালাম দেয়ার কথা আল্লাহ নিজেই বলেছেন। নিজেদের ঘরে প্রবেশের সময়ও সালাম দিতে হবে। ঘরে কেউ না থাকলে সেখানে তালা খোলার পর আসসামু আলাইকুম বলা উত্তম, কারণ ঘরে ফেরেশতা ও নেককার জ্বিন থাকে। নিজের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে সালাম দিতে হবে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের মাঝে মুহাব্বত পয়দা হয়। অনেক পরিবারে শোনা যায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হয় না। খতিব মহোদয় বলেন, এর অন্যতম কারণ সালামের প্রচলন না থাকা। সালামের ব্যাপক প্রচলন থাকলে ইনশা-আল্লাহ তাদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
সালাম ইসলামের অন্যতম নিদর্শন এবং এটি একটি দুআ। এর কোনো বিকল্প হতে পারে না। গুড মর্নিং, গুড ইভেনিং এ শব্দগুলো আমাদের সংস্কৃতি নয়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কচি-কাঁচাদের সালামের পরিবর্তে এ-সব শেখানো হয়। তিনি এর তীব্র সমালোচনা করেন। এ ছাড়াও আল্লাহ-রসূল, কুরআন-হাদিস, দাঁড়ি-টুপি নিয়ে কটাক্ষ বা সমালোচনারও তিনি তীব্র নিন্দা করেন। তিনি রসূল (সা)-এর সুন্নাহ অনুসরণের জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।
সংক্ষেপিত। শ্রুতিলিখনে : প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment